হলিউডের পর ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি—বিশেষ করে বলিউড—বিশ্বের বৃহত্তম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ ভারতের তামিল, তেলুগু ও কন্নড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উত্থান বলিউডকেও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
তবে যতই সিনেমা শিল্পকে মতপ্রকাশ ও সৃজনশীলতার মাধ্যম বলা হোক না কেন, ভারতের সেন্সর বোর্ড (CBFC) বহু বছর ধরে কঠোরভাবে সিনেমার বিষয়বস্তু, ভাষা, যৌনতা ও ধর্মীয় উপস্থাপন নিয়ে নজরদারি করে আসছে।
এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো এমন ৭টি ভারতীয় চলচ্চিত্র, যেগুলো যৌনতাকে কেন্দ্র করেই ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে।
১. গান্ডু (২০১০)
ভাষা: বাংলা
পরিচালনা: কৌশিক মুখার্জি
অভিনয়: ঋ সেন, অনুব্রত বসু, কমলিকা ব্যানার্জি
স্বাধীনধারার এই ছবিতে নগ্নতা, যৌনতা এবং র্যাপ সংগীতের এক অদ্ভুত মিশেল তুলে ধরা হয়। খোলামেলা যৌন দৃশ্য, হস্তমৈথুন এবং আপত্তিকর শব্দ ব্যবহারের কারণে ভারতের সেন্সর বোর্ড এটি মুক্তির অনুমতি দেয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হলেও ভারতে এটি মূলধারায় প্রদর্শিত হয়নি।
২. কামাসূত্র: দ্য টেল অব লাভ (১৯৯৬)
পরিচালনা: মীরা নায়ার
অভিনয়: রেখা, ইন্দিরা ভার্মা, রেজিনা ক্যাসান্দ্রা
প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থ ‘কামসূত্র’-এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবিতে একাধিক নগ্ন ও সাহসী দৃশ্য ছিল। এসব দৃশ্য ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মনে করে সেন্সর বোর্ড সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিনেমাটি প্রশংসিত হয় এবং বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়।
৩. আনফ্রিডম (২০১৫)
পরিচালনা: রাজ অমর মিত্রা
অভিনয়: প্রীতি গুপ্তা, আদিল হুসেন, ভবানী লি
সমকামিতা এবং ধর্মীয় মৌলবাদ—দুইটি স্পর্শকাতর বিষয় একত্রে তুলে ধরা হয় এই চলচ্চিত্রে। নারীদের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য এবং সহিংসতা ও নগ্নতার কারণে CBFC এটিকে ভারতে নিষিদ্ধ করে। সিনেমাটি পরে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়।
৪. পাঁচ (২০০৩)
পরিচালনা: অনুরাগ কাশ্যপ
অভিনয়: কেকে মেনন, অদিত্য শ্রীবাস্তব, তেজস্বিনী কোলহাপুরী
পাঁচ বন্ধুর অপরাধজীবন নিয়ে নির্মিত এই থ্রিলার ছবিতে সহিংসতা, মাদক ব্যবহার এবং যৌনতার উপস্থিতি ছিল। যদিও এটি অফিসিয়ালি ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়নি, তবে সেন্সর বোর্ড অনুমোদন না দেওয়ায় ছবিটি এখনো পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি।
৫. সিনস (২০০৫)
পরিচালনা: ভিনোদ পাধায়ার
অভিনয়: শাইনি আহুজা, সীমা রহমানি
একজন ক্যাথলিক পাদ্রির এক নারীর প্রতি যৌন আসক্তি নিয়ে তৈরি হওয়া এই ছবিটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। যৌন দৃশ্যের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সেন্সর বোর্ড ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
৬. দ্য পেইন্টেড হাউজ (২০১৫)
ভাষা: মালয়ালম
পরিচালনা: স্যঞ্জীব সুরেন্দ্রন
অভিনয়: নেহা মহাজন, কালাধরণ নাসির, আকরাম মোহাম্মদ
একজন বিকারগ্রস্ত শিল্পী ও এক তরুণীর মধ্যে সম্পর্কের গল্পে সাহসী ও নগ্ন দৃশ্য উঠে আসে। CBFC এটিকে ‘অশ্লীল’ আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ছবিটি ভারতের বাইরে কিছু উৎসবে দেখানো হয়।
৭. মালিক (১৯৭২)
পরিচালনা: এস. এম. শাহিদ
অভিনয়: রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর
ধর্মীয় উপাদান এবং যৌনতা একসাথে উপস্থাপন করায় ছবিটি তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এমন অভিযোগে CBFC ছবিটির মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দর্শক মহলে ছবিটি বিতর্কের পাশাপাশি প্রশংসাও পায়।
ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বিতর্কিত বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করলেই সেন্সরের কাঁচির মুখে পড়তে হয়—এই বাস্তবতা বহুদিনের। যদিও সময়ের সঙ্গে দর্শকদের রুচি ও মানসিকতাও বদলাচ্ছে, তথাপি যৌনতা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ এখনো একটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ’ হয়ে রয়ে গেছে।