ইসরাইলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেহরানের রাস্তায় লোকজন উৎসব করছে। তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান বড় ভুল করেছে এবং এজন্য তাকে মূল্য দিতে হবে। ইসরাইলের সহযোগীরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরাইলের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বুধবার বৈঠকে মিলিত হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
ইরান বলেছে, ইসরাইল যদি পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে ইসরাইলের সব অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হবে।
বিবিসির সিকিউরিটি করেসপন্ডেন্ট ফ্রাঙ্ক গার্ডনার লিখেছেন, ইরান গত এপ্রিলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা দেশটিকে যেভাবে ধৈর্য ধারণের আহবান জানিয়েছিলো এবার তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইসরাইলের এখনকার কৌশল হলো একসঙ্গে দু’ভাবে এগুনো। হত্যা, বিমান হামলা ও প্রতিরোধ- যার মাধ্যমে ইরান ও ছায়াশক্তিগুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া যে ইসরাইলে আঘাত করলে আরও বেশি শক্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সাবেক ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আভি মেলামেদ বলেছেন, ইরানের হামলা হলো ইসরাইলকে বড় ধরনের পাল্টা হামলার জন্য উস্কানি দেওয়া। আমরা ইরানি লক্ষ্যবস্তু গুলোতে উল্লেখযোগ্য ও তাৎক্ষণিক ইসরাইলি জবাব দেখতে পাবো।
কিন্তু ইসরাইলের প্রতিশোধ কেমন হতে পারে?
ইরানে হামলার জন্য দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনা ইসরাইলের হাতে থাকবে। এর প্রতিরক্ষা প্রধান এখন পর্যালোচনা করে দেখবেন কখন ও কীভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটিতে আঘাত করবেন। এর মধ্যে অবশ্যম্ভাবী সামরিক লক্ষ্যবস্তু হবে স্থলভাগে যেখান থেকে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
সুতরাং ফায়ারিং এর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র যেখানে রাখা হয়েছে শুধু সেই জায়গা নয় বরং কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি রিফুয়েলিং সেন্টারগুলোও এর আওতায় থাকবে।
এমনকি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়েছে যারা এবং যারা এটি পরিচালিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ইরানের অভ্যন্তরেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে পারে ইসরাইল। আর যদি দেশটি আরও বেশি কিছু করতে চায় তাহলে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করতে পারে।
যে পথেই এগুক ইসরাইল, এতেও ইরানের পাল্টা হামলা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে এবং এর মাধ্যমে দেশ দুটি হামলা ও প্রতিশোধে চিরস্থায়ী এক চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়বে।
এবার আর কোন রাখঢাক নয়
গত এপ্রিলে ইসরাইল যেভাবে ইরানের হামলার জবাব দিয়েছিলো তার চেয়ে এবার আরও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আক্রমণ করতে প্রলুব্ধ হবে দেশটি। ওই সময় ইসরাইলকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত রাখতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার পর ৩০০শ মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরাইলকে টার্গেট করে ছুঁড়েছিল ইরান।
শেষ পর্যায়ে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ছোট কিন্তু প্রতীকী হামলা করেছিলো। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো কম কিন্তু ইরানকে তারা দেখিয়েছে যে চাইলে তারা কোথায় পৌঁছাতে পারে।
এবার হয়তো এর থেকে ভিন্ন হবে পরিস্থিতি। ইসরাইল সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চল জুড়ে তার কর্মকাণ্ডকে বিবেচনা করে তার শত্রু ও হুমকিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা।
ইরান যেমন মনে করেছে যে জুলাইয়ে তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ও কয়েকদিন আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ হত্যার জবাব দিতে হবে, ইসরাইলও তেমনি ইরানের সরাসরি আক্রমণ নিয়ে চুপ করে থাকবে না।
এমনকি এর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা থেকে শুরু করে মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যেখান থেকে হয়েছে কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রাখা ও যেখান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে রিভল্যুশনারি গার্ডের ঘাঁটি পর্যন্ত।
পরিণতির হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরাইলে সরাসরি সামরিক হামলার জন্য ইরানকে ‘কঠোর পরিণতির’ হুমকি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে জোর দিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন এ বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই অঞ্চল এখন উত্তেজনা – পাল্টা উত্তেজনার একটি চক্রে পড়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত কয়েকমাস ধরে তা এড়ানোর চেষ্টা করছিলেন যাতে গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। এর মাঝে আবার ইসরাইলকে নিরবচ্ছিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন ওই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি ও প্রতিরোধ- দুটোই চালিয়ে গেছে। এখন ইসরাইলে ইরানের হামলার জবাবেও তারা সেটি বহাল রাখবেন বলে তিনি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :