শিরোনাম
◈ ধামরাইয়ে বিশেষ অভিযানে ৩১লাখ টাকার হেরোইন সহ গ্রেপ্তার ৩।  ◈ হ্যান্ডশেক বিতর্কে ৪৮ ঘণ্টা পর পাকিস্তানের অভিযোগ উড়িয়ে কড়া জবাব দি‌লো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ◈ বিশ্বকাপ বাছাই‌য়ে ইসরায়েলের বিরু‌দ্ধে ম্যাচের টিকিট বিক্রির টাকা ফিলিস্তিনে দান করবে নরওয়ে ◈ জাতিসংঘের এলডিসি উত্তরণের পথে বাংলাদেশ, সতর্ক থাকবার বার্তা তারেক রহমানের ◈ নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা আমরা সমর্থন করি না: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ গণআন্দোলন রুখতে কড়া প্রস্তুতি: গবেষণায় নামছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানিতে নতুন উদ্যোগ: ‘জাপান ডেস্ক’ চালু, ভাষা প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা ◈ চূড়ান্তভাবে একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক ◈ ফরিদপুরে আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে অসন্তোষ, যা বলছেন ইসি সচিব ◈ পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে যে কারণে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ দুপুর
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ট্যুরিস্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে যা যা করতে পারবেন, আবেদন করবেন যেভাবে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক শহর, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ভ্রমণের অফুরন্ত সুযোগের কারণে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে শুরু করে সুবিশাল আউটব্যাক এবং সিডনি ও মেলবোর্নের মতো কসমোপলিটন শহর—সবকিছুই এই দেশকে পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান করে তুলেছে। এর নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং ভ্রমণ-বান্ধব পরিবেশ একে বিদেশে ছুটি, পারিবারিক ভ্রমণ বা ক্রুজ ভ্যাকেশনের জন্য একটি শীর্ষ পছন্দ করে তুলেছে।

বাংলাদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া ট্যুরিস্ট ভিসার (সাবক্লাস ৬০০) আবেদন প্রক্রিয়ার একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা দেওয়া হলো।

ভিসার ধরন: ভিজিটর ভিসা (সাবক্লাস ৬০০) ট্যুরিস্ট স্ট্রিম

এই ভিসাটি পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা আপনাকে অস্ট্রেলিয়ায় পর্যটন, পারিবারিক পরিদর্শন বা ক্রুজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়। এই ভিসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্বল্প সময়ের জন্য ভ্রমণ। আবেদন করার সময়, আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি শুধুমাত্র পর্যটন বা পারিবারিক কারণে দেশটিতে যেতে চান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের কোনো ইচ্ছা নেই। ভিসা চলাকালীন আপনি কোনো ধরনের বেতনভুক্ত কাজ করতে পারবেন না।

ভিসার মেয়াদ: ১২ মাস পর্যন্ত।

খরচ: প্রতি আবেদনকারীর জন্য আনুমানিক ২০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ১৬ হাজার ২২৪ টাকা)। এই খরচ শুধু ভিসা আবেদনের মূল ফি, যা বিভিন্ন পেমেন্ট পদ্ধতি বা অতিরিক্ত সেবার কারণে পরিবর্তিত হতে পারে।

এই ভিসার মাধ্যমে আপনি যা করতে পারবেন:

  • পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা।
  • ব্যবসা বা চিকিৎসার উদ্দেশ্য ব্যতীত পর্যটন, ক্রুজ বা অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণে ভ্রমণ করা।

যোগ্যতার মানদণ্ড

ভিসা অনুমোদনের জন্য আবেদনকারীকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে:

স্বাস্থ্যগত যোগ্যতা: আপনাকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার কঠোর স্বাস্থ্য মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে এবং রক্ত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা অবস্থানের সময়কাল এবং আপনার চিকিৎসার ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে।

চরিত্রগত যোগ্যতা: আপনার যদি অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো দেশে কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড থাকে, তাহলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।

আর্থিক সচ্ছলতা: অস্ট্রেলিয়ায় আপনার অবস্থানকালে নিজের খরচ মেটানোর জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত তহবিল বা অর্থের উৎস আছে তা প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্যালারি স্লিপ বা স্পনসরের আর্থিক প্রমাণপত্র জমা দেওয়া যেতে পারে।

যথাযথ পর্যটক: আপনাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে আপনি সাময়িকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় থাকছেন এবং ভিসা শর্তাবলি মেনে চলবেন। এটি প্রমাণ করার জন্য আপনার নিজ দেশে শক্তিশালী পারিবারিক, কর্মসংস্থান বা শিক্ষাগত সম্পর্ক থাকা জরুরি।

শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ: ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো আবেদনকারীর জন্য ভিসা মঞ্জুর করা তার সর্বোত্তম স্বার্থে না হলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।

ভিসার শর্তাবলি

ভিসা পাওয়ার পর কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক:

কাজ করার অনুমতি নেই: আপনি অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ধরনের বেতনভুক্ত কাজ করতে পারবেন না।

সীমিত পড়াশোনা: আপনি তিন মাসের বেশি সময় ধরে কোনো কোর্স বা প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন না।

স্বাস্থ্য বিমা: অবস্থানের পুরো সময়ের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য বিমা বজায় রাখতে হবে।

ভিসা পরিবর্তন নয়: আপনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন বেশির ভাগ অন্য ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

