তারিক আল বান্না: উড়িষ্যা রাজ্যের বালাসোরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিন ট্রেনের মধ্যে এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ব্যাপকভাবে উদ্ধার কাজ চলছে। আশংকা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাহতের এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ভারত সরকার রেল নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা করা সত্ত্বেও প্রতিবছর দেশটিতে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। সূত্র: টিএন্ডটি ওয়ার্ল্ড,
উড়িষ্যার হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমিয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজনদের খোঁজ-খবর নিতে। মৃতদের পরিবারের লোকজনের কান্নায় হাসপাতালগুলোতে এক বেদনাদায়ক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সূত্র: সিএনএন
উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বালাসোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সংকেতে বিভ্রাটের তথ্য উঠে এসেছে প্রাথমিক তদন্তে। ভারতের রেল কর্তৃপক্ষের তদন্ত দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসকে মূল লাইন দিয়ে চলে যাওয়ার সংকেত দেওয়ার পর তা আবার তুলে নেওয়া হয়। ট্রেনটি তখন স্টেশন এলাকার বাড়তি লাইনে (লুপ লাইন) ঢুকে গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনে আঘাত করে। বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছে এই দুর্ঘটনায় এ দুই ট্রেনের সঙ্গে আরেকটি দ্রুতগতির ট্রেন হাওড়া এক্সপ্রেসও জড়িয়ে পড়ে। সূত্র: এএফপি
রেল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, ১২৮৪১ নম্বর শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করমন্ডল এক্সপ্রেসকে মূল লাইন দিয়ে চলে যাওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। এরপরই আবার সংকেত তুলে নেওয়া হয়। কেন সংকেত দেওয়া হয়েছিল এবং তা তুলে নেওয়া হয়েছিল, তার কারণ স্পষ্ট নয়। সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি সংলগ্ন বাড়তি লাইনে (লুপ লাইন) ঢুকে পড়লে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। তখন ট্রেনটির ২১টি বগি লাইনচ্যুত হয় ও কয়েকটি উল্টে পড়ে। এর মধ্যে বিপরীত দিক থেকে ১২৮৬৪ নম্বর ট্রেনটি (যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস) অপর মূল লাইন ধরে চলে আসে। এর দুটি বগি লাইনচ্যুত হয় ও উল্টে পড়ে। সূত্র: বিবিসি
শ’ শ’ দমকল কর্মী ও পুলিশ সন্ধানী কুকুর নিয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করেন। জাতীয় দুর্যোগে সাড়াদানকারী বাহিনীর দলও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, এ দুর্ঘটনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন। উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৩ জুন এক দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। সূত্র: প্রথম আলো
ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো প্রত্যেকের পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি। মারাত্মক আহত ব্যক্তিদের ২ লাখ রুপি এবং সামান্য আহত যাত্রীদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, রেল মন্ত্রণালয় প্রদেয় অর্থের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল (পিএমএনআরএফ) থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি করে এবং আহত ব্যক্তিদের ৫০ হাজার রুপি করে দেয়া হবে। সূত্র: বাংলাট্রিবিউন
ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার হেলিকপ্টারে চেপে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পরিস্থিতি নিজ চোখে পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে রেলমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘রেলের সমন্বয়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যাত্রীদের প্রতি রেলের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ ছিল।’ সূত্র: নিউজবাংলা
রেলমন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘এখন রাজনীতি করার সময় না। স্মরণকালের ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনা নিহত এবং আহতদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।’ সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
টিএবি/এসবি/এসবি২