রাশিদুল ইসলাম: রোববারের বহুল প্রত্যাশিত ওপেক বৈঠকে সৌদি আরব প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়। এরফলে বাজারে সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌদি আরব বলেছে যে তারা বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়াতে স্বেচ্ছায় আগামী মাসে দৈনিক আরও ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেবে। আগামী বছর থেকে ওপেক সদস্য দেশগুলো তেলের সম্মিলিত উৎপাদন আরো হ্রাস করতে সম্মত হয়েছে। এনার্জি অ্যাসপেক্টস’এর অমৃতা সেন রয়টার্সকে বলেছেন, তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত বাজারের জন্য একটি সুস্পষ্ট সংকেত যে ওপেক প্লাস তেলের একটি মূল্যের স্তর ধরে রাখতে এবং রক্ষা করতে ইচ্ছুক। অয়েল প্রাইস ডটকম
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে সৌদি জ্বালানি মন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বলেন, “আমরা তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজারে তেলের দরে স্থিতিশীলতা আনতে। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। তেলের উৎপাদন হ্রাসে তার দেশের সিদ্ধান্তকে অন্যদেশের জন্যে ‘সৌদি ললিপপ’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ একদিকে তেলের দর বাড়বে কিন্তু অন্য দেশগুলো তেল উৎপাদন হ্রাস না করেই বাজারে বাড়তি মূল্য পাবে। সৌদি আরব এখন দিনে প্রায় ৯ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে।
ইউবিএস কমোডিটি বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো ফিন্যান্সিয়াল টাইমসেকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব মন্দার মধ্যে নেই। সৌদি তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত একটি স্পষ্ট সংকেত যে তারা তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা অর্জন করতে চায়।’ আগামী জুলাই থেকে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমাবে সৌদি আরব। বর্তমানে দৈনিক ১ কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন করছিল সৌদি আরব।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববাজারে তেলের দাম ধরে রাখতে উৎপাদন হ্রাসের জন্য ওপেক প্লাসের একটি সমঝোতা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জুলাই থেকে ৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদনের হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াদ। এবার রিয়াদ জানিয়েছে, ওপেক প্লাসের সমঝোতার বাইরে আরও ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানো হবে।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। এ সংগঠনের সঙ্গে রাশিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন কিছু দেশ নিয়ে গঠিত ওপেক প্লাস। বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে এই জোটের দেশগুলো। জোটটির নীতিগত সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে তেলের দামে বড় প্রভাব ফেলে।
এর আগে গত এপ্রিলেও আকস্মিকভাবে এক দফা জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমিয়েছিল ওপেক প্লাস। সে সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দর ৯ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। যদিও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুর্বলতায় তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে দামও কমে যায়। সৌদি আরব হলো ওপেক প্লাসের একমাত্র সদস্য যেখানে অতিরিক্ত তেল সংরক্ষণের অবকাঠামো রয়েছে। ফলে দেশটি সহজেই উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে-কমাতে পারে।
গত এপ্রিলে দৈনিক ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছিল ওপেক প্লাস। এর আগে গত বছর আরও ২০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস করে জোটটি। সবমিলিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাসের একটি সমঝোতা রয়েছে ওপেক প্লাসের। রোববার জোটটির ৭ ঘণ্টাব্যাপী এক সভায় এই সময় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
মূলত বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তি রেখে মুনাফা লাভের জন্যই তেলের উৎপাদন হ্রাস করছে ওপেক প্লাস। শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ সৌদি আরব ওপেক প্লাসের সমঝোতার বাইরে আরও ১০ লাখ ব্যারেল ঐচ্ছিক উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি। তবে সৌদি আরবের কাছে স্থিতিশীল বিশ্ববাজারের অর্থ হলো তেলের একটি চাঙ্গা বাজার। তেলের দাম বাড়লে লাভবান হয় উৎপাদক দেশগুলো, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তা দেশ।