মাহবুব সৈয়দ, পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি: বাক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে জীবনের সংগ্রামে এগিয়ে চলেছেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম মাসুম (৩৭)।
প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তার ওপর ভরসা না করে মাসুম বেছে নিয়েছেন ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সার্ভিসিংয়ের কাজ। নিজস্ব প্রচেষ্টায় তিনি আজ একজন সফল উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভর মানুষে পরিণত হয়েছেন।
বাক প্রতিবন্ধী হয়েও মাসুম পলাশ উপজেলা ডিজিটাল সেন্টার ও বিভিন্ন কম্পিউটার সার্ভিসিং দোকানে বসে নিয়মিত কাজ করছেন। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নষ্ট ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ মেরামত করেও তিনি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী মাসুম জানান, কাজের মাঝেই তার পরম আনন্দ।
বাবা মো. শিহাবউদ্দিন ভূঁইয়ার তৃতীয় সন্তান মাসুম বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। স্ত্রী মুনীরা বেগম জানান, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মাসুম জন্ম থেকেই বাক প্রতিবন্ধী। তবুও তিনি কখনো নিজেকে অসহায় ভাবেন না। ইশারা-ইঙ্গিত কিংবা লিখে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন। এলাকায় তার সুনাম রয়েছে এবং সবার কাছে একজন সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে পরিচিত।
শুধু প্রযুক্তি নয়, ক্রীড়াঙ্গনেও মাসুমের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিকেএসপির হয়ে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলে খেলেছেন তিনি। অংশ নিয়েছেন চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। অর্জন করেছেন একাধিক পদক ও স্পেশাল অলিম্পিকস ওয়ার্ল্ড সামার গেমসে “বিজয়ী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কৃতি ক্রীড়াবিদ” সম্মাননা। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে বিকেএসপি আর তাকে দলে ডাকেনি।
মাসুমের স্বপ্ন একটি স্থায়ী চাকরি পাওয়া। স্ত্রী মুনীরা বেগম বলেন, “এই কাজ করে সংসার চালানো ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটানো খুবই কষ্টকর। সরকার যদি সহায়তা করে তবে মাসুম কারো বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীলভাবে বাঁচতে পারবে।”
পলাশ উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, “মাসুম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি সংসার চালাচ্ছেন। সরকার যদি এরকম মানুষদের আর্থিক সহায়তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়, তবে তারা সমাজের গর্ব হয়ে উঠতে পারবে।”
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুম ভূঁইয়া জানান, “বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। মাসুম প্রতিবন্ধী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি চাইলে পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি জানি, তিনি খুবই ভদ্র ছেলে এবং বিভিন্ন দপ্তরের কম্পিউটার সার্ভিসিং দায়িত্বশীলভাবে সম্পন্ন করেন।”