শিরোনাম
◈ সরকারের নতুন আয়কর প্রস্তাব: নতুনদের জন্য ছাড়, উচ্চ আয়ের জন্য কর হার বাড়ছে ◈ আমাদের সমুদ্র সোনার খনি:‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ◈ এ এক অন্য রকম আয়নাবাজী: ১২ বছর ধরে অন্যের নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি, অবশেষে ফাঁস হলো প্রতারণা ◈ পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান অপসারণের আল্টিমেটাম ◈ অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা পেতে যাচ্ছেন সুখবর ◈ টেকনাফ স্থলবন্দরে অচলাবস্থা: কর না পেয়ে পণ্য আটকে দিচ্ছে আরাকান আর্মি ◈ পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার সতর্কতা, ১১ জেলায় বন্যার শঙ্কা ◈ অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ◈ জামাতের সঙ্গে ঐক্যে বিতৃষ্ণা: নতুন দল এনসিপি-কে বর্জনের ঘোষণা সংগীতশিল্পী সায়ানের, ভোট না দেওয়ার আহ্বান ◈ অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে পেইজ খুলে অভিনব প্রতারণা, ৮ প্রতারক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ২৬ মে, ২০২৫, ১০:৫১ দুপুর
আপডেট : ২৯ মে, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

প্রক্সি, পোস্টাল নাকি অনলাইন- প্রবাসীদের জন্য কোন ভোটিং পদ্ধতি?

এল আর বাদল : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের সুযোগ দেওয়ার দাবি নিয়ে আগে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও বিষয়টাতে এখন প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য চার ধরনের ভোটিং পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন, পোস্টাল কিংবা সশরীরে ভোট- এই চার পদ্ধতিকে সামনে রেখেই এর মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এই চারটি পদ্ধতির বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পক্ষের কাছে মতামত চেয়েছি। আমরা সর্বগ্রহণযোগ্য পদ্ধতিই অনুসরণ করবো"।

চূড়ান্ত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকেই এই ভোটিং পদ্ধতি চালুর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসি। তবে ইসির পরিকল্পনায় থাকা চারটি পদ্ধতির মধ্যে প্রায় সবগুলো পদ্ধতিতেই ভোটের বিষয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন নির্বাচন ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল, অনলাইন কিংবা প্রক্সি যে পদ্ধতিই হোক- পেপার ট্রায়েল না থাকলে এসব পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে দলগুলো ও বিশেষজ্ঞরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

-- চলতি মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে ভোটের পদ্ধতি--

গত দুই মাস ধরে নানা পর্যালোচনার পর প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতে কয়েকটি বিকল্প নিয়ে কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে, প্রক্সি ভোটিং, অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি- এই তিনটি পদ্ধতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

এসব পদ্ধতি নিয়ে নানা পর্যালোচনার পর প্রবাসীদের জন্য সরাসরি ভোট চালু করা যায় কি-না সেটিও আসে প্রস্তাবনায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে যে সময় আছে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। সেই হিসেবে কোথাও পোস্টাল ভোটিং আর যে সব দেশে সুযোগ আছে, সেখানে প্রবাসীদের জন্য সরাসরি ভোটও চালু করা যায়"।

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের প্রস্তাবিত চার পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ দিতে ১৫ই মে পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে নানা পরামর্শ পাওয়া গেছে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, অংশীজনদের মতামত বা পরামর্শ পর্যালোচনা করে চলতি মাসের মধ্যেই প্রবাসীদের জন্য ভোটের পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা তাদের রয়েছে।

-- প্রক্সি ভোটিংয়ে ঝোঁক ইসির?--

প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতিতে প্রবাসী যারা ভোটে দিতে চান, তারা প্রথমে একটি অ্যাপে ফেইস রিকগনিশনের মাধ্যমে নিবন্ধন করবেন। তারপর প্রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবেন। তার পক্ষে যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তার এনআইডি ও বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে ওই রেজিস্ট্রেশনের সময়।

যিনি প্রক্সি ভোট দেবেন, তিনি নিজের ভোটও দিতে পারবেন। এটা হবে অনেকটা 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি'র মত বিষয়।

রেজিস্ট্রেশনের পর নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার সঙ্গে জানিয়ে দেবে, কারা কারা প্রক্সি ভোট দেবেন। তাদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকার প্রয়োজন পড়বে না।

অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এই পদ্ধতিতে ভোট করতে হলে একজন নাগরিককে দুইটা ভোট দেয়ার আইন করতে হবে। এ জন্য আমাদের সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে, এটা প্রথম বিষয়।

