আজকের পত্রিকা প্রতিবেদন: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বছরে ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি মুনাফা করেছেন—এমন বিনিয়োগকারীদের খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আয়কর তথ্য যাচাইয়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় এনবিআর।
এনবিআরের অনুরোধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) বিনিয়োগকারীদের তথ্য পাঠাতে বলে বিএসইসি। এমনকি সিএসই ইতিমধ্যে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেও চিঠি পাঠায়। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বাজারে গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ দরপতন ঘটে ঊর্ধ্বমুখী বাজারে।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব বিনিয়োগকারী অর্ধকোটি টাকার বেশি মুনাফা করছেন; কিন্তু আয়করে সেসব তথ্য গোপন করছেন, তাঁদের খুঁজে বের করা। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বৃস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে গোপনীয় চিঠি ব্রোকারেজ হাউসে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক—উভয় ধরনের বড় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রভাব অন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও পড়ে। সব মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে হঠাৎ করেই দরপতন হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত সপ্তাহে বিএসইসির চিঠি পাওয়ার পর হাউসগুলোতে দেওয়া হয়েছে।
বাজারে নেতিবাচক প্রভাব
গতকাল রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি সিকিউরিটিজের মধ্যে দাম কমেছে ৩০৭টির, যার প্রভাবে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮ পয়েন্ট কমেছে। চলতি বছরের বড় দরপতনের একটি। লেনদেনও কমেছে ৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুন বলেন, আলাদা করে চিঠি দিয়ে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। ফলে স্পর্শকাতর পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেওয়ায় এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে চিঠির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার খুবই স্পর্শকাতর। চিঠি ইস্যুর কারণে বাজারে অপ্রত্যাশিত প্রভাব পড়েছে। তাই বিষয়টি রিভিউ করা হয়েছে।’
পুঁজিবাজারে ধনী বিনিয়োগকারীর চিত্র
বিএসইসির তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ৫০ কোটি ও তার বেশি বিনিয়োগ থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫০টি। ১০০ কোটি ও তার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ থাকা বিও ৩৪৭টি এবং ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ৭০ জন বিনিয়োগকারীর। আর ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে, এমন বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ৭৩৩।
পুঁজিবাজারে তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলের তথ্যমতে, পুঁজিবাজারের ৩০ জুন পর্যন্ত সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪৮টি, যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫টি। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকা বিওর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯টি। এর মধ্যে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ছিল ৬৯৬টি, ১০০ থেকে ৫০০ কোটির রয়েছে ৩২৫টির এবং ৫০০ কোটির বেশি বিনিয়োগ থাকা বিও ছিল ৬৮টি।