শিরোনাম
◈ রামপুরায় টিভি ভবনের সামনে বাসে আগুন (ভিডিও) ◈ নিউইয়র্কে পা রাখলেই গ্রেপ্তার করা হবে নেতানিয়াহুকে: হুঁশিয়ারি জোহরান মামদানির ◈ পল্লবী থানার সামনে পরপর তিন ককটেল বিস্ফোরণ, মোটরসাইকেলে পালালো দুর্বৃত্তরা—আহত ৩ ◈ সাবেক আ.লীগ সরকারের ৩৩২ কোটি টাকায় রোজ গার্ডেন কেনা নিয়ে অনুসন্ধানে দুদক ◈ বাংলাদেশকে বিজনেস ভিসা দেওয়া শুরু করেছে ভারত: প্রণয় ভার্মা ◈ ভোটার কার্ড করেন ৩০ হাজার টাকায়, পাসপোর্ট করতে গিয়ে আটক ◈ গণভোট প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর জিজ্ঞাসায় সিইসির জবাব: ‘আইন ছাড়া সম্ভব নয়’ ◈ অজিত দোভালের সঙ্গে ড. খালিলের সৌজন্য সাক্ষাৎ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা ◈ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কোনদিকে, শেখ হাসিনার ফাঁসি হলে কি হবে? ◈ মিজানুর রহমান আজহারীর প্রার্থিতার ব্যাপারে যে তথ্য দিল জামায়াত

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:২১ রাত
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ট্রাম্পের অনুমোদনে সৌদি আরব পাবে এফ-৩৫: কেন এত বিশেষ এবং দাম কত এই যুদ্ধবিমানের?

যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। হোয়াইট হাউসে যুবরাজের সম্মানে এ নৈশভোজের আয়োজন করেন ট্রাম্প।

২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করলেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ঐতিহাসিক মিত্রতা আরও জোরদার হওয়ার বার্তা দিচ্ছে দেশ দুটি।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ওয়াশিংটন সফরে আরেকটি বিষয় বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সেটি হলো মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরব অত্যাধুনিক এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চায়। তা–ও একটি–দুটি নয়, ৪৮টি।

সৌদি আরবের এ পরিকল্পনা অবশ্য নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চাইছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের আগের প্রশাসনগুলো এ বিষয়ে খুব একটা সায় দেয়নি। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, এর বড় কারণ ইসরায়েলের ঘোরতর আপত্তি।

‘স্টেলথ স্ট্রাইক ফাইটারস’ ঘরানার একটি যুদ্ধবিমান এফ–৩৫, যা রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এর নির্মাতা। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, এই যুদ্ধবিমানের পুরো নাম ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। সেই সঙ্গে এটিকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান’ বলা হয়েছে।

ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল এ বিষয়ে ওয়াশিংটনকে চাপ দিয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সৌদি আরবের কাছে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে রাজি। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সোমবার জানান, তিনি সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রিতে অনুমোদন দেবেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানটি কেন এত বিশেষ? এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের দাম কত? কয়টি দেশের হাতে আছে এ যুদ্ধবিমান। সৌদি আরব কেন এটি পেতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছে? একনজরে দেখে নেওয়া যাক—

সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান

‘স্টেলথ স্ট্রাইক ফাইটারস’ ঘরানার একটি যুদ্ধবিমান এফ–৩৫, যা রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এ যুদ্ধবিমানের নির্মাতা। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে, এ যুদ্ধবিমানের পুরো নাম ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। সেই সঙ্গে এটিকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান’ বলা হয়েছে।

এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করে, তবে এটাই হবে প্রথম কোনো আরব দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এফ-৩৫ বিক্রি–সংক্রান্ত চুক্তি। ২০২০ সালে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মার্কিন কংগ্রেসে ওই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
এফ–৩৫ ‘স্টেলথ ফাইটার’ হওয়ায় রাডারসহ শত্রুপক্ষের নজরদারি প্রযুক্তি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এটিকে বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। লক্ষ্য হলো শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা যুদ্ধবিমান আক্রমণ শুরুর আগেই ধ্বংস করে দেওয়া। যাতে যেকোনো সংঘাতের সময় আকাশে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করা যায়।

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কয়েকটি অংশীদার দেশ রয়েছে। যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি। এসব দেশের মধ্যে একেক দেশ যুদ্ধবিমানটির একেক অংশ তৈরি করে। কেউবা নিজেদের ব্যবহারের জন্য যুদ্ধবিমানগুলো সংযোজন করে থাকে।

নানা ধরনের এফ–৩৫

এই ঘরানার যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত সংস্করণ এফ–৩৫। সবচেয়ে বেশি দেশ এই মডেল ব্যবহার করে। এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান সাধারণ রানওয়ে ব্যবহার করে উড়তে–নামতে পারে।

এফ–৩৫–এ মডেলের যুদ্ধবিমানে অস্ত্র ও জ্বালানি ভেতরের অংশে রাখা হয়। যাতে এটির ‘স্টেলথ’ বা রাডার–নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা বজায় থাকে।

