শিরোনাম
◈ এশিয়া কাপসহ বড় আস‌রে পা‌কিস্তা‌নের বিরু‌দ্ধে খেল‌বে ভারত, ত‌বে দ্বিপাক্ষীক‌ ক্রিকেট নয়  ◈ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর! ◈ আমার স্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা ধর্ষণ করেছিলেন: ভারতের অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অমিত কুমার ◈ এবার বিমানের চাকা চুরি করে অন্য এয়ারলাইনসে বিক্রি! ◈ সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ◈ কোরআন ছুঁয়ে শপথ, ইসলাম কী বলে? ◈ যে মন্তব্যের কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে বরখাস্ত মার্কিন মুখপাত্র শাহেদ গোরেশি ◈ নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টায় জামায়াত: অধিকাংশ ইসলামি দলের না ◈ ইসরা‌য়েল‌কে আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিষিদ্ধের দাবি এআইএসির ◈ বিকা‌লে সাফ ফুটব‌লে শ‌ক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি  বাংলাদেশ নারী দল

প্রকাশিত : ২২ আগস্ট, ২০২৫, ১১:১৯ দুপুর
আপডেট : ২২ আগস্ট, ২০২৫, ০১:০৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টায় জামায়াত: অধিকাংশ ইসলামি দলের না

সহযোগীদের খবর: ‘নির্বাচনি জোট গঠনের চেষ্টায় জামায়াত: অধিকাংশ ইসলামি দলের না’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে যেতে চাচ্ছে না অধিকাংশ ইসলামি দল। এসব দলের নেতারা জোট বেঁধে ভোটে যাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বললেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের দলের আদর্শ ও চিন্তাধারার পার্থক্য সামনে আনছেন। কাজেই জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি জোট গঠনের আলোচনা বেশ কিছু দিন ধরে শোনা গেলেও তা খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, এই জোট বা সমঝোতার বিষয়টি এখনো টেবিল আলোচনায়ই সীমাবদ্ধ। দিন যত গড়াচ্ছে, বৃহৎ জোট বা সমঝোতা নিয়ে দেখা দিচ্ছে নানা সন্দেহ ও সংশয়। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত সব দল মিলে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মনে করছেন বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা। দলগুলোর অনেক নেতা জামায়াতের সঙ্গে জোট করবেন না-বিষয়টি এখনই প্রকাশ্যে বলতে চান না। তারা পৃথক ইসলামি জোট করার কথাও ভাবছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী জোট করার বিষয়ে এখনো আশাবাদী। বেশ কয়েকটি দলের নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর থেকেই দেশে নির্বাচনের পালে হাওয়া লেগেছে। ভোটে নামার আগে সব ইসলামি দল নিয়ে একটি বৃহৎ ঐক্য করতে চাইছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা এক ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ বিষয়ে ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ দলই জামায়াতের সঙ্গে জোট না করার বিষয়ে আগ্রহী।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রক্রিয়ায় সব ইসলামি দল যে জামায়াতের সঙ্গে থাকছে না, সেটা ইতোমধ্যে প্রায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। জামায়াতের সঙ্গে দেশের সব শ্রেণির মানুষের পূর্ণ সমর্থন আছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সব ইসলামি দল নিয়ে এক বৃহৎ জোটের জন্য আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে আলেম-ওলামা ও ইসলামি রাজনীতিকদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন যত কাছে আসবে, আমাদের এ প্রক্রিয়া তত দৃশ্যমান ও সুসংগঠিত হবে।

অনেক ইসলামি দল জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে চাচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। আরও সময় গেলে আশা করি একটি শক্তিশালী ঐক্য বা সমঝোতা দেখতে পারবেন। আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো মিলে কমপক্ষে এক বাক্স নীতিতে সমঝোতায় আসতেই হবে বলে তিনি আশা করেন।

এ প্রসঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দীর সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনাই আমি দেখি না। এখন পর্যন্ত দল আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দলটির নেতারা জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে জোট করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে জানান, ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রথম থেকে থাকলেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না তার দল। তিনি বলেন, নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে আমরা এখনো তেমন কিছু ভাবছি না। ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে আমাদের একাধিক বৈঠক ও কথাবার্তা হয়েছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার বিষয়ে এখনো কোনো অফিশিয়াল আলোচনা আমরা করিনি। জামায়াত এবং আমাদের চিন্তার পার্থক্যটা বিরাট। মাওলানা মওদুদি সাহেবের যে চিন্তাধারা, তার সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের চিন্তাধারার পার্থক্য রয়েছে। সেটাই মূল পার্থক্য। এছাড়া জামায়াতের সঙ্গে আমাদের বৃহত্তর ইসলামিক উম্মাহর চিন্তার জায়গায় পার্থক্য তো আছেই। এসব পার্থক্যের কারণে এখনো মূলধারার আলেমসমাজ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেননি।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, মাঠপর্যায়ে জামায়াতের ব্যাপারে আলেমদের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোট সব সময় আলেমদের নিয়েই চলে। আলেমদের মতামতের বাইরে আমরা যাব না। তাছাড়া জোটগত নির্বাচনের বিষয়ে আমরা দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী যুগান্তরকে জানান, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও জোট ও ভোট নিয়ে তারা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে রয়েছেন। এ লক্ষ্যে তারা একাধিকবার কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন ইসলামি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। তারা ইসলামপন্থিদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চেষ্টা চালচ্ছেন। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে কারও আগ্রহ নেই।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আমারা সব সময় ইসলামি শক্তির ঐক্য চাই। তবে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে এখনো আমাদের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেই। দেশের শীর্ষ আলেমদের তত্ত্বাবধানে আমরা সংগঠন পরিচালনা করি, তাদের মতামতের বাইরে গিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমরা জোটে যাচ্ছি, এ কথা বলেতে চাই না। তবে আমরা ইসলামি শক্তির ঐক্য চাই। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যারা একসঙ্গে ছিলাম, সবাই মিলে দেশ গড়তে চাই। বিরোধী শক্তির একটি মজবুত প্ল্যাটফর্ম থাকলে রাজনীতিতে ভারসম্য আসবে। দলের অন্য এক নেতা জানান, দলটি বিএনপির সাবেক জোটসঙ্গী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে মিলে নির্বাচন করতে পারে বলে আলোচনা আছে।

অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের ব্যাপারে বেশ সক্রিয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অতীতের বৈরিতা ভুলে দল দুটির মধ্যে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পিআর ইস্যুতে দল দুটিকে অভিন্ন সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। এটা ঐক্যপ্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে কারও কারও ধারণা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সব সময় ঐক্যের পক্ষে। ঐক্যের জন্য আমরা যে কোনো ছাড় দিতে সব সময় প্রস্তুত। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার যে আলোচনা বাজারে চলছে, আসলে বাস্তবতা হলো-এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের অফিশিয়াল কোনো বৈঠক হয়নি। আমরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক বাক্স নীতি নিয়ে কাজ করছি এবং তা চলমান। ইসলামপন্থির বাইরেও ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)-এর মহাসচিব ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমরা ভোটের সঙ্গী হব না। ইসলাম এবং দেশের কল্যাণেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। এ দুই শক্তির ঐক্য থাকলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১০টি। এর বাইরেও কয়েকটি অনিবন্ধিত ছোট দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। অতীতে একাধিকবার এ দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নতুন বাস্তবতায় আবারও ইসলামি দলগুলোর ঐক্যচেষ্টার আলোচনা সামনে এসেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়