শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৩ বিকাল
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফের গরম হচ্ছে রাজপথ

মহসিন কবির: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে উত্তাপ তত বাড়ছে। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্যও দৃশ্যমান হচ্ছে। পিআর পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে ‘গণভোট’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম।

ঢাকায় সাত দলের পৃথক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, বিএনপির একজন নেতা বলেছেন- ৯০ শতাংশ ভোট তাদের, যদি তাই হয় তাহলে তো তারা আসন পাবে ২৭০ এর ওপরে। তারা তো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারছে, সমস্যা কোথায়?

সংস্কার ও বিচার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংস্কার ও বিচার না করে আপনি কীভাবে নির্বাচন দেন?

ছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করা হবেছাত্র সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োগ করা হবে সমাবেশের পর ওই এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

বিশ্লেষকদের মতে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল হিসাবে দলগুলো কর্মসূচি দিয়ে থাকতে পারে। তারা বলছেন, পরিবর্তিত অবস্থায় ঐক্য ধরে রাখতে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে আগে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজতে হবে সমাধানের পথ। একে অপরকে ছাড় না দিলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য সব পক্ষকে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্যথায় বিভক্তি-বিভাজনের এই সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি।

অন্যদিকে এ মুহূর্তে কর্মসূচির বিরোধী বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বলছে, আলোচনা চলা অবস্থায় দাবি আদায়ে মাঠে নামা অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। যে কোনো দল দাবি আদায়ে কর্মসূচি দিতেই পারে। এটা তাদের অধিকার। কিন্তু সেই কর্মসূচি যদি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে তবে সেটা ভেবে দেখা উচিত। কারণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়তে পারে।

তবে জামায়াতসহ কর্মসূচিতে যাওয়া দলগুলো বলছে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে সেটা তারা মনে করেন না। তাদের মতে, জনমত মজবুত করতে এই কর্মসূচি। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, দাবিগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি করবে। আর সেই সংকট সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করেই সব করা উচিত।

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন ও কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি চালু, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ও স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যারা কর্মসূচি দিয়েছেন তারাও ওই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই এ বিষয়ে রাজপথে আন্দোলনের আহ্বান জানানো অযৌক্তিক। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রতি কোনো সম্মান দেখাচ্ছে না কর্মসূচি দেওয়া দলগুলো। যারা স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ। তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, তারা করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। 

তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সমমনা দলগুলো একই দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে, এটাকে আমরা যুগপৎ বলব না। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলাকালীন এ ধরনের কর্মসূচি স্ববিরোধী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্ববিরোধী মনে করি না। আমরা মনে করি জনমতকে মজবুত করতে এই কর্মসূচি। বরং ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা আরও সহায়ক হবে। এই দাবিটা জনগণের সে কথা আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার বলেছি। এই দাবিটা যে জনগণের সেটা প্রমাণ করার জন্যই এ কর্মসূচি।

জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে উঠে আসে এই কর্মসূচি ঘিরে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বৈঠকে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোতে সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। 

এদিকে আলোচনা চলাবস্থায় কর্মসূচিকে অযৌক্তিক মনে করেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকও। তিনি বলেন, যেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের পথে আছি, একই বিষয় যদি রাজপথে নেওয়া হয়, তাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা আছে। এতে করে জুলাই আন্দোলনের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা দূরত্ব, কিছুটা সন্দেহ-অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এসব আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা দরকার বলে আমরা মনে করি। 

তিনি আরও বলেন, এ কর্মসূচি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে কোনো অন্তরায় হবে বলে মনে করছি না। কিন্তু যারা দাবিগুলো করছেন তারা কার কাছে করছেন, তাও স্পষ্ট নয়। কারণ মনে করা হয় সরকারের ওপর তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সুতরাং তারা আবার বিক্ষোভ করবেন, আন্দোলন করবেন-এটি নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তবে যদি আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চান, তখন তো নিশ্চয়ই তা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দেখা দিতে পারে। 

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ঐকমত্য কমিশনে ২০টি বিষয় নিয়ে আমরা দিনের পর দিন আলোচনা করেছি। সেখানে পিআর এজেন্ডা ছিল না। সর্বশেষ যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, তখন তিনটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, সেখানেও পিআর নিয়ে কথা বলা হয়নি। যথাযথ ফোরামে আলোচনা না করে শুধু মাঠ গরমের রাজনীতির মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্যই এ ধরনের আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপিসহ মিত্র রাজনৈতিক দলের নেতারাও। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা মনে করেন কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে যদি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, তবে দেশের অর্থনীতিসহ সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়তে পারে। আর সেটা হলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিবিদরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক পরিকল্পনা করা।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ইসলামী দলগুলো সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের উত্থান ঘটেছে। এই উত্থানটার মাধ্যমে তারা একটা বার্তা দিতে চায়। বিএনপিসহ বড় দলগুলোকে টার্গেট করে তারা বার্তা দিতে চায় রাজনীতিতে আমরা এখন গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এখন আর মার্জিনাল বা প্রান্তিক না; সেটা তারা প্রমাণ করতে চায় এ কর্মসূচির মাধ্যমে। তবে কর্মসূচি যাই দেওয়া হোক রাজনীতিতে জামায়াতের যে উত্থান তারা কখনোই নিজেদের ক্ষতি নিজেরা ডেকে আনতে চাইবে না। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অন্য কিছু করলে জামায়াত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিএনপি লাভবান হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়