শিরোনাম
◈ মৃ'ত ঘোষণার পরও জীবিত ফিরলেন যারা (ভিডিও) ◈ আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটব‌লে ৪১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান নেইমারকে দেখতে চান না ◈ নতুন আগ্রাসন হলে আরও ধ্বংসাত্মক ও ভিন্ন মাত্রায় প্রতিশোধ নেবে ইরান ◈ প্রথম শতরান স্মৃতির, ওপেনিং জুটির বিশ্বরেকর্ড, ইংল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারালো ভারত ◈  ইসরাইল থেকে পাওয়া নথিতে সংবেদনশীল তথ্য ◈ আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে ভিন্ন এক ইরান দেখতে পাবেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ◈ মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারী প্রবাসীদের জন্য বড় সুখবর দিল সৌদি সরকার ◈ ক্রিকেট বো‌র্ডের নির্বাচন যথা সময়েই হবে, বল‌লেন আসিফ মাহমুদ ◈ সৌ‌দি আর‌বের টি-‌টো‌য়ে‌ন্টি লি‌গের বিশাল আ‌য়োজ‌নের কথা শু‌নে গাত্রদাহ ভারত ও ইংল‌্যান্ডের ◈ দ‌লের বা‌জে পারফর‌মেন্স আর শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার বিষয়ে বিসিবি হতাশ

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ০৪:০৯ সকাল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ০৮:৩৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্র

‘মেড ইন চিটাগং’-এর গানের প্রতিক্রিয়ায় সরব সোশ্যাল মিডিয়া

অনুজ দেব, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কমেডি ধাঁচে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মেড ইন চিটাগং’ আগামী ১৮ নভেম্বর শুক্রবার নগরীর সুগন্ধা সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে। ইমরাউল রাফাত-এর পরিচালনায় এর শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন চিত্রলেখা গুহ, পার্থ বড়–য়া, সাজু খাদেম, মুকিত জাকারিয়া, অপর্ণা ঘোষ, নাছির উদ্দিন খান, হিন্দোল রায়, প্রিয়া মৌলি প্রমুখ। ছবিটির ‘পেট পুড়েদ্দে তোঁয়ার লাই’ শিরোনামের একটি গান ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের কারণে ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।

আমানউল্লাহ গায়েনের কথা ও সুর করা এবং বুলবুল আকতারের গাওয়া ‘ও কালা (হালা) চান গলার মালা’ শিরোনামের নব্বই দশকের জনপ্রিয় এ গানটি ‘মেইড ইন চিটাগং’ ছবিতে নতুন করে গেয়েছেন কন্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়া ও নিশিতা বড়ুয়া। গানটির ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর প্রশংসার পাশাপাশি গানটির কথা ও সুর বিকৃত করার অভিযোগও করেছেন অনেকে। 

গানের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য তুলে ধরে নেতিবাচক-ইতিবাচক মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সরগরম। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত বলে চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়াটা বেশি। নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে গানটি শেয়ার করে এটি শোনা ও ছবি দেখার আহবান জানিয়ে কণ্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়া লিখেছেন, আপনারও কি কখনো কারো জন্যে পেট পুড়ে? কলিজা জ্বলে কারো কথা ভেবে? তাহলে ‘পেট ফুরেদ্দে তোঁয়ার লাই’ গানটি আপনার জন্যই। 

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘পেট ফুরেদ্দে তোঁয়ার লাই’ গানটি শুনুন আর মেতে উঠুন গানের তালে তালে। আর ১৮ই নভেম্বর চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা হলে দেখতে ভুলবেন না চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মেইড ইন চিটাগং’। পার্থ বড়–য়া তাঁর শেয়ার করা পোস্টের কমেন্টে গানের অনুমতি নেওয়া, কথা ও সুরের বিষয়ে প্রথমদিকে কয়েকজনের প্রশ্নের উত্তর দিলেও পরবর্তীতে এগুলো পেইজ থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে।

