সৌদি আরব প্রতিনিধিঃ দেখতে ভয়ঙ্কর ও অদ্ভুত হলেও ‘ধপ’ নামের একটি সরীসৃপ প্রাণী সৌদি আরবের জনগণের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে পরিচিত। শতভাগ গুইশাপের মতো দেখালেও, এটি মূলত ‘স্পাইনি টেইলড লিজার্ড’ বা ‘ধপ’ নামে পরিচিত এবং প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো গুইসাপ নয়। মরুভূমিতে বসবাসকারী এই প্রাণীটি বহু আগেই সৌদির ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
সৌদি আরবে ধপ শিকার একটি পুরোনো রীতি ও সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ। মরুভূমির তরুণরা দলবদ্ধভাবে বেরিয়ে পড়েন এই বিশেষ লিজার্ড শিকারে। কেউ কেউ গর্তে পানি ঢেলে, কেউ ধোঁয়া ব্যবহার করে কিংবা সরাসরি ধাওয়া করে ধপ ধরে থাকেন। এই শিকার শুধুমাত্র খাদ্য সংগ্রহের জন্য নয়, বরং এক ধরনের আনন্দ, চ্যালেঞ্জ ও মরুভূমির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবেশগত পরিবর্তন ও অতিরিক্ত শিকারের কারণে ধপের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। এই কারণে বর্তমানে সৌদি সরকার সীমিত আকারে নিয়ন্ত্রিত শিকারের অনুমতি দিয়ে থাকে।
খাবার হিসেবে ধপের মাংস গ্রিল, ভুনা কিংবা ঐতিহ্যবাহী কাপসা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মরুভূমির যাযাবর সম্প্রদায়ের কাছে এটি যুগ যুগ ধরে শক্তি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ধপের মাংস সাধারণত খানিকটা মুরগির মতো হলেও এতে থাকে এক ধরনের মরুভূমির নিজস্ব গন্ধ ও স্বাদ।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ধপ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। একাধিক হাদিসে পাওয়া যায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে ধপের মাংস ভক্ষণ করতেন না, তবে তিনি একে হারামও ঘোষণা করেননি। ফলে মুসলিমদের মধ্যে কেউ এটি খান, আবার কেউ তা পরিহার করেন।
সব মিলিয়ে, সময় বদলালেও সৌদি আরবে ধপ আজও একটি ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।