সময়মতো প্রস্থান: আপনার ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে হবে।

অতিরিক্ত অবস্থান নয়: ১৮ মাসের মধ্যে ১২ মাসের বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করা যাবে না।

ভিসা ফি এবং প্রসেসিং সময়

আবেদনকারীদের জন্য ভিসা আবেদনের মূল ফি হলো ২০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। তবে, পেমেন্টের পদ্ধতি এবং অতিরিক্ত খরচের কারণে মোট ব্যয় ভিন্ন হতে পারে। প্রসেসিং সময় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যেমন: আবেদনের সংখ্যা, মৌসুম, এবং আপনার জমা দেওয়া নথির সম্পূর্ণতা। সাধারণত:

  • ৭৫ শতাংশ আবেদন ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রসেস হয়।
  • ৯০ শতাংশ আবেদন ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে প্রসেস হয়।
  • অসম্পূর্ণ কাগজপত্র, অতিরিক্ত তথ্যের প্রয়োজন অথবা স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিলম্বের কারণে প্রসেসিংয়ে দেরি হতে পারে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিসা আবেদনকে ‘ডিসিশন-রেডি’ করতে হলে নিম্নলিখিত মূল কাগজপত্রগুলো অবশ্যই জমা দিতে হবে:

পাসপোর্ট ও ছবি: পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্য পৃষ্ঠার একটি স্পষ্ট রঙিন কপি।

ভ্রমণের উদ্দেশ্য: একটি বিস্তারিত ভ্রমণসূচি (Itinerary) যেখানে আপনার ভ্রমণের কারণ, থাকার জায়গা, এবং পরিকল্পিত কার্যক্রম উল্লেখ থাকবে।

আর্থিক প্রমাণ: গত তিন থেকে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্যালারি স্লিপ, অথবা কর্মসংস্থানের চিঠি।

নিজ দেশে সম্পর্কের প্রমাণ: আপনার নিজ দেশে শক্তিশালী সম্পর্কের প্রমাণ যেমন—কর্মক্ষেত্রের ছাড়পত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির সনদ, পারিবারিক সদস্যের জন্মসনদ, বা স্থাবর সম্পত্তির কাগজপত্র।

আমন্ত্রণপত্র: যদি পরিবার বা বন্ধুর কাছে বেড়াতে যান, তবে তাদের কাছ থেকে একটি আমন্ত্রণপত্র এবং তাদের অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র (যেমন, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি)।

আবেদন প্রক্রিয়া

১. আবেদনের আগে: নিশ্চিত করুন যে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ আছে এবং যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করুন। সমস্ত কাগজপত্র ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

২. অনলাইনে আবেদন: ইমিঅ্যাকাউন্ট (ImmiAccount) তৈরি করে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করুন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন।

৩. বায়োমেট্রিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা: অধিকাংশ আবেদনকারীকে আবেদন করার পর ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে (VFS Global) বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ ও ডিজিটাল ছবি) জমা দিতে হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হলে, আপনাকে অনুমোদিত প্যানেল ক্লিনিক থেকে তা সম্পন্ন করতে হবে।

৪. আবেদনের পর: আপনার আবেদন জমা পড়ার পর একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা পাবেন। এরপর যদি কোনো অতিরিক্ত তথ্য চাওয়া হয়, তবে তা দ্রুত সরবরাহ করুন।

৫. ভিসার সিদ্ধান্ত: লিখিতভাবে আপনাকে ভিসা অনুমোদনের বিষয়ে জানানো হবে। ভিসা বাতিল হলে তার কারণ ও আপিলের সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

১৮ বছরের কম বয়সী আবেদনকারীদের আরও নথিপত্র জমা দিতে হবে:

  • পিতামাতার উভয়ের নাম উল্লেখ করে জন্ম সনদ।
  • পিতামাতা বা অভিভাবকের পাসপোর্টের কপি।
  • জৈবিক পিতামাতা না থাকলে অভিভাবকত্বের প্রমাণ।
  • ফর্ম ১২২৯ অথবা একটি আইনগত ঘোষণার মাধ্যমে পিতামাতার সম্মতি।
  • আত্মীয় বা আইনি অভিভাবক ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে থাকলে, মনোনীত ব্যক্তির দ্বারা পূরণ করা ফর্ম ১২৫৭ জমা দিন।

বায়োমেট্রিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা

অধিকাংশ বাংলাদেশি আবেদনকারীকে আবেদন করার পর ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে (VFS Global) বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ ও ডিজিটাল ছবি) জমা দিতে হয়। অবস্থানের সময়কাল, বয়স এবং চিকিৎসার ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও প্রয়োজন হতে পারে।

আবেদন দ্রুত করার জন্য কিছু টিপস

  • আপনার পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্য পৃষ্ঠার একটি স্পষ্ট কপি জমা দিন।
  • আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা (সম্ভব হলে একটি ভ্রমণসূচি) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
  • আপনার নিজ দেশের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের প্রমাণপত্র দিন (যেমন, কর্মক্ষেত্রের ছাড়পত্র, আর্থিক বিবৃতি ইত্যাদি)।
  • অস্ট্রেলিয়া থেকে কোনো আমন্ত্রণপত্র থাকলে তা জমা দিন।
  • যেকোনো ধরনের অসম্পূর্ণ কাগজপত্র বা ত্রুটিপূর্ণ তথ্য ভিসা বাতিল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়