যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী এবং সংবাদমাধ্যমকর্মীদের ভিসার মেয়াদ সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রস্তাবিত সরকারি নীতিমালায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসন আরও কঠোর করার বৃহত্তর পদক্ষেপের অংশ। বুধবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাপক অভিবাসন দমন অভিযান শুরু করেছিলেন। নতুন এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, বিনিময় কর্মী ও বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। আগে যেখানে তুলনামূলকভাবে নমনীয়ভাবে অবস্থান বাড়ানো যেত, সেখানে এখন তাদের মেয়াদ বাড়াতে আলাদা করে আবেদন করতে হবে।
প্রস্তাবিত নিয়মে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এফ ভিসা, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির জন্য জে ভিসা এবং সংবাদমাধ্যমকর্মীদের আই ভিসার নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকবে। বর্তমানে এসব ভিসার মেয়াদ সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি বা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চাকরির সঙ্গে সম্পর্কিত।
মার্কিন সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৬ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এফ ভিসায় অবস্থান করছিলেন। একই অর্থবছরে (যা শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে) প্রায় ৩ লাখ ৫৫ হাজার বিনিময় কর্মী এবং ১৩ হাজার সংবাদকর্মী ভিসা পেয়েছিলেন।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ও বিনিময় কর্মীদের ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর হবে। সাংবাদিকদের ভিসা, যা আগে কয়েক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকত, তা কমিয়ে ২৪০ দিন করা হবে। চীনের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ হবে মাত্র ৯০ দিন। তবে ভিসাধারীরা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন তাদের প্রস্তাবে বলেছে, ভিসাধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে আরও কার্যকরভাবে “পর্যবেক্ষণ ও তদারকির” জন্য এই পরিবর্তন প্রয়োজন।
এই প্রস্তাবের ওপর জনগণকে ৩০ দিনের মধ্যে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগেও ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন একই ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ২০২১ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তা প্রত্যাহার করে নেয়।
২০২০ সালের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিষয়ক অলাভজনক সংগঠন নাফসা। এটি সারা বিশ্বের ৪ হাজার ৩০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে ওই উদ্যোগ বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল।
রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়ায় আগেও কঠোরতা দেখিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আদর্শগত মতের কারণে অনেকের স্টুডেন্ট ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে এবং লক্ষাধিক অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা (ইউএসসিআইএস) একটি নির্দেশনায় জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা নাগরিকত্ব আবেদনকারীদের আবাসিক এলাকা পরিদর্শনের কাজ আবার শুরু করবে। এর মাধ্যমে তারা আবেদনকারীর বসবাস, নৈতিক চরিত্র এবং মার্কিন মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার যাচাই করবে।