এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলীয় গ্রামবাংলা থেকে এক সময়ের চিরচেনা ও মিষ্টি ডাকার ঘুঘু পাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে। নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে শিকার, ফসলের জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার—এসব কারণে গ্রামের মাঠে-ঘাটে আর ঘুঘুর সেই কোমল কূজন শোনা যায় না।
ডুমুরিয়া অঞ্চলের মাঠ-প্রান্তরে এখন আর সকাল কিংবা দুপুরে “ক্রউ-উ-উ-উ” বা “গুউ-গুউ-গুউ” স্বরে ঘুঘুর মিষ্টি ডাক শোনা যায় না। একসময় কৃষি জমি, খামার, ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গল ও গ্রামের গাছে ডালে ঘুঘু পাখির উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক দৃশ্য। অনেক শৌখিন মানুষ ঘুঘু পাখিকে খাঁচায় পুষতেও। ধান ছিল ঘুঘুর প্রধান খাদ্য, পাশাপাশি ঘাস, আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচি পাতাও খেতো তারা।
গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু পাখি দেখা যেত; এর মধ্যে রাম ঘুঘু, মেঠে ঘুঘু, লাল ঘুঘু ও তিলি ঘুঘুর সংখ্যাই ছিল বেশী। স্ত্রী ঘুঘু সাধারণত বছরে একবার এক জোড়া ডিম পাড়ে এবং মাত্র ১২ দিনেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। একসময় মাঠে-ঘাটে, গাছের ডালে ডালে ঘুঘুর দেখা মিললেও বর্তমানে তাদের পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
নির্বিচারে শিকার এবং প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এই অভ্যন্তরীণ ভীতু ও লাজুক প্রকৃতির পাখি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ডুমুরিয়ায় পাখি প্রেমিকরা যেমন আব্দুল জব্বার, এরশাদ আলী, আহমেদ আলী, লাল মিয়া ও আলী আহমেদ জানান, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়া, ঝোপ-ঝাড় ও গাছপালা কেটে ফেলা, নিরাপদ আবাসস্থলের সংকট ও নির্বিচারে শিকার—এসব কারণে ঘুঘু পাখির সংখ্যা ও ডিম পাড়ার হার কমে যাচ্ছে এবং তারা বিলুপ্তির পথে।