শিরোনাম
◈ পঞ্চগড় এক্স‌প্রেস ট্রেনের ব‌গি চার ঘণ্টা পর উদ্ধার, ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক ◈ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ◈ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না: বিএনপি ◈ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয় পুলিশ ও বহুজাতিক নৌবাহিনী ◈ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে অভিযোগ করলেন জবি ছাত্রী ◈ ঈদের পর কাওরান বাজার যাবে গাবতলীতে: মেয়র আতিক ◈ আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা কয়লায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই: এস আর শিপিং ◈ পাপেট সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সব নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলবে যুক্তরাষ্ট্র: জয়  ◈ চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে তিন দিন লাগতে পারে: রেল সচিব ◈ তামিম ও রিশাদ ঝড়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০৪ জুন, ২০২৩, ০৩:৫৯ দুপুর
আপডেট : ০৫ জুন, ২০২৩, ০৪:৪৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতের সবচেয়ে বড় রেল দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশি দম্পতি

সাজ্জাদ আলী ও তার স্ত্রী ববিতা সুলতান

চঞ্চল পাল, পশ্চিমবঙ্গ: বাথরুম থেকে স্বাভাবিক অবস্থার সংকেত বুঝে ট্রেনের গেটে এসে দাঁড়াতেই দেখি রেলের চাকা দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানির মতো করে আগুন জ্বলছে। ব্রেকের শব্দ। পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড ব্রেক করতে করতে পার্টি থেকে ট্রেন আমার ডানদিকে আমার সামনের বগিটি দুই হাত নেমে গেল। ট্রেনে খাবার পরিবেশন করার জন্য যে লোকটি প্রথম আমার কাছে এসেছিল। যে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলো এমন কি সে বাংলাদেশের ১০০ টাকা আমার কাছ থেকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করল আমি ট্রেন থেকে বেরোতেই তার মৃতদেহটা প্রথম দেখলাম যার নাম মী. বোস।

ট্রেনে লোক সংখ্যা যা ছিল বাইরে বেরিয়ে দেখি তার থেকে স্থানীয় সাহায্যের মানুষ উপস্থিত হয়েছিল দুই গুণ। যখন আস্তে আস্তে সামনে দিকে এগোচ্ছি চোখের সামনে মানুষ ঢুলে ঢুলে পড়ছে আর মরছে। যেমন আমরা বিদেশি সিনেমা গুলি দেখতে পাই। পুরো ট্রেনের যতগুলি কামরা শুধুমাত্র B1,S1S2 কামরা তিনটি সোজা দাড়িয়ে ছিলো দুটো ট্রেনের মাঝখানে। তবে কোনো কামরায় ট্রেন লাইন ছিল না। যে জায়গাতে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই জনবসতি এলাকা যেখানে একটি ছোট রেলগেট আছে। যেখান থেকে বাস চলাচলের রাস্তা আধা কিলোমিটার।

তড়িঘড়ি ট্রেন থেকে নামতেই দেখি লাইনের দুই ধারে মানুষের মৃতদেহ একটি মানুষের ওপর আরেকটি মানুষ। জীবিত মানুষগুলি শুধু চিৎকার করছে তাদের কথা কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আমি এবং আমার স্ত্রী এই বীভৎস অবস্থা দেখে রেল লাইনের ধারেই বসে পড়লাম। দূর থেকে দেখি হাজারে হাজারে মানুষ জলের বোতল হাতে টস লাইট হাতে ছুটতে ছুটতে আমাদের দিকে আসছে। আমি আমার স্ত্রী হতভাম্ব হয়ে গেছি । কি করা উচিত কি করব কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। মোবাইল বের করে দেখি কোন নেটওয়ার্ক নেই। আমার চোখের সামনে যে বগি গুলো লাইনচ্যুত হয়েছে সেগুলি দেখে মনে হচ্ছে খড়কুটোর মতো হালকা। একটি বগি আর একটা বগের উপরে এমনভাবে উঠে আছে যেন চা খেয়ে চায়ের কাগজের কাব্যিক মুড়ে ফেলে দিলে যেমন দেখতে লাগে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরা থেকে কারোর হাত কারোর মাথা কারোর পা এমন ভাবে বেরিয়ে আছে যা বলে বোঝানো যাবে না। ট্রেনের 90 শতাংশ মানুষ যখন যা সেরে উঠতে দুই বছর লেগে যাবে। 

