ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে ছাত্র ও জনতার ওপর হামলার ঘটনায় একাধিক মামলার পলাতক আসামি মোখলেসুর রহমান মুকুলকে কক্সবাজারের সুগন্ধা বিচ পয়েন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, “ভোরে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মুকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে একাধিক মামলা রয়েছে।”
রাজশাহীর স্থানীয় মহলে মোখলেসুর রহমান মুকুল ‘হুন্ডি মুকুল’ নামে পরিচিত। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া গোবিন্দপুর মহল্লায়।
২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে হুন্ডি কারবারিদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান হুন্ডি চক্রের হোতা হিসেবে দ্বিতীয় নাম ছিল মুকুলের।
এক সময় পাড়ায় ছোট মুদিদোকান চালালেও মুকুল পরে হুন্ডি ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের জগতে জড়িয়ে পড়েন। এ পেশায় যুক্ত হয়ে তিনি অল্প সময়েই বিপুল বিত্তের মালিক হয়ে ওঠেন।
তার সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গরু পাচার সিন্ডিকেটের হোতা এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। জানা যায়, এনামুল ভারতে ধরপাকড় শুরুর পর এক হাজার রুপি পাঠিয়েছিলেন মুকুলের কাছে, যার অর্ধেক মুকুল আত্মসাৎ করেন—এমন গুঞ্জনও আছে এলাকাজুড়ে।
মুকুলকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ছায়ায় আগলে রেখেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আসাদ তার নির্বাচনী প্রচারণায় মুকুলের দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর সেই গাড়ি উপহার পান তিনি। এর পরেই মুকুল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার একটি বালুমহালের ইজারা পান, যা তার কালো টাকা বৈধ করার একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
মুকুল পরবর্তীতে ঠিকাদারি ব্যবসায় নাম লেখান এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পে কাজ করেন। যদিও স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, এসব কাজ থেকে লাভের বদলে লোকসান হয়েছে বলে দেখানো হয়, কিন্তু বাস্তবে মুকুল বিপুল লাভ করেন।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পরও তিনি সেই বালুমহালের ইজারা পান। আত্মগোপনে থেকেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে নিজেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে রাজশাহীতে বিক্ষোভ হয়।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি আরও জানান, “মুকুলকে রাজশাহীর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুপুরে তাকে কক্সবাজার আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।