গত এপ্রিলে প্রক্সি ভোটিং নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেছে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটি।

সেখানে প্রক্সি ভোটিং সিস্টেমকে কার্যকরী একটি পদ্ধতি হিসেবে ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রবাসীদের জন্য ভোটিং চালু করতে ডিজিটাল ও স্বাক্ষরতা, বাংলাদেশের মিশন অফিসগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধি ও আইনগত বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

-- অনলাইন ও পোস্টাল ভোটের চ্যালেঞ্জ--

প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোট ছাড়াও অনলাইন কিংবা পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিষয়গুলো নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

যে সব প্রবাসী ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট রয়েছে, এই ডকুমেন্টগুলো ব্যবহার করে অনলাইনে একটি বিশ্বাসযোগ্য সিস্টেম চালুর পরামর্শও এসেছে। তবে, এক্ষেত্রে ভোট পুনঃগণনার সুযোগ না থাকা কিংবা হ্যাকিং হওয়ার শঙ্কার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রথমত, প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে ভোটিংয়ের ক্ষেত্রে ভোটাররা যে ভোটটা দিয়েছে, সেটি কাউন্ট হচ্ছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ"।

"আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যখন কোন প্রার্থী এই পুনঃগণনার কথা বলবে, এটার সুযোগ অনলাইন ভোটিংয়ে নাই", যোগ করেন তিনি। অনলাইন ভোটের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ব্লক চেইন পদ্ধতি নিয়েও এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি গঠিত পরামর্শক কমিটির সদস্য ড. আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ব্লক চেইন প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভোট করা যেতে পারে। এতে ভোটাররা নিজের ইচ্ছামতো তাদের সেলফোনে অ্যাপস ডাউনলোড করে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। আমরা এটিও সাজেস্ট করেছি"।

এক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যদি ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে এই সময়ের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু করে তাতে ভোট আয়োজন করাটাকে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন।

এছাড়া, তারা প্রবাসীদের ভোটে পোস্টাল ব্যালটকেও আলোচনা থেকে একেবারে বাদ দিচ্ছে না। ইসির পরামর্শক কমিটির সদস্য মি. আলীম বলছেন, "পোস্টাল সিস্টেমের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই পদ্ধতিতে ব্যালট পাঠানো ও ফেরত আনা। কেননা এখানে ব্যালট পাঠিয়ে তা দেশে ফেরত আনতে অনেক সময় প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সেই সময় হয়তো নির্বাচন কমিশন পাবে না"।

তবে শেষ পর্যন্ত প্রক্সি, অনলাইন কিংবা পোস্টাল ব্যালটে যদি ভোট আয়োজনে কোন সংকট তৈরি হয়, তাহলে সশরীরে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ভোট আয়োজনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করছে ইসি।

যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে নানা সংকটের বিষয়গুলোও নির্বাচন কমিশনের পরামর্শক কমিটির আলোচনায় আসছে।

কমিটির সদস্য মি. আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে আছে যেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। সে সব দেশে যখন সরাসরি ভোট আয়োজন করতে চাওয়া হবে, তখন ওইসব দেশের অনুমোদন পাওয়া কঠিন হবে।
যে কারণে প্রবাসীদের ভোটিং চালু করতে কোন একটি পদ্ধতিকে না ধরে কয়েকটি পদ্ধতিতে সামনে রেখে এগোনোর কথা বলছে নির্বাচন কমিশন।

-- যেভাবে আলোচনায় প্রবাসী ভোট --

নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ। হিসাব অনুযায়ী প্রবাসে থাকা ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩৪ লাখ। কিন্তু এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন।

তাই দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসী নাগরিকরা ভোটাধিকারের সুযোগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ১৬ই ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের ভোটাধিকার চালুর বিষয়ে মতামত দেন।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনতে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশনও গঠন করে।

সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দেশের যে সব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে প্রবাসীদের জন্য ভোটিং চালু করারও পরামর্শ দেন।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। যে কারণে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ করে দিতে আমরা সংস্কার প্রস্তাবে বিষয়টি যুক্ত করেছি"।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার পরই প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে কমিশন।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটির বিশেষজ্ঞসহ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটিও গঠন করা হয়।

প্রবাসীদের জন্য প্রস্তাবিত বিভিন্ন পদ্ধতির কার্যকরিতা কিংবা দুর্বলতার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতেই এই কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে ইসি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়