বৃহস্পতিবার নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব যুক্ত হয়ে আগামীকাল ও শুক্রবার (৩০ মে) দেশের ছয় বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
ভারি বৃষ্টিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে জলাবদ্ধতা এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে শুক্রবার (৩০ মে) পর্যন্ত দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার রাতে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা এবং সম্ভাব্য মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।'
নাজমুল হক জানান, বৃহস্পতিবার দিনে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে মূলত চট্টগ্রাম থেকে। এরপর তা ঢাকার পূর্ব ও মধ্যাঞ্চল, সিলেট এবং ময়মনসিংহে ছড়াতে পারে।
সন্ধ্যার পর তা ক্রমে অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়াতে পারে। অন্যদিকে পরদিন শুক্রবার উত্তরের জেলা রংপুরেও বৃষ্টি বাড়তে পারে। এছাড়া দুইদিন দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে।
ভারি বৃষ্টি, পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার আভাস, বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত—
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল পৃথক সতর্কবার্তা জারি করেছে।
ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় থাকা সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মি.মি) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ভারি বর্ষণের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
১১ জেলায় বন্যার শঙ্কা—
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দেশের উত্তরে রংপুর, নীলফামারি, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী ইত্যাদি নদীর পানি বাড়তে পারে। এ সময় মুহুরী নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে ফেনী জেলার মুহুরী নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। পানি বেড়ে রংপুর বিভাগে তিস্তা নদীও কিছু পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে তিস্তাসংলগ্ন রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কিছু পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে এসব নদীসংলগ্ন সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এছাড়া আগামী দুইদিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। উৎস: কালের কণ্ঠ