তাঁর শেয়ার করা পেইজের  নিচের কমেন্টের অংশে সাংবাদিক আবুল হাসনাত লিখেছেন, পেট পুরে, এতল্যাই আরা এইল্য নগরী। ডা. সৈকত বড়ুয়া মুন্না লিখেছেন, গানটি রেকর্ড হয় খুব সম্ভবত আশি কিংবা ৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। মূল গানটিতে যেভাবে কথা ও সুরের সাথে গানটির মূল ভাব উঠে এসেছে, খুব দুঃখের বিষয় এখানে তার বিন্দুমাত্র উপস্থিতি নেই। এটি মূলত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত বিরহ প্রেমের গান। 

এদিক আক্ষেপ করে ফেসবুক পেইজে কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল লিখেছেন, গানটির সহজ অথচ হৃদয়গ্রাহী কথা ও সুরে বিমোহিত হয়েছিলাম। সকালে দেখলাম একটি চলচ্চিত্রে বেশ নর্দন-কুর্দনের সঙ্গে গানটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মনে পড়ল বেশ আগে সিনেমার খপ্পরে পড়ে লালনের ‘মিলন হবে কতদিনে’ গানটির কী দশা হয়েছিল। চট্টগ্রাম মঞ্চ শিল্পী সংস্থার সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বেতার টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কন্ঠশিল্পী আলাউদ্দিন তাহের লিখেন, গানটা কক্সবাজারের শিল্পী আমান উল্লাহর লিখা ও সুর করা। একজনের সুন্দর সৃষ্টিকে আমাদের গুণীজনরা এভাবে বিকৃত করা কখনো কাম্য নয়।

খুবই দুঃখজনক। হয়তো কক্সবাজারের নামহীন একজন আমান উল্লাহ’র সৃষ্টি বলে সম্ভব হয়েছে। সিনেমায় গানটাকে বিকৃত সুর কথা পরিবর্তন করে নষ্ট করে ফেলেছে। আমাদের দেশের গুণীরা যদি এ কাজ করে তাহলে সাধারণ শিল্পীরা কী শিখবে। একটা অন্তরা উনাদের নিজের লিখা। বিরহের গানকে এভাবে লাফালাফির গান করা হাস্যকর। মূল শিল্পী বুলবুল আক্তারের গানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাংবাদিক মহসীন কাজী লিখেন, কি আবেগ এই গানে, টানে টানে হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

কন্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী লিখেন, এই গানটা আরো ২০ বছর আগে এটিএন বাংলার আলিঙ্গন অ্যালবামে ছিল। আমানুল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এটা অডিও অ্যালবামের জন্য প্রথম রেকর্ড করেছিলাম আমি। কম্পোজিশন করেছিল টিংকু আজিজ। এই গানটা আমান উল্লাহ সহ আমি আরো কিছু কথা নিজে থেকে লিখেছিলাম ছন্দ মিল করার জন্য। 

আমার কম্পোজিশনটা হুবহু নকল করেছে। এসব নিয়ে কেউ কথা বলে না। সব সময় এ জিনিসগুলো হচ্ছে। সাংবাদিক ও বাচিকশিল্পী অনুপম পার্থ ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, আমানউল্লাহ গায়েন রচিত এবং বুলবুল আকতারের গাওয়া ‘ও কালা (হালা) চান গলার মালা’ গানটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন পার্থ বড়ুয়া এবং নিশীথা বড়ুয়া গং...।

একটা অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী গানকে নাচন-কুর্দন সহযোগে একটা অর্থব সার্কাসে পরিণত করা হয়েছে। সার্কাসেরও একটা উপজীব্য থাকে। পার্থ বড়ুয়ারা সেই উপজীব্যের পশ্চাৎ দেশে ঠেসে দিয়েছেন আনন্দ, ডিসকো ড্যান্স...! আচ্ছা সিনেমার জন্য আপনারা নতুন গান লিখতে পারেন না...? প্রান্তিক গানগুলোর বারোটা বাজাতে হবে কেন...? 

