ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ওয়ার্ল্ড: ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডের ইউরোপের সেরা গন্তব্যের শিরোপা জিতেছে পর্তুগাল। গত বছর এই তালিকায় সেরা দেশ হিসেবে গ্রিস সম্মাননা পেলেও আবার আবারও শিরোপা এসেছে পর্তুগালের কাছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পর্তুগাল মোট ছয়বার জিতেছে। এটি ছিল পুরস্কারের ৩২তম সংস্করণ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি ইতালির সার্ডিনিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর পর্তুগাল মোট ১২টি ইউরোপীয় অঞ্চলের মনোনীতদের পরাজিত করেছে। যার মধ্যে ছিল অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক। পর্যটন, বাণিজ্য ও পরিষেবা বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি পেড্রো মাচাদো এই সম্মানকে ‘পর্যটনকে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত করা সব পেশাদারি কাজ, উৎসর্গ এবং গুণমানের প্রতিফলন’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, ট্যুরিজম দে পর্তুগালের সভাপতি কার্লোস আবাদ মন্তব্য করেন, এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে ‘ইউরোপের সেরা পর্যটন গন্তব্যগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পর্তুগালের দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে’। এটি দেশের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফসল।
পর্তুগালের আইকনিক গন্তব্য
পুরো দেশের পাশাপাশি পর্তুগালের একাধিক অঞ্চলও ২০২৫ সালের বিশ্ব ভ্রমণ পুরস্কারে স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা দেশটির পর্যটন মানকে আরও দৃঢ় করেছে। যেমন—ইউরোপের সেরা দ্বীপ গন্তব্য হয়েছে মাদেইরা। মহাদেশের সেরা শহুরে গন্তব্য পোর্তো। শহর বিরতির জন্য সেরা স্থান হয়েছে লিসবন।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি:
হিউস্কা লা ম্যাজিয়া (স্পেন): অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের জন্য সেরা গন্তব্য হিসেবে আজোরসকে পেছনে ফেলেছে।
কোস্টা কারোনারিনো (গ্রিস: মহাদেশের বিচ হলিডেজের জন্য সেরা স্থান হিসেবে মনোনীত হয়।
বাতুমি (জর্জিয়া): বছরের ‘সব ঋতুর জন্য সেরা গন্তব্য’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ডুব্রোভনিক (ক্রোয়েশিয়া): টানা তৃতীয়বারের মতো ‘শীর্ষস্থানীয় ক্রুজ গন্তব্য’ হিসেবে নাম কুড়িয়েছে।
পর্তুগালের পর্যটন শক্তির মূল দিকগুলো
২০২৫ সালের এই স্বীকৃতি পর্তুগালের পর্যটন শিল্পের অবিচল প্রচেষ্টা এবং পেশাদারির সাক্ষ্য বহন করে। দেশটি ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের এক চমৎকার মিশ্রণ ঘটিয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে এটিকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পর্তুগালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলোর প্রাচুর্য রয়েছে। যেমন—লিসবনের বেলেম টাওয়ার এবং ঐতিহাসিক পোর্তো শহর; যা ইতিহাসপ্রেমীদের আকর্ষণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকেও এগিয়ে আছে দেশটি। আলগারভের সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে উত্তরের ডুরো ভ্যালি পর্যন্ত, পর্তুগাল বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রদান করে। মাদেইরার মতো দ্বীপগুলো অ্যাডভেঞ্চার এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য। পর্তুগিজ খাবার বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষত, বাখালহাও (শুকনো লবণযুক্ত কডফিশ) এবং পাস্তেইস দে নাতা (কাস্টার্ড টার্ট) খাদ্যরসিকদের আকৃষ্ট করে।
লিসবন, পোর্তো ও মাদেইরার বিশেষত্ব
মাদেইরা: সেরা দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দ্বিপটি। তার সুন্দর পর্বতমালা, উষ্ণ জলবায়ু এবং বিদেশি বাগানগুলোর জন্য বিখ্যাত। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য সারা বছরের গন্তব্য।
পোর্তো: এটি সেরা শহুরে গন্তব্য। যা ঐতিহাসিক রিবেইরা জেলা, বিখ্যাত ওয়াইন সেলার এবং ডুরো ভ্যালির নৈকট্যের কারণে পোর্তো উত্তর পর্তুগালের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
লিসবন: ঐতিহাসিক ট্রাম, আলফামার মতো প্রাণবন্ত পাড়া এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার মিশ্রণে লিসবন শহরের বিরতির জন্য একটি গতিশীল ও খাঁটি অভিজ্ঞতা দেয়।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি: টেকসই পর্যটন
পর্তুগালের এই সাফল্য টেকসই পর্যটনের প্রতি দেশটির অঙ্গীকারকেও তুলে ধরে। দেশটি পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল ভ্রমণ বিকল্পগুলোতে মনোনিবেশ করছে, যাতে পর্যটন বৃদ্ধি হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষিত থাকে। পর্তুগালের এই ধারাবাহিক সাফল্য প্রমাণ করে যে সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধুনিকতাকে সঠিকভাবে মিশিয়ে কীভাবে একটি গন্তব্য বিশ্বমানের আকর্ষণ তৈরি করতে পারে। অনুবাদ: আজকের পত্রিকা