শিরোনাম
◈ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যেভাবে দেশ ছেড়েছেন ◈ ইশরাককে শপথ না পড়ানো পর্যন্ত আন্দোলনে অনড় কর্মীরা, বন্ধ নগর ভবন (ভিডিও) ◈ ২০ নেতার সঙ্গে দুই দফায় সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ◈ মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে ইশরাক হোসেনের রিট ◈ ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে: আলী রীয়াজ ◈ রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, মার্কিন বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের জন্য কঠিন সময়: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা ◈ চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না: প্রেস সচিব (ভিডিও) ◈ এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে কর্মবিরতি: কার্যত অচল আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবন ◈ সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে যে পোস্ট দিলেন প্রেসসচিব

প্রকাশিত : ২৫ মে, ২০২৫, ১১:৩৯ দুপুর
আপডেট : ২৫ মে, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট ৪১ হাজার ছাড়াল, শুল্কায়ন বন্ধে স্থবির আমদানি-রফতানি কার্যক্রম

স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে দৈনিক চার হাজার কনটেইনার খালাস হয়। তবে কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সব ধরনের কার্যক্রম। শুল্কায়নকাজ বন্ধ করে দেয়ায় গতকাল ছাড়করণ হয়েছে কেবল ২ হাজার ৮৫০ কনটেইনার। টানা কয়েক দিনের এ অস্থিরতায় বন্দরের ডকগুলোয় কনটেইনারের স্তূপ জমে এখন ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। সূত্র: বণিক বার্তা

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৩ হাজার কনটেইনার রাখার জায়গা আছে বলা হলেও অফিস স্পেস, ইকুইপমেন্ট, যানবাহন চলাচলের জায়গা বাদ দিলে মূলত কনটেইনার রাখার স্থান রয়েছে কেবল ৪৫ হাজারের মতো। সে হিসাবে কনটেইনার রাখার স্থান আর বাকি আছে কেবল চার হাজর। এদিকে দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরে প্রতিদিন গড়ে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হচ্ছে কমপক্ষে চার হাজার।

কর্তৃপক্ষ বলছে, আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা নেই বললেই চলে। এনবিআর কর্মকর্তাদের ঘোষণা অনুযায়ী শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকলে দুদিনের মধ্যে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো বন্ধ করে দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। আর এভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার নামছে। একই হারে বন্দর চত্বর থেকেও এ কনটেইনার ডেলিভারি হতে হয়। সেটা যদি কোনো কারণে ব্যাঘাত ঘটে তখনই বিপত্তি ঘটে। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার প্রভাবে এরই মধ্যে ডেলিভারি কমার হার দৃশ্যমান হয়েছে। আর দুই-চারদিন এভাবে চললে বড় ধরনের জট ফেস করতে হবে।’

শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে আমদানি ও রফতানি প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে না পারলে চাহিদার বিপরীতে দেশে কাঁচামাল কিংবা প্রস্তুত পণ্যের ঘাটতি তৈরি হবে। এতে করে সরবরাহ ব্যবস্থাও কার্যত ভেঙে পড়বে। এছাড়া খালাস করতে না পারার ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের দায় না থাকলেও ঠিকই দিতে হবে কনটেইনার রাখার বাড়তি ভাড়া।

নির্মাণ খাতের বড় আমদানিকারক প্রিমিয়ার সিমেন্ট পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বন্দরে পণ্য আসার পর বিল অব এন্ট্রি জমা থেকে শুরু করে কাগজপত্র দাখিল, পণ্যের চালান পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, শুল্ক-কর পরিশোধ এবং পণ্য খালাস করে নেয়া প্রতিটা ধাপ আটকে যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে জাহাজ জেটিতে ভেড়াসহ পণ্য খালাসের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আমদানিকারকের পণ্য বুঝে পেতে একটা বড় সময় চলে যায়। এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে জট নিশ্চিতভাবে বেড়ে যাবে। কোথায় ঈদের ছুটির আগে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে খালাস কার্যক্রমে জোর দেয়ার কথা, সেখানে এখন ঘটছে উল্টো ঘটনা। পণ্যের সংকট, দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে বড় কারণ আর কী হতে পারে?’