গীতিকবি আবসার উদ্দিন অলি লিখেছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জনপ্রিয় গানকে যেন তেন করে গেয়েছেন যা দুঃখজনক। সাংবাদিক জিগারুল ইসলাম জিগার লিখেন, নব্বই দশকের সাড়া জাগানো শিল্পী বুলবুল আক্তারের গাওয়া এই গানটি আজ মারাত্মকভাবে বিকৃত। আঞ্চলিক গানের রিয়েল ভার্সন এভাবে বিকৃত হতে থাকলে নিজেদের ভাষায় গান গাওয়া, লিখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে আঞ্চলিক গানের শিল্পীরা।

সাংবাদিক আবু মোশাররফ রাসেল লিখেন, প্রতিভা চুরি ও একটি অসাধারণ গানের সুর বিকৃতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। গানটির প্রশংসা করে কন্ঠশিল্পী রন্টি দাশ লিখেন, আমি গানটা শুনে ফিদা হয়ে গেছি, আর দাদা সিনেমা করেছে তাও আবার চট্টগ্রামের ভাষায়, তার উপর দাদার সুপার ড্যান্স, হ্যা কিছু দৃশ্য সিমিলার টাইপ হইতেই পারে।

লেখক রোকসানা বন্যা লিখেন, ‘মাইট্টা গুদাম টইনুরছানি ঝরঝরাইয়া পরের পানি, আই ভিজিলে যেমন তেমন তুই ভিজিলে পরান ফাঢী যায় ও কালাচান’- এমন হৃদয়কাড়া আনচান করা গানে কীভাবে নাচের দৃশ্য হলো ভাবতেই পারছি না। 

মূল শিল্পী বুলবুল আক্তারের গানের ভিডিও পোষ্ট করে সাংবাদিক অভ্র ম. মোরশেদ লিখেন, অরিজিনাল ‘অ হালা চান গলার মালা’ গানটি শুনেন। চট্টগ্রামের গানকে ধর্ষণ করা হয়েছে রিমিক্সের নামে। বোরকা পরিহিত বুলবুল আক্তার চট্টগ্রামের গাওগেরামের মেয়ে। তাঁর অসাধারণ ও দরদমাখা গানটিতে যে ভালবাসা ও আবেগ বিদ্যমান তার ছিটেফোঁটাও নাই এবড়োথেবড়ো নাচ সম্বলিত ভিডিওটিতে। জাস্ট নিন্দা জানাই। 

পার্থ বড়ুয়া, নিশিতা বড়ুয়া ও অপর্ণারা চট্টগ্রামের ভাষা ধর্ষণ করেছেনই। কবি শাহীন মাহমুদ লিখেন, এটি একটি বিরহের গান। এ গান যিনি প্রথম গেয়েছেন বুলবুল আকতার ওনার গানটি শুনুন (নেটে পাবেন) কি গান কি সুর ছিলো আর ওনারা কি বানালো। কন্ঠশিল্পী আহসান হাবিবুল আলম লিখেছেন, আমার মনে হয়েছে ‘ও কালাচান’ গানটি মনের গভীরে থাকা কষ্টের প্রকাশ। বর্তমানে রিমিক্সের নামে গানটিতে যা করা হয়েছে সেখানে গানের কথা ও সুরের চিন্তার জায়গাটিকে অস্বীকার করা হয়েছে।

কবি ও সাংবাদিক হাফিজ রশিদ খান লিখেন, চাটগাঁর গান আর জীবনরসের স্বাদ পেতে বেশিরভাগ অপরাংশ অসমর্থ। চাটগাঁর গানের জীবনবোধ অতি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। উল্লিখিত গানটি তার একটি। আমি বুলবুল আকতার-এর গাওয়া এ গান প্রায়শই তন্ময় হয়ে শুনি।
অধ্যাপক ও বাচিকশিল্পী সুবর্ণা চৌধুরী লিখেন, মূল গানটা শুনেছিলাম গতবছর এই সময়েই। সেই গানের আবেগ এটাতে নেই। পার্থ বড়ুয়ার অনেক গান আমার পছন্দ কিন্তু এই গানে নিশিতার সাথে উনার কণ্ঠের অসামঞ্জস্য পীড়াদায়ক। 

