বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মন্তব্য এমন এক বৈঠকের পর করলেন, যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন—বলে জানা যাচ্ছে। যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড স্থানীয় সময় গতকাল ট্রাম্প শনিবার বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তি করা। কারণ, ‘রাশিয়া একটি অনেক বড় শক্তি, আর তারা (ইউক্রেন) নয়।’ ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায়ও বাৎলেছেন।
এই বিষয়ে অবগত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, গত শুক্রবার আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলেন, পুতিন প্রস্তাব দিয়েছেন যে, কিয়েভ যদি পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছাড়তে রাজি হয়, তবে পুতিন যুদ্ধ বর্তমান রণক্ষেত্রেই স্থির করে দেবেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, জেলেনস্কি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, যার মধ্যে দোনেৎস্ক অঞ্চলেরও প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা রয়েছে। ২০১৪ সালেই প্রথম দোনেৎস্কে প্রবেশ করেছিল মস্কো।
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, শান্তি চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া উচিত যুদ্ধবিরতির আগেই। ইউক্রেন ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা আগে যুদ্ধবিরতির দাবি করেছিল। সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ট্রাম্পও বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া তিনি খুশি হবেন না।
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘সবাই একমত হয়েছে যে রাশিয়া-ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করার সেরা উপায় হলো সরাসরি একটি শান্তি চুক্তি করা। শুধু যুদ্ধবিরতির চুক্তি নয়, যা অনেক সময় টেকে না।’
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার অনীহা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘হত্যা-হামলা বন্ধ করা যুদ্ধ থামানোর মূল শর্ত।’ তবে তিনি জানিয়েছেন, সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে।
ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা ট্রাম্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা বলেছে, ইউক্রেনে তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল বলেছেন, সোমবার হোয়াইট হাউসে হতে যাওয়া বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারাও যোগ দিতে পারেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালায়। এরপর থেকেই তারা ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ। দুই পক্ষের মিলিয়ে দশ লাখের বেশি মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে হাজারো বেসামরিক নাগরিক, প্রধানত ইউক্রেনীয়।
পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যগুলো মূলত মস্কোর প্রকাশ্য অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায়। রাশিয়া বলছে, পূর্ণাঙ্গ মীমাংসা জটিল হবে কারণ দুই পক্ষের অবস্থান ‘পুরোপুরি বিপরীত।’ পুতিন তাঁর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো থেকে কোনো ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেননি। এসব দাবির মধ্যে আছে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার ওপর ভেটো। তিনি প্রকাশ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গও তোলেননি। ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, তিন পক্ষের বৈঠকের কোনো আলোচনা হয়নি।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি ও পুতিন ভূমি হস্তান্তর ও ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ‘ব্যাপকভাবে একমত’ হয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমার মনে হয় আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইউক্রেনকে রাজি হতে হবে। হয়তো তারা না বলবে।’
জেলেনস্কিকে কী পরামর্শ দেবেন—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘চুক্তি করতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন, রাশিয়া অনেক বড় শক্তি, আর তারা নয়।’ সূত্র: আজকের পত্রিকা