শিরোনাম
◈ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ব শীর্ষ দেশ ও বাংলাদেশের অবস্থান ◈ সাংবাদিক তুহিন হ ত্যা য় চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন আসামিরা! (ভিডিও) ◈ রাজধানীর নিউ মার্কেট থেকে 'সামুরাই' চাপাতিসহ ১১০০ ধারালো 'অস্ত্র' উদ্ধার (ভিডিও) ◈ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জাহাঙ্গীরনগরে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ◈ নীলা ইস্রাফিলের ফেসবুক পোস্টে চটেছেন তুষার, দিলেন কড়া জবাব ◈ পূর্ব ইউক্রেনের বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, ইউরোপীয়দের চোখে পুতিনের কৌশল ◈ তুষার আমার সাথে নেপালে বসে যেসব ভিডিও আমাকে পাঠিয়েছে, যেসব নগ্ন জিনিস আমার কাছে আছে: নীলা ইস্রাফিলের (ভিডিও) ◈ যশোরে ডিবি হেফাজতে থাকা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মচারী সংঘের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারাগারে ◈ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের ◈ উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে সরকারের বিবৃতি

প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:৩১ বিকাল
আপডেট : ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মার্কিন শুল্কে নতুন সমীকরণ: প্রতিযোগিতার বাজারে যেসব সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর এই শুল্ক হার ঠিক করা হয়েছে। এর সঙ্গে বিদ্যমান ১৬.৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক যোগ হবে। বিজিএমইএ-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়াচ্ছে ৩৬.৫ শতাংশ।

শুরুতে শুনতে বেশি মনে হলেও বাস্তবতা হলো অন্য দেশগুলোর তুলনায় মোটেও খারাপ অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিযোগী দেশগুলোকে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের বোঝা সামলাতে হচ্ছে, সেখানে ৩৬.৫ শতাংশকে সুবিধাজনক বলেই মনে হয়।

প্রতিযোগিতায় বাড়তি সক্ষমতা

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৯.৩ শতাংশ, যা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, নতুন শুল্ক বিভিন্ন দেশকে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে এবং বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক হয়েছে।

সরকার এবং দেশের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এ নিয়ে বেশ আশাবাদী। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, ভারত ও চীনের চেয়ে কম। তারা বলছেন যে, নতুন কার্যকর হওয়া শুল্ক হার যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ, মার্কিন পোশাক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা তুলনামূলক কম শুল্কের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেবে।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিকারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, 'শুল্কের এই হার আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।'

তবে তিনি এও জানান যে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা অতিরিক্ত শুল্কের বোঝার একাংশ বাংলাদেশকে বহন করতে বলছেন। এটা হলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের মুনাফা কমে যাবে।

তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর এই বাড়তি শুল্কের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরও সময় লাগবে।'

বিজিএমইএ–এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানও আশা প্রকাশ করে বলেন, সুবিধাজনক শুল্কহারের কারণে দেশ থেকে রপ্তানি বাড়বে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'স্থানীয় সরবরাহকারীরা সতর্ক না থাকলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা বাড়তি শুল্কের বোঝা বহনের জন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।'

প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান

বৈশ্বিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিযোগী ভিয়েতনাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৮.৯ শতাংশ হিস্যা নিয়ে আছে এবং তাদের ওপরও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে তাদের পণ্যের মোট শুল্ক এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।

ভিয়েতনামের রপ্তানি তালিকায় বেশিরভাগই উচ্চমূল্যের সিনথেটিক পোশাক (যেমন—অ্যাকটিভওয়্যার, স্কিওয়্যার), যেগুলোর ওপর আগে থেকেই গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক ছিল। এর সঙ্গে নতুন শুল্ক যোগ হওয়ায় তাদের কার্যকর শুল্ক হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া, চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক এড়াতে ভিয়েতনামের মাধ্যমে কোনো পোশাক রপ্তানি হলে তার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ভিয়েতনামের পোশাক খাত যেহেতু চীনের কাঁচামাল, বিনিয়োগ ও সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তাই এটি তাদের জন্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের বাজারে আরেক প্রধান প্রতিযোগী দেশ ভারতের হিস্যা আছে ৫.৯ শতাংশ। ওয়াশিংটন থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এই দেশটি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তৈরি পোশাকে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক মিলিয়ে ভারতের কার্যকর শুল্ক হার এখন ৬৬.৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ চীনের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হিস্যা ২০.৮ শতাংশ। দেশটির কার্যকর শুল্ক হার এখন ৫৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক আলোচনা অমীমাংসিত থাকায় এই হার আরও বাড়তে পারে।

