ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। উপত্যকাটিতে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) চালানো হামলায় দুই শিশুসহ সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, মিশর সীমান্তের কাছে দক্ষিণ রাফায় হামাস তাদের যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের চার সেনাকে আহত করার পর এই হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। তবে ক্রসিং দিয়ে কেবল গাজার বাসিন্দারা উপত্যকা ত্যাগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে তেল আবিব। এই সীমান্ত দিয়ে কোনো ত্রাণ বা সহায়তা প্রবেশ করবে না।
তবে মিশর এটিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শান্তি পরিকল্পনার পরিপন্থি ও একতরফা সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ছিলো, রাফাহ সীমান্ত উভয় দিকের চলাচলের জন্য খুলতে হবে।
এর মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী আরও এক ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। স্থানীয় সময় বুধবার বেইত লাহিয়ায় সংগঠনটির সদস্যরা রেডক্রসের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। পরে মরদেহ পৌঁছে দেওয়া হয় ইসরাইলে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, বুধবার ইসরাইলি বাহিনী অভিযোগ করে, রাফা সীমান্তের কাছের একটি এলাকায় অভিযান পরিচালনার সময় তাদের সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তেল আবিবের দাবি, হামাস সদস্যদের হামলায় কয়েকজন সেনা আহত হয়েছেন। এর কড়া জবাবের হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এরপরই বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালানো হয়। হামলায় উত্তর গাজা শহরের জেইতুন উপকণ্ঠে ইসরাইলি বন্দুকধারীদের গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি এবং দক্ষিণ আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে হামলায় পাঁচজন নিহত হন বলে জানান চিকিৎসকরা।
আল-মাওয়াসিতে বোমা হামলায় আগুন লেগে বেশ কয়েকটি তাঁবু পুড়ে যায়। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, আল-মাওয়াসিতে ‘ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।’ কুয়েতি হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, নিহত শিশুদের বয়স আট ও ১০ বছর।
ফিলিস্তিনি ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছিলেন। হামাস আল-মাওয়াসিতে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে এটাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইসরাইল অব্যাহতভাবে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি অবজ্ঞা’ প্রদর্শন করছে বলেও মন্তব্য করেছে গোষ্ঠীটি।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর লাগাম টানার দাবি জানিয়েছে। এদিকে গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনী কমপক্ষে ৫৯১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে কমপক্ষে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯২২ জন আহত হয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর