শিরোনাম
◈ এক বছরে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি: নাহিদ ইসলাম ◈ কুমিল্লার হোমনায় মাজারে অগ্নিসংযোগ: অজ্ঞাত ২২শ জনের বিরুদ্ধে মামলা, এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি ◈ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন: ২৩২ পদে লড়বেন ৯৩১ প্রার্থী ◈ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে নেপালের চিকিৎসক বললেন ‘রোগীদের ছেড়ে যাব না’! ◈ ইউপিইউ কাউন্সিলে বাংলাদেশ পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন ◈ আইসিসি উ‌ত্তে‌জিত, পা‌কিস্তান ক্রিকেট দল কড়া শাস্তির মুখে পড়তে পা‌রে ◈ নি'ষিদ্ধ দলের লোককে বাসা ভাড়া না দিতে পুলিশের মাইকিং! (ভিডিও) ◈ নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরানোর নির্দেশ তালেবানের, যৌন হয়রানি নিয়েও পড়ানো নিষেধ ◈ ঢাকাসহ বি‌ভিন্ন জেলায় আওয়ামী লী‌গের কর্মকা‌ণ্ডে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে?  ◈ টেকনাফের পাহাড় থেকে নারী শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার!

প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৩ দুপুর
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:৫৪ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

খেলাফত মজ‌লি‌সের মামুনুল হক হঠাৎ আফগানিস্তান সফরে কেন?

এল আর বাদল : বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান সফরে গিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ সাত জন। বুধবার সকালে দেশটির রাজধানী কাবুলে গিয়ে পৌঁছান তারা।

যদিও তার দল দাবি করছে এটি দলীয় কোনো সফর নয়, তবে দলটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সফরের তথ্য জানিয়েছে।

এতে তারা বলছে, 'ইমারাতে ইসলামিয়া' বা তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে সফরকারী দলটি আফগানিস্তানে গেছে। কাবুলে তারা তালেবান সরকারের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করার কথা রয়েছে। --- বি‌বি‌সি বাংলা

বিশেষভাবে মানবাধিকার ও নারী অধিকার বিষয়ে পশ্চিমা মহলে যে সমালোচনা রয়েছে, সে প্রসঙ্গেও তারা বাস্তব অবস্থান সরাসরি পরিদর্শন করবেন" বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে দলটি।

তবে পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা বিষয়টি নিয়ে মি. হক কেন পরিদর্শন করছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বিবিসি বাংলাকে জানান, সেখানে আসলে নারী অধিকার লুণ্ঠন বা হরণ হচ্ছে কি না এটা বাস্তবে দেখলো তারা। অনেক সময় হয় না যে, একটা বিষয়ে বিভ্রাট ধারণা থাকে, একটা শ্রেণির লোক তো এই বিষয়টা প্রচার করে যে নারীর অধিকার নারীকে ঘরে আটকায়া রাখে এই বিষয়টা তারা জানলো আসলে বিষয়টা সত্য কি না, বলেন মি. আহমদ।

এদিকে, খেলাফত মজলিসের আমির ও তার প্রতিনিধি দল এমন এক সময়ে এই সফর করছেন, যখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তার ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে এই দলটির বৃহস্প‌তিবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা আফগানিস্তানে গিয়েছেন এমন কোনো নজির নেই।

এই প্রথম কোনো দলের নেতাদের আফগানিস্তান সফরের কথা শুনছেন তারা। দলটির মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বিবিসি বাংলাকে জানান, এই সফরটি দলীয় কোনো সফর নয় বরং ওলামা সমাজের সফর।

একইসাথে সফরে দলের আমির মামুনুল হক থাকলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয় এমন অনেকেই আছেন বলে জানান তিনি। মি. আহমদ জানান, এর আগে ২০০১ সালেও 'ওলামা সমাজ' আফগানিস্তান সফর করেছেন।

তালেবানদের সাথে খেলাফত মজলিসের সম্পর্ক নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। তবে স্বীকৃতি না দিলেও অর্থনৈতিক লেনদেন করছে বেশ কয়েকটি দেশ।

এমনকি বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসও নেই আফগানিস্তানে। তবে বাংলাদেশে আফগানিস্তানের দূতাবাস আছে। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাস সমদূরবর্তী মিশন হিসেবে আফগানিস্তানে কাজ করে থাকে।

আফগানিস্তানে ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর ক্ষমতাসীন তালেবান সেদেশের নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করে এবং প্রাইভেট টিউশন কেন্দ্রগুলোর প্রতি আদেশ দেয় যেন তারা কোন ছাত্রীকে শিক্ষাদান না করে।

এসব প্রেক্ষাপটে দেশটির তালেবান সরকারের সাথে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের কী বা কেমন সম্পর্ক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে?

দলটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বুধবার জানিয়েছিল, সফরের সময় দুই দেশের আলেমদের মধ্যকার সম্পর্কান্নয়নসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকে প্রতিনিধি দল আলোচনায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

এই সফরে আমির মি. হকসহ সাত সদস্যের দলটি মধ্যএশিয়ার আরো কয়েকটি দেশ সফর করবেন বলে জানানো হয়েছে। দল‌টি জানিয়েছে, গত ১৪ই সেপ্টেম্বর আমির মামুনুল হকসহ প্রতিনিধি দল পবিত্র ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। সেখানে তারা ওমরাহ আদায় শেষে গতকাল বুধবার সকালে দুবাই হয়ে কাবুলে পৌঁছান।

দলটির মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে আলোচনা ও সম্পর্কোন্নয়নের জন্য এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সফরটা কোনো দলীয় উদ্যোগে নয়, যারা গেছেন অনেকে রাজনীতি করেন না এমন লোকও আছেন। বাংলাদেশের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে একটা প্রতিনিধি দল সম্পর্কোন্নয়নের জন্য গিয়েছেন," বলেন মি. আহমদ।

মি. হক ছাড়াও সফররত বাকিরা হলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পীর),দলটির আরেক নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

এছাড়াও ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতীব মাওলানা আব্দুল হক, বারিধারা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, জমিয়ত নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও ময়মনসিংহের স্থানীয় আলেম মাওলানা মাহবুবুর রহমান।

খেলাফত মজলিসের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় তার অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করলে তিনি জানান, এই সফরের প্রক্রিয়া আগে থেকেই ছিল, কর্মসূচি পরে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এর আগে, ২০০১ সালেও বাংলাদেশের ওলামা সমাজ(ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব) আফগানিস্তান সফর করেছিলেন। তবে তাদের কেউই এখন বেঁচে নেই।

সে সময় মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে তালেবান সরকার কাবুলের ক্ষমতা দখল করেছিল। ২৫ বছর আগের ওই সফরে মি. হক ছিলেন না।

খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের মহাসচিবের দাবি তালেবান সরকারকে অনেক দেশ স্বীকৃতি না দিলেও সমর্থন রয়েছে।

সে কারণেই দুইটি মুসলিম দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক, অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যই ওলামা সমাজের এই সফর বলে দাবি করেন মি. আহমদ।

সেক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে কেনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নে মি. আহমদের দাবি, মামুনুল হকের দুইটি পরিচয় রয়েছে।

ওনারতো দুইটা পরিচয়। একদিকে তিনি আলেম, ইসলামিক স্কলার আরেকদিকে উনি দলের প্রধান। এই হিসেবেই আমাদের অফিস থেকে ওনার এই মেসেজটা সবাইকে জানানো হয়েছে, বলেন মি. আহমদ।

আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবানদের সাথে খেলাফতে মজলিস বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন দলটির মহাসচিব মি. আহমদ। এই পর্যন্ত কারো সাথে কোনোদিন দেখাও হয় নাই, যোগাযোগও হয় নাই, কথাও হয় নাই," বলেন মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়