এন এ মুরাদ, মুরাদনগর: কুমিল্লার মুরাদনগরে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ইভটিজিং এর অভিযোগে বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। হামলায় বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষকসহ আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। এ ঘটনায় বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে মুরাদনগর থানা পুলিশ ও মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাকিব হাসান খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
বুধবার সকালে ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ আনা হয় একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বাকি বিল্লাহর বিরুদ্ধে। ইভটিজিংয়ের অভিযোগে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেণীর ছাত্র বাকি বিল্লাহ কে তুলে নিতে আসে ওই ছাত্রীর বড় ভাই ইমন সহ ৫ জন বহিরাগত।
এ সময় বাকি বিল্লাহ কে না পেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া তার দুই বন্ধু শাহজালাল ও আরমান কে তুলে নিয়ে বিদ্যালয়ের গেইটের বাইরে মারধর করতে থাকে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বাধা দিলে তার ওপরেও হামলা চালায় বহিরাগতরা।
বিষয়টি বিদ্যালয়ে জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন ও গণিত বিভাগের শিক্ষক জহিরুল ইসলামসহ দুই পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বহিরাগত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দুইটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মুরাদনগর থানা পুলিশ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান উপস্থিত হয়ে আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে বহিরাগতদের কে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ বিষয়ে পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক দাতা সদস্য শাহজাহান খান বাবুল বলেন, যদি কোন ছাত্রীকে কেউ ইভটিজিং করে থাকে। তাহলে সেটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোর প্রয়োজন ছিল। এইভাবে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদেরকে টানা-হেঁচড়া করে বাহিরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা এটা মোটেও কাম্য নয়। এটার সঠিক বিচার হওয়া উচিত।
পরমতলা শব্দর খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ইভটিজিংয়ের অভিযোগের বিষয়টি বিদ্যালয়ের কারোই জানা নেই। বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী যদি ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে আগে জানানোর দরকার ছিল।
কিন্তু তারা সেটা না করে মঙ্গলবার বিকেলেও এই বহিরাগত ছেলেগুলো নবম শ্রেণীর ছাত্র বাকি বিল্লাহ কে তুলে নিতে বিদ্যালয়ে এসেছিল। তখন তাদেরকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। তারা সেটি না করে বুধবার সকালে এসে দুইজন শিক্ষার্থীকে টানা-হেঁচড়া করে বিদ্যালয়ের বাইরে নিয়ে মারধর করে। আমি প্রতিবাদ করাতে তারা আমাকেও ধাক্কা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বহিরাগতদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তাদেরকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ ও এসিল্যান্ড স্যার এসে তাদেরকে মুরাদনগর থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জাহিদুর রহমান মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ে যে বহিরাগত ৫ জন গিয়েছিল। তাদেরকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কিছু শিক্ষার্থীদেরকেও ডাকা হয়েছে। তারা আসার পরে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আবদুর রহমান জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হলে দ্রুত সেখানে এসিল্যান্ডকে পাঠানো হয়। যেহেতু এটা মোবাইল কোর্টের আওতায় আসেনা, সেজন্য মুরাদনগর থানার ওসিকে বিষয়টা দেখার জন্য বলা হয়েছে।