সরকারি চাকরিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা কাটছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের মধ্যে যাঁরা ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল চালুর আগে একটি টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়েছিলেন, তাঁদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে এখন আর আইনি বাধা নেই।
এ-সংক্রান্ত আপিল বিভাগের ১৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, এখন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই রায়ের সুবিধা পাবেন।
উল্লেখ্য, এখন নির্ধারিত সময় হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি হয় না। এ জন্য ২০১৫ সাল পর্যন্ত পদোন্নতির নির্ধারিত সময় থেকে আর্থিক সুবিধা হিসেবে সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার বিধান ছিল। আবার চাকরির একটি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টাইম স্কেল দেওয়ার বিধানও ছিল। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী এসব সুযোগ বন্ধ করা হয়েছিল।
সব পর্যায়ের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত চাকরিজীবীর জন্য বেতনকাঠামো-সংক্রান্ত আদেশ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। এটি জাতীয় পে-স্কেল ২০১৫ নামে পরিচিত। এরপর আবার স্পষ্টীকরণ বিষয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পরিপত্র জারি করা হয়।
প্রায় ৯ বছর আগে জারি করা স্পষ্টীকরণ-সংক্রান্ত ওই পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) বা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকলে, তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না। পরে এ বিষয়ে পৃথক রিট হয়। এর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে পুরো পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। আপিল ও লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে গত ৩০ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় সংশোধন করে রায় দেন। আপিল বিভাগের এই রায় প্রকাশিত হলো।
পূর্ণাঙ্গ রায় দেখেছেন জানিয়ে রিট আবেদনকারীদের অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পরিপত্রটি পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করা হলেও আপিল বিভাগ তা সংশোধন করে পরিপত্রের শুধু ‘প্যারা-গ’ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন। এর ফলে ২০১৫ সালের আগে যাঁরা একটি মাত্র টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ায় আইনি কোনো বাধা এখন আর নেই। তবে ২০১৫ সালের জাতীয় পে-স্কেলের উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতাসংক্রান্ত প্যারা-৭ যেমন আছে, ঠিক তেমনই থাকে যাবে। উৎস: প্রথম আলো।