স্থানীয় দুই একজন মানুষ আমাদেরকে জোর করে তাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে যাই। জোর করে জল খাওয়াই। তাদেরকে যখন মানা করতে যাই তখন তারা এটাই বলে এখন যদি তোমাদের সাহায্য না করতে পারি তাহলে আল্লাহর কাছে আমরা কি জবাব দেব। হিন্দি ভাষায় কথা বললেও আমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না। আমরা ছাড়াও আরো অনেক মানুষ সেই বাড়ি এবং আশেপাশের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিল। আমি যখন লাইনের পাশে বসে ছিলাম তখন শুধু চারিদিক থেকে অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজ। 

আলো এবং শব্দ শুনে মনে হলো শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স হাজির হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমি যেখানে বসেছিলাম আমার সামনেই একজন মা তার বাচ্চাকে নিয়ে বসে আছে কোলে থাকা বাচ্চাটির মাথা বলে কিছু নেই। অবাক হয়ে বসে আছে। আমাদের সেই শক্তি হলো না সে মাকে ডেকে কিছু বলার। আস্তে আস্তে যখন একটু স্বাভাবিক হয়েছি তখন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রধান রাস্তার দিকে এগোচ্ছি। চারি পাশে শুধু দেখতে পাচ্ছি অসুস্থ মানুষগুলোকে কিভাবে সাহায্য করছে স্থানীয় মানুষগুলো। যে যেমন বয়সে মানুষ সে তেমন ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমার চোখের যতগুলো ওষুধের দোকান দেখতে পেলাম সেখানে মানুষের ঢল এটা বুঝতে পেরেছি সেখানে বিনামূল পয়সায় ওষুধপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে। আমি যতবার ভারতে এসেছি বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে তবে এবার যে অভিজ্ঞতা হল মানুষ মানুষের পাশে কতটা সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে তা আমার জীবন আগে দেখেনি আগামীতেও দেখবো বলে মনে হয় না। 

হিন্দি ভাসির মানুষ কেউ কেউ উড়িয়া ভাষায় কথা বলছেন তাদের ভাষা এবং ব্যবহারে একটাই পরিচয় তারা মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক ওরা তুলতে প্রাণপণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 7:9 মিনিট ট্রেন দূর্ঘটানা ঘটে আর যখন বাস হাইওয়ে তে 7:40 পৌঁছায় মিনিট। বাবুঘাট বাস এসে দাঁড়াল সকল 6 টা। তার পর প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে 55b মির্জা গালিব স্ট্রিট। যদিও পরিচিত লোক তারা আগে থেকে হোটেল বুক করে রেখেছিল। সাদিয়া গেস্ট হাউস। তখন অর্ধেক রাত বাপের প্রচুর মানুষের ভিড় সবই প্রায়ই অসুস্থ। যদিও প্রথমে পাঁচ কন্টাকটার আমাদের কাছে বেশি টাকা ডিমান্ড করেছিল কলকাতায় ফেরার জন্য পরেক্ষণে সেটা আমি এবং আমার স্ত্রী ও অন্যান্যরা কিছু কিছু টাকা দিয়ে বাসের তেল খরচা উঠিয়ে দিই। আমরা দুজন যখন স্বাভাবিক হয়েছি তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে থাকা তিনটি পরিবারকে আমরা আমাদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করেছিলাম। তবে এখনো রাতে ঘুম হচ্ছে না। কিছু খেতে পারছি না। চোখে শুধু ওই একই ছবি।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়