পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চার দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন বুধবার (২০ আগস্ট)। এ সফর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের ১৫ বছরের অনেক বন্ধ দুয়ারগুলো খুলবে। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে চাঙা করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২১-২৪ আগস্ট ঢাকা সফরে থাকবেন। এসময় দু-দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। একাধিক বৈঠক হবে এদেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে। এছাড়াও জাম কামাল খান চট্টগ্রাম বন্দর, একটি ওষুধ ও ইস্পাত শিল্প-কারখানা ঘুরে দেখবেন।
১৯৭১ সালের পরে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে এগিয়েছে দুই দেশের সম্পর্ক। ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক ছিল বেশ নাজুক। তবে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের নানা পর্যায়ের সম্পর্ক বাড়াতে সক্রিয় হয় পাকিস্তান। এরপর জাম কামালের এ সফর বাণিজ্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে বাংলাদেশ।
সফরসূচিতে যা আছে
বুধবার (২০ আগম্ট) রাত সাড়ে ১১টায় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় নামবেন জাম কামাল খান। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সফরের প্রথম দিন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য, শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তার। একই দিনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ও তার দল।
পরের দিন শুক্রবার যাবেন চট্টগ্রাম বন্দরে। পরিদর্শন শেষে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এরপর তিনি চট্টগ্রামের বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল নামের ইস্পাত শিল্প-কারখানা পরিদর্শন করবেন। শনিবার যাবেন টাঙ্গাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালের ফ্যাক্টরিতে।
শেষ দিন রোববার আবারও বসবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য সচিব, পাট ও বস্ত্র সচিব, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। একই দিনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন জাম কামাল খান। দেখা করবেন পররাষ্ট্র উদেষ্টার সঙ্গেও।
হবে চার সমঝোতা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জাম কামালের এ সফরে বাণিজ্য, তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ চারটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাদা চারটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমওইউ দু-দেশের বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের বাণিজ্যমন্ত্রীর একটি সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে আমরা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা করবো। দুই দেশের আগ্রহের যে পণ্যগুলো থাকবে, সেগুলোর আমদানি-রপ্তানি সহজ করতে এমওইউ হবে।’
দুই দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে প্রাধান্য
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনাগুলো সাতটি খাত সামনে রেখে চলতে পারে। এর মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্য, ওষুধ, ইস্পাত, পাট ও পাটজাত পণ্য, পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং সেবা খাতের বিষগুলো আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে।
দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে কীভাবে এ খাতগুলোতে এক দেশ আরেক দেশের পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সেসব বিষয় উঠে আসবে আলোচনায়। এসব বিষয়েই হবে এমওইউ।
সূত্র জানায়, পাকিস্তান সুতা (কটন ইয়ার্ন, ফেব্রিক) রপ্তানি করে, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে পাকিস্তানে তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা তুলবে বাংলাদেশ। এছাড়া পাকিস্তান চাল, গম, ফল এবং শুকনো খাবার (খেজুর, বাদাম) রপ্তানি করে, যা বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চান ওই দেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে মিঠা পানির মাছ, চিংড়ি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানিতে।
এছাড়া বাংলাদেশের ওষুধ পাকিস্তানের বাজারে রপ্তানির বড় সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ। দেশটিতে যাতে বাংলাদেশের ওষুধ সাশ্রয়ী এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা তুলবে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানে পাটের চাহিদা চাহিদা (বস্তা, কার্পেট ব্যাকিং) থাকলেও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি রপ্তানি সীমিত। বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়লে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য (জুতা, ব্যাগ) পাকিস্তানের বাজারে বিক্রির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইস্পাত খাতের পণ্য রপ্তানি, সফটওয়্যার পণ্য, আইটি এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতে বাংলাদেশের দক্ষতা পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা এখন কেমন?
ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সবশেষ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তানে চার কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ৬২ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বাংলাদেশে ১৮ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা খুবই সামান্য। বিনিয়োগগুলো রয়েছে মূলত ব্যাংক, টেক্সটাইল ও ওয়ারিং, ট্রেডিং, কনস্ট্রাকশন, ওষুধ এবং অন্য খাতে। উৎস: জাগোনিউজ২৪