এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবন উপকূলে বাগেরহাটের ফকিরহাট নোয়াপাড়ার ঐতিহ্যবাহী পানের হাট দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও রবিবার ভোর চারটায় বসা এ হাটে দিনে প্রায় কোটি টাকারও বেশি কেনাবেচা হয়। শীতকালে তা দেড় থেকে দুই কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
শুধু বাগেরহাট নয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে ভিড় করেন। এখানকার পান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো ছাড়াও বিদেশেও রপ্তানি হয়।
### দাম কম, খরচ বেশি—হতাশ চাষিরা
তবে শতবর্ষী ঐ হাটের চাষিরা আগের মতো ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। পানচাষের উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হলেও বাজারে সেই অনুযায়ী দাম মিলছে না। ফলে অনেকেই লোকসান গুনে হতাশ হয়ে পেশা পরিবর্তনের চিন্তা করছেন।
পানচাষি আলমগীর হোসেন বলেন, _“এই পান চাষ করেই সংসার চালাই। কিন্তু দাম না পেলে হয়তো অন্য কাজ খুঁজতে হবে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না।”_
চাষি আব্দুল গফফার বলেন, _“আগে এক গাদা পান বিক্রি করে সংসার চলত, এখন সেই টাকায় শ্রমিকের মজুরিও ওঠে না।”
আরেক চাষি জব্বার মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, _“সুপারির দাম বাড়লেও পানের দাম দিন দিন কমছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চাষিরা আর টিকে থাকতে পারবে না।”_
হাটের অবকাঠামোও এখন নাজুক অবস্থায়। নেই উন্নত শেড, বাথরুম বা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। বর্ষাকালে কাদা-পানিতে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য ন্যূনতম সুবিধাও নেই।
হাটের ইজারাদার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, _“প্রতিবছর ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব দিই। কিন্তু কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও হাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ছাউনিগুলো ভাঙাচোরা, ড্রেন নেই, মসজিদের বাথরুম পর্যন্ত তালাবদ্ধ থাকে। ফলে শতবর্ষী এ হাট দিন দিন তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।”_
ফকিরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন জানান, _“আমি সম্প্রতি হাটের সমস্যার কথা জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করব। এরপর হাট-বাজার উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রকল্প গ্রহণ করে এর সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”
নোয়াপাড়ার এ হাট শুধু বাণিজ্য নয়, এলাকার গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। তবে ন্যায্য দাম নিশ্চিত না হলে এবং অবকাঠামো উন্নয়ন না ঘটলে একসময় এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।