ব্যাপক সাড়া ও আবেদন প্রক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার এই বিশেষ ভিসা প্রাথমিকভাবে শুধু টুভালুর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গত ১৬ জুন আবেদন গ্রহণের জন্য অনলাইন পোর্টাল খোলা হয় এবং এ বছরের ১৮ জুলাই পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়া যাবে। এরই মধ্যে আবেদনের যে ঢল নেমেছে, তাতে প্রোগ্রামটির বিপুল জনপ্রিয়তা স্পষ্ট।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র বিভাগ জানিয়েছে, ২৭ জুন পর্যন্ত মোট ১,১২৪টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটি আবেদনে পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকায় আবেদনকারী মানুষের প্রকৃত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,০৫২ জনে। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে, টুভালুর মোট জনসংখ্যা ১০,৬৪৩ জন। অর্থাৎ, দেশের জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ উন্নত জীবনের আশায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে আগ্রহী।
তবে আবেদন করলেই ভিসা নিশ্চিত নয়। প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মাত্র ২৮০ জনকে ভিসা প্রদান করা হবে।
কেন এই উদ্যোগ?
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র বিভাগ এই ভিসা প্রোগ্রামকে জলবায়ু-সম্পর্কিত স্থানচ্যুতির হুমকির বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র টুভালু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র পাঁচ মিটার (১৬ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছে।
ভিসাধারীদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা
এই ভিসার আনুষ্ঠানিক নাম ‘প্যাসিফিক এনগেজমেন্ট ভিসা’। এই ভিসাধারীরা অস্ট্রেলিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের অনুমতি পাবেন। তারা দেশটিতে এবং দেশের বাইরে অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ভিসার আওতায় অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পর নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা মেডিকেয়ারে প্রবেশাধিকার।
শিশুদের জন্য চাইল্ড কেয়ার ভর্তুকি।
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের মতো একই খরচে স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ।
আবেদন খরচও রাখা হয়েছে নামমাত্র। ২০২৫ সালের আবেদনকারীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তির পর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২৫ অস্ট্রেলীয় ডলার।
ফ্যালেপিলি ইউনিয়ন চুক্তি
এই ভিসাটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে ঘোষিত ‘অস্ট্রেলিয়া-টুভালু ফ্যালেপিলি ইউনিয়ন’ চুক্তির একটি অংশ। এই চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়া শুধু ভিসাই দিচ্ছে না, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনস্বাস্থ্য সংকট এবং সামরিক আগ্রাসনের মতো পরিস্থিতিতে টুভালুকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
টুভালুর প্রধানমন্ত্রী ফেলেতি তেও গত বছর এ প্রসঙ্গে বলেন, "প্রথমবারের মতো একটি দেশ (অস্ট্রেলিয়া) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ভয়াবহ প্রভাব সত্ত্বেও টুভালুর ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় পরিচয় এবং সার্বভৌমত্বকে আইনিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।"
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও লিঙ্ক:
অস্ট্রেলিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের (Department of Home Affairs) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘প্যাসিফিক এনগেজমেন্ট ভিসা’ (সাবক্লাস ১৯২) সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। আবেদন প্রক্রিয়া এবং যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ভিজিট করুন:
https://immi.homeaffairs.gov.au/visas/getting-a-visa/visa-listing/pacific-engagement-visa-192
সূত্র: বিবিসি (BBC)