সিনেমার গানটা যে হারে শেয়ার হচ্ছে, দেখে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মনে হচ্ছে চট্টগ্রামের মানুষ এর আগে এমন চাঁটগাইয়া গান শোনেনি! সাংবাদিক ও ছড়াকার আহসান রিটন লিখেন, ভালো গান লেখার হেডম থাইকলে কি আর একটা ভালো গানের বারোটা বাজায়? আর এমন ধামরারে কেউ মডেল বানায়। 

বাচিকশিল্পী সোহেল আনোয়ার লিখেন, এরা সিন্ডিকেটবাজী করতে করতে সময় পায় না। কাকে তুলবে, কাকে নামাবে, কোন নায়ে পা রাখবে কখন এসবই এদের কাজ এখন। গানের পালা সাঙ্গ হয়েছে এদের বহুকাল আগেই, এখন সেই ধার নাই। সিন্ডিকেটবাজী করে খাওয়া আরকি। কন্ঠশিল্পী নিশিতা বড়ুয়ার শেয়ার করা ফেসবুক পেইজে জাহিদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন,  গানটির অরিজিনালিটি নষ্ট করে দিছে। নতুন গানের প্রশংসা করে দিনা বড়ুয়া লিখেন, না হলেও ১০- ১২ বার শোনা শেষ। 

তারপরও মন ভরে না। এত ভালো লাগলো।  তাসলিমা সুমি নামের একজন লিখেছেন, নতুন করে আরেকবার পার্থ দাদার উপর ক্রাশ খেলাম। শৈবাল পাল লিখেছেন, হিরো আলম করলে পঁচা বলা হয়, আর আমরা করলে সৃষ্টিশীল বলা হবে। ‘হৃদয়ে চট্টগ্রাম’ নামের একটি ফেকবুক পেইজে সোহেল রানা লিখেছেন,  হালাচান এইল্লা ধলা কা? পেট ফুরিলে মাইন্সে এরিম্মা নাচানাচি গরে?  কাওসার আজমির লিখেছেন,  ও মারে পেট পুড়ানি লইও গান আছে ন জানিতাম। 

এদিকে ‘মেইড ইন চিটাগং’-এর মুক্তি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুক্রবার (১১ নভেম¦র) রাত সাড়ে এগারটায় এনটিভি’র লাইভ অনুষ্ঠান ‘ রূপকথার রাত’-এ অতিথি ছিলেন কন্ঠশিল্পী পার্থ বড়–য়া ও অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। অনুষ্ঠানে কন্ঠশিল্পী পার্থ বড়–য়া সিনেমায় নতুন রিমিক্স করা গানটি সম্পর্কে বলেন, এটি কক্সবাজারের আমান উল্লাহ সাহেবের অত্যন্ত জনপ্রিয় গান। 

ওইসময়ে এটি একটি বিখ্যাত গান ছিল। পেট পুরেদ্দে এটা আমরা সামনে এনেছি। এটা স্লোয়ার ভার্সানের গান ছিল। সিনেমার জন্য ডিফারেন্ট এরেঞ্জমেন্টের প্রয়োজন। সিনেমায় যখন ইউজ করবো, সিনেমার জন্য এটা করতে হয়। অনেকে বলছে, এটি তো হিন্দি সিনেমার ওই গানটার মতো। আমাকে একজন যখন জিজ্ঞেস করেছে আমি বলেছি।

এখানে আমি টেলিভিশনেও ক্লিয়ার করতে চাই। আসলে আমরা তো হিন্দি ছবি দেখেই করতে চেয়েছি। চাটগাইয়া একটা গান যদি হিন্দি ছবির মত লাগে, তাহলে কেমন হয়। আমাদের টার্গেট তো ছিল ওটা, কতটুকু আমরা পেরেছি জানি না। 

যেহেতু এন্টারটেইনমেন্ট, সিনেমা মানেই তো একটা ফ্যান্টাসি। এভাবেই আমরা করতে চেয়েছি। সিনেমা তো বাস্তব কোনো ঘটনা না।

এএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়