শিরোনাম
◈ নাটোরে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রদল নেতার প্রবেশ: অতিরঞ্জিত প্রচারের প্রতিবাদ ◈ কল‌ম্বো টে‌স্টে খেল‌ছে শ্রীলঙ্কা, দেখ‌ছে বাংলা‌দেশ, ই‌নিংস হা‌রের অ‌পেক্ষায় শান্তবা‌হিনী ◈ ইরান এখন কী করবে? ◈ ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর ইরানে বেড়েছে গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড, সাংবা‌দিকরাও হুমকি পাচ্ছেন ◈ কল‌ম্বো টে‌স্টে বাংলা‌দে‌শের বিরু‌দ্ধে ২১১ রা‌নের লিড নি‌লো শ্রীলঙ্কা ◈ প্রধান উপদেষ্টা-সিইসি বৈঠকের বিষয়গুলো স্পষ্ট করার দাবি সালাহউদ্দিনের ◈ ফের রিমান্ডে সাবেক সিইসি নূরুল হুদা  ◈ বিরোধীদের দমন নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের চাবিকাঠি: দ্য ইকোনমিস্ট ◈ আরাকান আর্মির সাথে 'লড়াইয়ের প্রস্তুতি' নিচ্ছে রোহিঙ্গারা: একটি সরেজমিন প্রতিবেদন ◈ মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহ

প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৪:৪২ দুপুর
আপডেট : ২৭ জুন, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রস্তাবের নেপথ্যে

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের এক ক্রান্তিলগ্নে ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার আগেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল ওয়াশিংটন। এক পর্যায়ে তেহরানকে একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাবও দেয় তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

কী ছিল সেই প্রস্তাবে
বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করতে পারে, এমন একটি পরমাণু প্রকল্প তৈরির জন্য ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেয় ওয়াশিংটন। পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ শিথিল করা ও বিভিন্ন দেশে জব্দ করা ইরানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তহবিল মুক্ত করে দেওয়ার মতো প্রস্তাবও এর সঙ্গে যোগ করা হয়। 

এ সবই ছিল তেহরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার অংশ। এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন চার সূত্র সিএনএনকে এই তথ্য দিয়েছেন।

সূত্ররা জানান, গত দুই সপ্তাহজুড়ে ইরান ও ইসরায়েল যখন তীব্র আকারে পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও এসব আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে এগুলোতে পরিবর্তন আসছে।

তবে একটি শর্ত নিয়ে কোনো ধরনের দরকষাকষির সুযোগ নেই, সেটা হলো—ইরান আর কখনোই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে না। যদিও ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের কাছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ইরানের জন্য একাধিক প্রণোদনা
দুই সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েক ধরনের প্রণোদনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 


যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও দেশটির উপসাগরীয় অংশীদারদের প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। সেখানে গোপনীয়তা বজায় রেখে ওই চুক্তির খুঁটিনাটি নির্ধারণ করা হয়। সেই বৈঠকের বিষয়ে জানেন এমন দুই সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেন। 

তবে একদিন পরেই ইরানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। 

প্রস্তাবের সবচেয়ে লোভনীয় বিষয় হল ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। এই অর্থ ব্যয় করে ইরানে একটি নতুন পরমাণু প্রকল্প স্থাপন করা হবে, যার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা থাকবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করা হবে। 

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, এই অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না। ওয়াশিংটন চায় মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অংশীদাররা এর যোগান দিক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব আলোচনাতেও পরমাণু কর্মসূচিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ হয়েছিল বলে জানান ওই কর্মকর্তা। 

ট্রাম্প প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, 'এ ধরনের আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তবে কাউকে এই পরমাণু কর্মসূচি স্থাপনের খরচ বহন করতে হবে। আমরা ওই অঙ্গীকারে যাব না।'

অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে আছে বিদেশি ব্যাংকে জব্দ থাকা ইরানের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের ওপর থেকে বিধিনিষেধ সরানো এবং এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরোপ করা অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ শিথিল বা বাতিল করা। 

ইরানের শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক পরমাণু প্রকল্প
গত সপ্তাহের আলোচনায় ফর্দো পরমাণু স্থাপনা সরিয়ে একই অবস্থানে নতুন পরমাণু প্রকল্প স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বাস্টার বোমার আঘাতে ওই স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্পসহ একাধিক মার্কিন কর্মকর্তা। 

২২ জুন মার্কিন হামলার পর ফোরদো ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনার স্যাটেলাইট দৃশ্য। ছবি: রয়টার্সের মাধ্যমে সরবরাহকৃত।
তবে নতুন স্থাপনার কার্যক্রম ইরান পরিচালনা করবে কি না, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। এমনকি এটা চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। 

সূত্র জানায়, 'আলোচনায় বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন চিন্তা, মত ও প্রস্তাব দেন। এর মধ্যে অনেকগুলোই বেশ সৃজনশীল চিন্তা।' 

পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের পাঁচ দফা আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন অপর এক সূত্র বলেন, 'আমার মতে, পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে তা একেবারেই অনিশ্চিত।' 

বুধবার সিএনবিসিকে উইটকফ বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একটি 'স্বয়ংসম্পূর্ণ শান্তি চুক্তি' নিয়ে কাজ করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, সব ধরনের প্রস্তাবেই এটা নিশ্চিত করা হবে, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। 

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক কাজের জন্য ইরান পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পারে, তবে তারা ওই প্রকল্পের অধীনে ইউরেনিয়াম পরিশোধন বা সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে না। 

উইটকফ বলেন, 'এখন ইরানের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলব, তা হলো- কীভাবে আপনাদের পরমাণু কর্মসূচিকে নতুন করে তৈরি করা যায়, যাতে সেই প্রকল্পের সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা না থাকে?'

আগামী সপ্তাহের বৈঠকে আলোচনা
বুধবার ট্রাম্প দাবি করেন, আগামী সপ্তাহে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বসবে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই জানান, এ ধরনের কোনো আলোচনার বিষয়ে তেহরান অবগত নয়। 

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা, গত দুই সপ্তাহের অভিজ্ঞতা ইরানকে নমনীয় করবে এবং তারা মার্কিন শর্ত মেনে নেবে। 

তবে ইরানের বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত দিয়েছেন। তাদের মতে, ইরানের শাসকগোষ্ঠী হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আগে না হলেও এখন তাদের হাতে অবশ্যই পরমাণু অস্ত্র থাকা উচিত। 

এ সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা আইএইএ'র সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেহরান। পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলেও দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই উদ্যোগ। 

এ বিষয়টিকেও ইরানের গোপনে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত বলে ধরে নিয়েছেন বিশ্লেষকরা।  

ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের সঙ্গে আগামী সপ্তাহের আলোচনায় তিনি তাদের কাছ থেকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার লিখিত অঙ্গীকার আদায় করবেন। 

'আমরা তাদের কাছ থেকে একটা জিনিসই চাইবো, যা আমরা আগেও চেয়েছি', যোগ করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলেন, 'নো নিউক্লিয়ার'। অর্থাৎ, ইরানের হাতে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়