শিরোনাম
◈ কাপাসিয়ার কামারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়: বিনা ছুটিতে আমেরিকা বসে বেতন নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ◈ চীনের বাঁধে ভারতের পানিঝুঁকি, বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা ◈ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে উত্তেজনা প্রশমণে ভারতের লবিং ফার্ম নিয়োগ  ◈ বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কের স্থায়িত্বে প্রয়োজন ক্ষমা প্রার্থনা: বিশেষজ্ঞদের মত ◈ ডেঙ্গুতে আরো ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪১২ ◈ ‌‌‌'আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ন..গ্ন ভিডিও করে রেখে দিতেন তৌহিদ আফ্রিদি' (ভিডিও) ◈ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশের ◈ কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হার্ট অ্যাটাক ◈ বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান প্রাণনাশের শঙ্কায়, চাইলেন নিরাপত্তা ◈ সারাদেশে একযোগে ৫৩ বিচারককে বদলি

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:২০ দুপুর
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফ্ল্যাট কিনে ঠকতে না চাইলে মেনে চলুন ১০ কৌশল!

ছয় বছর আগে রাজধানীর শাহীনবাগে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কিনতে স্বল্প পরিচিত এক আবাসন প্রতিষ্ঠানে বুকিং দেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মাজহার হোসেন। তারপর প্রতি মাসে কিস্তিও পরিশোধ করতে থাকেন। তবে কয়েক মাস যেতেই তিনি লক্ষ করলেন, প্রকল্পের কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী।

মাজহার হোসেন জানালেন, এখন ফ্ল্যাট বুঝে পাইনি। কবে পাব সেটি নিশ্চিত না। ভবনের কাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও অন্যান্য কাজ বাকি। আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক কেবল আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন।

অধিকাংশ মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার নিজেদের স্থায়ী ঠিকানার জন্য একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখে। সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ফ্ল্যাট কিনতে অনেকেই সারা জীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ করেন। তাঁদের কেউ কেউ মাজহার হোসেনর মতো প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়েন। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে।

রাজধানীতে জমির দাম অত্যধিক। নির্মাণসামগ্রীর দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সে জন্য ফ্ল্যাটের দাম অনেক বছর ধরেই আকাশচুম্বী। তবে চাহিদা বেশি থাকায় এই খাতে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক। তাদের অধিকাংশই নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করলেও কিছু প্রতিষ্ঠান সেসবের তোয়াক্কা করছে না। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। অনেকে বুঝে, না বুঝে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। পরে দেখেন, প্রতিষ্ঠানের কথা আর কাজে মিল নেই। তখন বছরের পর বছর ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত ফ্ল্যাট বুঝে পান না। নিজের একটি বাড়ির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।

নিজের ফ্ল্যাটের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন না হয়ে ওঠে, সে জন্য নানা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি জীবনের প্রথম ফ্ল্যাট কেনার চিন্তাভাবনা করেন, তাহলে চুক্তি করার আগে ১০টি কৌশল জেনে নেওয়া উচিত। এগুলো বিবেচনা করে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ঝামেলার মুখে পড়া থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন—

১. সাধ আর সাধ্য

ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনার সাধ আর সাধ্যের মধ্যকার বোঝাপড়া সম্পন্ন করতে হবে। ধরা যাক, আপনার ৮০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট কেনার আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। তবে আপনি সাতপাঁচ না ভেবে গৃহঋণ নিয়ে দুই কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনে ফেললেন। কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে দেখলেন, দৈনন্দিন সংসার চালানো কঠিন। একপর্যায়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ। তখন ফ্ল্যাট বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সে জন্য বাজেট অনুযায়ী ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

রাজধানী ঢাকায় কমবেশি ৬০-৭০ লাখ থেকে শুরু করে ১৫-২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাটও আছে। গুলশান-বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারার মতো এলাকায় অভিজাত ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। আবার বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, মিরপুরসহ কিছুটা পিছিয়ে থাকা এলাকায় প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আবাসন খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট কিনতে গেলে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করে।

অভিজাত এলাকার বাইরে অন্য সব এলাকায় স্থানীয় ছোট কোম্পানির আবাসন প্রকল্প রয়েছে। তাদের ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলক কম। আবার কয়েকজন মিলে জমি কিনে বাড়ি বানাতে পারলে ফ্ল্যাটের দাম কম পড়ে। পুরোনো ফ্ল্যাটের দামও কম। আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে সেটিও বিবেচনা করতে পারেন।

২. প্রয়োজন মিটবে যেখানে

অনেকেই কোথায় ফ্ল্যাট কিনবেন সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে সন্তানের লেখাপড়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই ফ্ল্যাট কেনার এলাকা বাছাই করা দরকার। আপনি যেখানে ফ্ল্যাট কিনতে চান, তার আশপাশে ভালো স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আছে কি না, দেখে নিন। আবার ফ্ল্যাটটি যেখানে, সেখান থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার যোগাযোগব্যবস্থা কেমন, তা-ও বিবেচনা করতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হলে অফিস কিছুটা দূরে হলেও সমস্যা হয় না। তা ছাড়া ফ্ল্যাটের আশপাশের রাস্তাঘাট, বাজারসুবিধা কেমন, সেসবও বিবেচনায় রাখা দরকার।

