এল আর বাদল : লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদের (জেইএম) মতো পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি ভারতের ক্ষতি করা জন্য নেপালকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে সতর্ক করে দিলেন নেপালের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা সুনীল বাহাদুর থাপা। ৯ জুলাই কাঠমান্ডুতে নেপাল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন অ্যান্ড এনগেজমেন্ট (NIICE) আয়োজিত একটি উচ্চস্তরের সেমিনারে সুনীল এই মন্তব্য করেন। এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের হুমকির মোকাবিলার উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটিতে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। --- জি নিউজ
সেমিনারে বক্তারা উল্লেখ করেন যে ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রভাব প্রায়শই নেপালের উপর পড়ে। যার ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁরা সার্কের কার্যকারিতা এবং বৃহত্তর আঞ্চলিক সংহতির পথে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের সমর্থনকে একটি বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সেমিনারে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করা এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্তে যৌথ টহলদারি। সন্ত্রাস মোকাবিলায় আঞ্চলিক দেশগুলিকেও আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতের সাম্প্রতিক অভিযানকে সীমান্তবর্তী হুমকির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেমিনারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা মনে করিয়ে দেন যে, আইসি-৮১৪ হাইজ্যাকিং এবং এলইটি-নেতৃত্বাধীন পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনার কারণে নেপাল এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। পহেলগাঁওয়ে নিহত ২৬ জন পর্যটকের মধ্যে একজন নেপালের বাসিন্দাও ছিলেন।
ভারত এবং নেপালের মধ্যে ১,৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের বেশিরভাগ জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব কম। এই ফাঁকফোকর জঙ্গিদের ভারতে অনুপ্রবেশ করা আরও সহজ করে তোলে। প্রায়শই তাঁরা তাদের পরিচয় গোপন করার জন্য জাল নেপালি নথি ব্যবহার করে। বছরের পর বছর ধরে, লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের মতো পাকিস্তান-ভিত্তিক সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আইসি-৮১৪ হাইজ্যাক। কাঠমান্ডু থেকে নয়াদিল্লি যাওয়ার পথে বিমানটি হাইজ্যাক করা হয়েছিল। অপরাধীরা অস্ত্র নিয়ে ওঠার পর- কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় গুরুতর ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৭ মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অপারেশন সিঁদুর অভিযানে ভারত নির্ভুল হামলা চালিয়ে লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদের সদর দপ্তর এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এই দু’টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ভারতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ২০০১ সালে সংসদ হামলা, ২৬/১১ মুম্বই হামলা, ২০১৬ সালে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে হামলা এবং ২০১৯ সালে পুলওয়ামা জঙ্গি হামলা।
লস্কর-ই-তইবার একটি শাখা, দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করেছিল। দক্ষিণ কাশ্মীরের মনোরম রিসোর্ট শহরে ২৬ জন পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা।