শিরোনাম
◈ ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বাড়ছে: আমানত প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের নিচে, আস্থাহীনতায় ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমছে ◈ এবার সৌদি আরব কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়ে শুষ্ক মরুভূমিকে সবুজ বানাবে! ◈ হামলার প্রতিবাদে বরিশালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ◈ ‘এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক’ বলে প্রকাশ্যে স্ত্রী মারধর করলেন স্বামীকে, ভিডিও ভাইরাল ◈ এবার থাইল্যান্ডের ২ চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসেবায় বিএমডিসির নিষেধাজ্ঞা ◈ বাংলাদেশি পর্যটক কমায় ধুঁকছে কলকাতার নিউমার্কেট, মেডিকেল ভিসায় ভরসা ব্যবসায়ীদের ◈ দরকষাকষিতে কে এগিয়ে বিএনপি না এনসিপি ◈ নেইমারকে নি‌য়ে সমকামবিদ্বেষী স্লোগান দেয়ায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাবের ১১ লাখ টাকা জ‌রিমানা ◈ সাত অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ ঝড়ের সম্ভাবনা, ঢাকায় আকাশ মেঘলা ও বৃষ্টির পূর্বাভাস ◈ নির্বাচন নিয়ে ছাত্র রাজনীতি সরগরম, প্রচারে ছাত্রদল অনেকটা পিছিয়ে

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:২৩ সকাল
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০৮ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

গাজা গণহত্যায় ইসরায়েলের প্রতি ভারতের প্রশ্নাতীত সমর্থন

তেল আবিবের সাথে নয়াদিল্লির জোট এবং ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী চেতনার মৃত্যু

এল আর বাদল : জনমতের প্রবল চাপে সবচেয়ে প্রতারক ও ভণ্ড পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীও অন্তত ইরায়েলের সমালোচনা করতে বাধ্য হলেও, ভারতের চরম ডানপন্থী সরকার গর্বের সাথে তেল আবিবের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের উপর ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আধিপত্য সত্ত্বেও, ইসরায়েলের শয়তানি এবং অমানবিক চেহারা বিশ্বের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং এমনকি সবচেয়ে প্রতারক ও ভণ্ড পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীও জনমতের চাপে অন্তত ইসরায়েলের সমালোচনা করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন ভারতের চরম ডানপন্থী সরকার গর্বের সাথে তেল আবিবের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। -- পার্সটু‌ডে

মাশরেক নিউজ জানিয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের পেছনে দখলদার ইসরায়েলের সাথে ভারতের গভীর সখ্যতা দায়ী। ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থক রঞ্জন সুলেমান মিডল ইস্ট মনিটর ওয়েবসাইটে এক নিবন্ধে তার দেশের সরকারের এই নীতি সমালোচনা করেছেন।

প্রতারণার অস্ত্র

গত দশকে ইসরায়েলের সাথে ভারতের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যকার প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ৫৬০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আর বর্তমানে এই সংখ্যাটি বছরে ১৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারেরও বেশি বেড়েছে। 

ভারত এখন ইসরায়েলের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা এবং ড্রোন ও নজরদারি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নির্ভুল আঘাত  হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত সবকিছু আমদানি করে। ভারতে রপ্তানি করা অনেক অস্ত্র প্রযুক্তি যুদ্ধের ময়দানে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীরে পরীক্ষা করা হয়েছে।

এসব অস্ত্র কিনে ভারত কার্যত ইসরায়েলের দখলদারিত্ব, বর্ণবাদী প্রাচীর, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং এখন গাজায় সংঘটিত গণহত্যাকে সমর্থন করছে।

সরাসরি গণহত্যার দৃশ্য সম্প্রচার

গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে তা গোপন কিছু নয়। ২০২৩ সাল ৭ অক্টোবর, থেকে এ পর্যন্ত ৬১,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। গাজার হাসপাতালগুলোকে পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

 ত্রাণ সাহায্যের কনভয়গুলোতে বোমা হামলা করা হচ্ছে। যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে অনাহার ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতরের সাবেক পরিচালক ক্রেগ মোখিবারসহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা এই গণহত্যাকে "ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিত" বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতের নীরবতা এবং তার চেয়েও যেটা খারাপ

৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের সাথে সংহতি প্রকাশকারী প্রথম বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন, এমনকি কোনও নিশ্চিত তথ্য প্রকাশের আগেই। 

ভারত সরকার গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে বোমা হামলার নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানায় এমনকি ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভকারীদের উপর কঠোর দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়, ছাত্র ও অধিকার কর্মীদের বহিস্কার করে এবং যেসব শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক সাহসিকতার সাথে কথা বলছে এবং ইসরায়েলের সমালোচনা করছে তাদেরকেও নজরদারিতে রেখেছে ভারত সরকার। 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের অনুমতি না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য ছাত্র ইউনিয়নগুলোকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। 

এমনকি দিল্লি, মুম্বাই এবং ব্যাঙ্গালোরের মতো প্রধান শহরগুলোতে মানবিক সমাবেশগুলোও পুলিশের অনুমতি পেতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত সরকারের এই দমন-পীড়নের সাথে ইসরায়েলি আচরণের অদ্ভুত মিল রয়েছে। যেমন: ভিন্নমতকে দমন করা এবং সমবেদনা জানানোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা। 

ভারত একসময় ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল এবং জাতিসংঘে ফিলিস্তিন মুক্তির পক্ষে কথা বলতো কিন্তু, এখন ইসরায়েলের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বের চোখের সামনে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যা চেয়ে চেয়ে দেখছে।

জনগণের কণ্ঠস্বর দমন

ত‌বে ভারতের নাগরিক সমাজ চুপ করে থাকেনি। দিল্লি থেকে কেরালা পর্যন্ত, স্বাধীন ও  মানবাধিকার রক্ষাকারী গোষ্ঠীগুলো এবং ছাত্র সমাজ সাহসিকতার সাথে কথা বলেছে। 

শিল্পীরা গাজার পক্ষে ছবি আঁকছেন, আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে চিঠি লিখেছেন, শিক্ষকরা ফিলিস্তিনের পক্ষে সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং মুসলিমরা সারা দেশজুড়ে নামাজের মাধ্যমে দোয়া করছেন। যদিও তারা সরকারি দমন, ডিজিটাল নজরদারি এবং মিডিয়া আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছেন। সংবাদ চ্যানেলগুলো প্রতিবাদকারীদেরকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদবিরোধী" বলে অভিহিত করেছে। 

পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হয়রানি বা আটক করার জন্য বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিশেষ আইন (UAPA) ব্যবহার করছে। সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ এবং সেন্সর করা হচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

ভারতের কেন তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা উচিত

ভারত নিজেই ঔপনিবেশিক শাসনের শিকার হয়েছিল। তাই তারা দখলদারিত্বের কুপ্রভাব, বিভাজনের ক্ষত এবং সহিংসতার বোঝা এখনো বহন করে বেড়াচ্ছে। 

এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের বিশ্বব্যাপী উপনিবেশ বিরোধী অবস্থান ধরে রাখা উচিত এবং উপনিবেশকামী দেশগুলোর পক্ষে কথা বলা উচিত নয়। ভারত যখন গাজায় ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণকে সমর্থন জানাচ্ছে  তখন তাদের কারো মুখে গান্ধী এবং নেহেরুকে উদ্ধৃত করে কথা বলা মানায় না।  ভারত নিরীহ ফিলিস্তিনিদের 

হত্যায় জড়িত ইসরায়েলি গণহত্যাকারীকে সহায়তা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের দাবি করতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়