যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশে পশ্চিমা বিশ্ব এবং ইরানের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি বা ব্যর্থতার তথ্য গোপন করে সম্মান রক্ষার চেষ্টা করে, সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটে ইরান। দেশের জন্য জীবন দেওয়াকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে স্মরণ করে দেশটি, যা আরও একবার প্রমাণিত হলো ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। তবে এবারের শোকানুষ্ঠানে ছিল বড় এক চমক—ইসরায়েলের ‘মৃত’ দাবি করা শীর্ষ দুই ইরানি সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে দেখা গেছে শোকর্যালিতে অংশ নিতে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হয় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের স্মরণে এক বিশাল জানাজা ও শোকর্যালি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ার থেকে শুরু হওয়া এই শোকমিছিল ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আজাদী স্কয়ারে পৌঁছায়। এতে অংশ নেয় লাখো মানুষ।
ইসরায়েলের হামলায় জীবন উৎসর্গকারী ৬০ জন পরমাণু বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও বেসামরিক নাগরিকের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানায় ইরানিরা। শুধু তেহরান নয়, পুরো ইরানজুড়েই একই রকম শোকর্যালি ও জানাজার আয়োজন করা হয়। শহীদদের পরিবার-পরিজন ও স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলেও, তাদের মধ্যে কোনো ভয় বা হতাশার ছাপ ছিল না। দেশের জন্য আত্মত্যাগকে ইরানিরা সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার বিষয় হিসেবেই দেখে।
এই শোকর্যালিতে উপস্থিত ছিলেন ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য।
শোকর্যালিতে হঠাৎই দেখা মেলে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কায়ানি এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলী শামখানিকে। অথচ ইসরায়েলি গণমাধ্যম কিছুদিন ধরেই দাবি করে আসছিল যে, তাদের হামলায় এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
‘মৃত’ ঘোষিত এই দুই কর্মকর্তাকে শোকর্যালিতে সশরীরে হাঁটতে দেখে উপস্থিত জনতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। ইসমাইল কায়ানিকে তেহরানে শহীদদের জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়। অন্যদিকে, আলী শামখানি, যিনি ইসরায়েলের অন্যতম 'মোস্ট ওয়ান্টেড' ব্যক্তি, তাঁকেও দেখা যায় শোকমিছিলে। আইআরজিসি সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ইসরায়েলি হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন এবং র্যালিতে তাঁকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছিল।
ইসরায়েলি প্রচারণার বিপরীতে নিজেদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সশরীরে উপস্থিতি ইরানের জন্য ছিল এক বিশাল মনস্তাত্ত্বিক বিজয়। এটি একদিকে যেমন ইসরায়েলি দাবির অসারতা প্রমাণ করেছে, তেমনি শহীদদের জন্য শোকাহত ইরানিদের মধ্যে নতুন করে শক্তি ও প্রেরণার সঞ্চার করেছে।