৩. ভবনের সুযোগ-সুবিধা

আবাসন প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ এখন আর বিলাসিতা নয়, নিত্যদিনের প্রয়োজন। তাই ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, কমিউনিটি স্পেস, বাচ্চাদের খেলার জায়গা, গাড়ি পার্কিং, নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সরবরাহের বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। তবে সবগুলো সুবিধা নিতে গেলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

৪. সঠিক প্রতিষ্ঠান বাছাই

কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনছেন, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ সেই প্রতিষ্ঠান যদি নিয়মকানুন না মেনে ব্যবসা করে, তাহলে আপনি বিপদে পড়বেন। সে জন্য খোঁজ নিন, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তরের অতীত ইতিহাস কেমন। প্রতিষ্ঠানটি আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সদস্যপদ আছে কি না, সেটিও যাচাই করুন। কারণ পরবর্তী ফ্ল্যাটসংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হলে আপনি সংগঠনটির দ্বারস্থ হতে পারবেন। এ ধরনের জটিলতা নিরসনের রিহ্যাবের পৃথক কমিটিও রয়েছে। তারা নিয়মিতই এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করে। তবে কেবল নিজেদের সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগই আমলে নেয় রিহ্যাব। ফলে আবাসন প্রতিষ্ঠানের রিহ্যাব সদস্যপদ থাকাটাও জরুরি।

৫. অনুমোদনহীন প্রকল্পে সতর্ক

রাজধানীতে আবাসিক, বাণিজ্যিক যেকোনো ভবনের অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অনুমোদন না নিয়ে ভবন করলে সেটি ভেঙে দিতে পারে রাজউক। সে জন্য আপনি যে আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন, সেটি রাজউক অনুমোদিত কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে।

৬. জমির খোঁজও লাগবে

আপনি যে আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কিনতে চান, সেটি যে জমিতে নির্মাণ হবে বা হচ্ছে, সেটি নিষ্কণ্টক কি না, যাচাই করতে হবে। ভূমি কার্যালয়ে গিয়ে তল্লাশি দিয়ে জমির মালিকানা ও দখলদার সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ যে জমির ওপর আবাসিক প্রকল্প হবে, সেটির দলিলপত্র যাচাই করে নেওয়া ভালো। জমি নিয়ে কোনো মামলা আছে কি না, সেটি দেখতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

৭. শর্তের খুঁটিনাটি জানুন

ফ্ল্যাট কেনার আগে আবাসন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সব শর্ত ভালো করে পড়ে দেখতে হবে। চুক্তিতে সুস্পষ্টভাবে ফ্ল্যাট কেনার শর্ত, ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ, ফ্ল্যাটের অনুমোদিত নকশা, ভবনের কোন ফ্ল্যাটটি কিনছেন এবং ক্রেতা যদি উন্নত মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে চান, তাহলে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতি—এ বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া একেক আবাসন প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটের আয়তন একেকভাবে পরিমাপ করে। ফলে ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ও ব্যবহারযোগ্য আয়তনের বিষয়ে পরিষ্কারভাবে আগেই বুঝে নিতে হবে। সেটি চুক্তিতে রয়েছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গেও পরামর্শ করে নেওয়া যেতে পারে।

৮. কিস্তি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা

ফ্ল্যাট যদি কিস্তিতে কেনা হয়, তাহলে কত কিস্তি ও কবে হস্তান্তর হবে, সেটি চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে। কোনো কারণে ফ্ল্যাট কেনা না হলে সেটি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তা–ও স্পষ্টভাবে থাকতে হবে।

৯. কোনটি কেনা লাভজনক

রেডি বা প্রস্তুত, নির্মাণাধীন নাকি শিগগিরই নির্মাণ শুরু হবে, এমন প্রকল্পের ফ্ল্যাট কিনবেন, সেটিও চূড়ান্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রস্তুত ফ্ল্যাটের দাম বেশি। নির্মাণ শুরু হবে এমন ফ্ল্যাট বুঝে পেতে সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনাটা আপনার জন্য বেশি সুবিধাজনক। কারণ, যত দ্রুত আপনি নিজের বাসা বা ফ্ল্যাটে উঠতে পারবেন, তাতে বাসাভাড়া বাবদ খরচ কমবে। সেই টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সুবিধা হবে আপনার।

১০. ঋণ নিন বুঝেশুনে

বর্তমানে ব্যাংকগুলো একজন গ্রাহককে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিতে পারে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (লিজিং কোম্পানি) আগে থেকেই গ্রাহকের চাহিদামতো ঋণ দিয়ে দেয়। আবার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) অন্যদের চেয়ে কম সুদহারে ঋণ দেয়। ফলে ঋণ নেওয়ার আগে সুদহারের পাশাপাশি শর্তগুলো ভালো করে দেখে নিন। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়