আরেকটি সংস্করণ আছে—এফ–৩৫আই। ‘আদির’ নামে পরিচিত এই সংস্করণ ইসরায়েলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এতে ইসরায়েলি প্রযুক্তি যোগ করা হয়েছে, যা যুদ্ধবিমানটির রাডার–নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা আরও বেড়েছে। এটি একটানা দীর্ঘ সময় উড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে যুদ্ধবিমানটির মূল অপারেটিং সিস্টেম বদলে ফেলেছে ইসরায়েল। ফলে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানে স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র যোগ করা সম্ভব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ কয়েকটি দেশ এফ–৩৫–বি সংস্করণ ব্যবহার করে। এটি হেলিকপ্টারের মতো করে নামতে পারে। খুব অল্প জায়গা পেলে উড়তেও পারে। তাই ছোট রানওয়েতেও এফ–৩৫–বি যুদ্ধবিমান ওঠানামা করানো যায়।

এফ–৩৫–এ–এর তুলনায় এফ–৩৫–বি আকারে ছোট। তবে ওজন বেশি। এই সংস্করণের জ্বালানি আর অস্ত্র বহনের সক্ষমতা তুলনামূলক কম।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ব্যবহার করে এফ–৩৫–সি। এটি ‘সুপারসনিক’ যুদ্ধবিমান। দীর্ঘ দূরত্বে গোপন অভিযান চালাতে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিমানবাহী রণতরিতে ব্যবহারের জন্য এটি বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে।

এফ–৩৫ বিশেষ কেন

নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এফ–৩৫ ঘরানার যুদ্ধবিমানের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে, বিশ্বে প্রচলিত যুদ্ধবিমানের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী। যেকোনো পরিস্থিতিতে টিকে থাকার সর্বোচ্চ সক্ষমতা এর রয়েছে।

মূলত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানকে আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে। তা হলো শত্রুপক্ষকে ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর আর উচ্চগতির কম্পিউটিং সক্ষমতাকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে পারা। একই সঙ্গে আগের প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের তুলনায় এটি চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা সিস্টেমসহ বিভিন্ন সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি পাইলটকে জানাতে পারে।

যেসব দেশের সামরিক বাহিনী এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানে বিনিয়োগ করেছে, তাদের আকাশ সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আগেভাগে হুমকি শনাক্ত করা, সেই তথ্য পুরো বাহিনীর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া এবং অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে সমন্বয় করে আঘাত হানার কৌশলগত পথে সেসব বাহিনী অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

লকহিড মার্টিনের তথ্য অনুযায়ী আল–জাজিরা জানিয়েছে, মডেলভেদে একেকটি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের দাম শুরু হয় আট কোটি ডলার থেকে। মডেল, প্রযুক্তি ও যুক্ত থাকা সুবিধার ভিন্নতায় সর্বোচ্চ দাম উঠতে পারে ১১ কোটি ডলার।

লকহিড মার্টিনের তথ্য অনুযায়ী, মডেলভেদে একেকটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের দাম শুরু হয় আট কোটি ডলার থেকে। মডেল, প্রযুক্তি ও যুক্ত থাকা সুবিধার ভিন্নতায় সর্বোচ্চ দাম উঠতে পারে ১১ কোটি ডলার।

যেসব দেশের কাছে আছে

আগেই বলা হয়েছে, এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের নির্মাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে কয়েকটি অংশীদার দেশ রয়েছে। সেগুলো হলো যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও ডেনমার্ক। দেশগুলোর কাছে বিভিন্ন সংস্করণের এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

এ ছাড়া জাপান, ইসরায়েল, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, গ্রিস ও সিঙ্গাপুরের কাছেও এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

আল–জাজিরার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টি দেশের বহরে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে।

এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করে, তবে এটাই হবে প্রথম কোনো আরব দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের এফ-৩৫ বিক্রি–সংক্রান্ত চুক্তি।

এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন। বিনিময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কংগ্রেসে ওই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমোদিত অস্ত্র বিক্রির জন্য করা যোকোনো চুক্তি প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

সৌদি আরব কেন কিনতে চায়

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের অন্যতম বড় ক্রেতা সৌদি আরব। বহু দশক ধরেই আরব দেশটি অস্ত্র কেনায় নিজেদের এ অবস্থান বজায় রেখেছে। তবে শত চেষ্টার পরও নিজেদের বহরে এখনো এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান যুক্ত করতে পারেনি।

এখন ট্রাম্পের হাত ধরে নিজেদের বহরে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান যুক্ত করতে পারলে সৌদি আরব তার সামরিক সক্ষমতা, বিশেষ করে আকাশে নিজেদের শক্তি আরও বাড়াতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রিয়াদের অবস্থান আরও পোক্ত হবে।

সৌদি আরব ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন তুলনামূলক ভালো। তবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে এই দুই দেশ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। তাই ইরান ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের প্রভাব বলয় অক্ষুণ্ন রাখতে ও হুমকি প্রতিরোধে সৌদি সরকার অত্যাধুনিক এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গেও সৌদি আরব যুদ্ধ করেছে। সেই সংঘাত এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলক শীতল থাকলেও ভবিষ্যতে যেকোনো সময় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এটিও সৌদি আরবের এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে চাওয়ার একটি কারণ।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়