বাংলাদেশের তুরুপের তাস

কোন বিষয়টি বাংলাদেশকে এই সুবিধা দিচ্ছে? উত্তরটি হলো তুলা।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি পণ্য—ট্রাউজার, নিটেড পোলো শার্ট, ওভেন শার্ট ও ব্লাউজ, সোয়েটার এবং অন্তর্বাস—একত্রে মোট পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশ। এই সবগুলোতে তুলার ব্যবহার অনেক বেশি। সিনথেটিক পোশাকের চেয়ে সুতির পোশাকের ওপর অনেক কম শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

এ দিক থেকেই ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

সুবিধা আরও আছে। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, কোনো রপ্তানি পণ্যে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল, যেমন—আমেরিকায় উৎপাদিত তুলা, ব্যবহার করা হয়, তবে পণ্যের মূল্যের ওই অংশের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক মওকুফ করা হবে।

এর মানে হলো, বাংলাদেশে তৈরি ১০ ডলারের একটি শার্টে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন তুলা ব্যবহার করা হয়, তবে পাল্টা শুল্ক শুধু ৮ ডলারের ওপর প্রযোজ্য হবে, পুরো ১০ ডলারের ওপর নয়। কিছু বাংলাদেশি রপ্তানিকারক তাদের পণ্যে ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন তুলা ব্যবহার করছেন, যার ফলে তাদের পণ্যে আরও কম শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

আসল শঙ্কার জায়গা

এই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা সত্ত্বেও একটি বড় দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‍্যাপিড)–এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'কয়েক বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করত। ২০২৪ সালে তা কমে ৮৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এখন উচ্চ শুল্ক হারের কারণে এটি আরও কমে ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নামতে পারে।'

বাংলাদেশের শুল্ক হার যতই সুবিধাজনক হোক না কেন, যদি ক্রয়াদেশই কমে যায়, তবে কোনো লাভ হবে না। দিন শেষে শুল্কের বোঝা চাপে ভোক্তার ওপর। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে এবং ক্রেতারা খরচ কমিয়ে দেবে। ফলে খুচরা বিক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমালে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তখন এই উদ্বৃত্ত পণ্য কোথায় যাবে? সহজ উত্তর হলো ইউরোপ। কিন্তু সেখানেও অতি-সরবরাহের নতুন চ্যালেঞ্জ। আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'অনেক রপ্তানিকারক দেশ তখন প্রতিযোগিতা করবে, ফলে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে ইউরোপীয় ক্রেতারা দাম কমানোর জন্য চাপ দিতে পারে।'

বাংলাদেশকে যেসব ছাড় দিতে হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তিটি কোনো শর্ত ছাড়া আসেনি। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ছয় বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ৮.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।

কম শুল্ক হার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু দাবি মেনে নিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উড়োজাহাজ, গম, সয়াবিন, তুলাসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বেশি পরিমাণে কেনা।

এ ছাড়া, বাংলাদেশকে তার অভ্যন্তরীণ বাজার যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধ, মাংস ও পোলট্রি শিল্পের জন্য উন্মুক্ত করতে হয়েছে, যেখানে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে। আলোচনার সময় ইউএসটিআর বাংলাদেশকে শিল্প খাতের কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে বলেছে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তিও অনুমোদন করতে হবে। তবে সবকিছু মিলিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।

বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, অত্যন্ত ভালো আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বাড়বে, কারণ শুল্কের দিক থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমারা সুবিধাজন অবস্থানে আছি।

তিনি আরও বলেন, পোশাক ছাড়াও জুতা এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও এই শুল্ক সুবিধার কারণে বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কূটনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি নাজুক পথ পাড়ি দিতে হবে। শুল্ক তুলনামূলক কম হলেও ঝুঁকি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। উৎস: ডেইলি স্টার।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়