ফিডার ভেসেল অপারেটররা বলছেন, বন্দরের অভ্যন্তরে যদি ৩০-৩২ হাজার কনটেইনারের স্তূপ থাকে, তখন পরিচালন কার্যক্রম স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায়। বন্দরের তথ্য বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কলমবিরতি শুরু হওয়ার আগে বন্দরে ৩১ হাজার কনটেইনার জমা ছিল। কিন্তু কলমবিরতিতে শুল্কায়ন কার্যক্রম গতি হারানোয় এ সংখ্যা এখন ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।

মেইন লাইন অপারেটররা (এমএলও) দেখে কত বেশিদিন একটা দেশে গিয়ে জাহাজটা আটকে থাকছে। বেশিদিন কনটেইনার পড়ে থাকলে সে বন্দরকে তারা তত বেশি নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করে। আবার প্রয়োজনীয় গভীরতা না পাওয়ায় মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে না। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি পণ্য প্রথমে শ্রীলংকার কলম্বো, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং, তানজুম পেলিপাস ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে খালাস করা হয়। এরপর ফিডার ভেসেল বা অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজে করে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। একইভাবে রফতানি পণ্য পাঠানো হয়।

এমএসসি বাংলাদেশ লিমিটেডের অপারেশন ও লজিস্টিকস বিভাগের প্রধান আজমীর হোসাইন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ৩০-৩২ হাজার একক কনটেইনার থাকলে আমরা মনে করি অপারেশন স্মুদলি চলছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এরই মধ্যে ৪০ হাজার এককের বেশি কনটেইনার জমে গেছে। এভাবে স্তূপ বাড়তে থাকলে কনটেইনার রাখার জায়গা সীমিত হয়ে আসে, ট্রাফিক তৈরি হয়। এভাবে একটা জাহাজের অপারেশনের প্রডাক্টিভিটির বড় ক্ষতি হয়। আমরা যারা জাহাজসেবা দিচ্ছি, এটা একটা অশনি সংকেত হিসেবেই দেখতে পাচ্ছি। একটা কনটেইনার খালি হওয়ার পর থেকে এর খরচ আমাদের বহন করতে হয়। এমনও হচ্ছে ২০ দিন পার হলেও কনটেইনার আটকে পড়ে আছে। প্রথম সাতদিন ভ্যাটসহ ১৪ ডলার করে পে করতে হচ্ছে। এরপর ১৩ দিন ডাবল পেমেন্ট চলে আসে। এভাবে দিন যত গড়াতে থাকে শিপিং কোম্পনিগুলোর ওপর চার্জও বাড়তে থাকে। স্টোর রেন্ট হিসেবে ৫৬ ডলার পর্যন্ত আমাদের দিতে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একটা গ্লোবাল ইস্যুও আছে বর্তমানে। সাম্প্রতিক সময়ে ট্যারিফ ইস্যুতে অস্থিরতা চললেও সেটি স্বাভাবিক হতে থাকায় সেখানে একটা বড় চাহিদা তৈরি হবে। চীনের রফতানির যে ডিমান্ড সেটি পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে রফতানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এ চাহিদায় চীনে অলরেডি ফ্রেইট বেড়ে গেছে, যদিও এখনো বাংলাদেশে জাহাজ ভাড়ায় এর প্রভাব পড়েনি। সাগরে পণ্য পরিবহনে সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড মেনেই ভাড়া ওঠানামা করে।’

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি-রফতানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারের ৩০ শতাংশই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। রফতানি কনটেইনারের বেশির ভাগই তৈরি পোশাকের। আবার কাঁচামাল আমদানি হয় কনটেইনারে। বন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি হওয়া পণ্যের বড় অংশই পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু কাঠামো সংস্কার, ন্যায্য দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত থাকায় বাধ্য হয়েই কর্মবিরতির পথ বেছে নিতে হয়েছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অসহযোগ চলবে, এমন নির্দেশনাই আমাদের কাছে।’

বৈদেশিক বাণিজ্যে খরচ কতটা বাড়বে কিংবা কমবে সেটা মূলত নির্ভর করবে বন্দরের সেবার মানের ওপর। কারণ কনটেইনারে আমদানির বড় অংশই শিল্পের কাঁচামাল। আবার রফতানি পণ্যের পুরোটাই কনটেইনারে পরিবহন করা হয়। তার মানে কনটেইনার ব্যবসায়ীদের কারখানায় না পৌঁছলে শিল্পের উৎপাদনও কমে যাবে, এমনটাই মনে করেন চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সাধারণ পণ্যসহ মোট আমদানি-রফতানির ৯৩ শতাংশ সমুদ্রপথে এ বন্দর দিয়ে আনা-নেয়া হয়। তাই বন্দরে ১ ঘণ্টার কর্মসূচিও বড় প্রভাব ফেলে দেশের অর্থনীতিতে। ভয়াবহতা আরো দূরে যাওয়ার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়