রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর প্রতিনিধিঃ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে মনগড়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপতথ্য দিয়ে তৈরি সংবাদ প্রচার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের। কাঞ্চবালা এক নারীকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত সংবাদ প্রচার করে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
সম্প্রতি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের শুকদেবপুর গ্রামের মৃত তৈলাক্ষ রায়ের স্ত্রী কাঞ্চবালা, গত ৫ আগষ্টের পর রাধিকাপুর দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় বিএসএফ এর হাতে আটক হন। ভারতের গংগারামপুরে মেয়ের বাড়ীতে যাওয়ার সময় আটক কাঞ্চবালাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে চালানো হয় নানা অপপ্রচার। উল্লেখ করা হয়, ৫ আগষ্টের পর তার বাড়ীতে হামলা চালানোর পাশাপাশি করা হয় অগ্নিসংযোগ।
শুধু তাই নয় পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার মেয়েকে খুন করার মত যে তথ্য প্রচার করা হয় তা মিথ্যে ও বানোয়াট বলে জানিয়েছেন কাঞ্চবালার স্বজনেরা। সরজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। কাঞ্চবালার ছেলের বউ ভারতী রানী বলেন, আমাদের বাড়ীতে কোন আগুন দেয়নি, কোন ক্ষতি হয়নি এগুলো সব মিথ্যা কথা, নীতাই রায় বলেন, ধর্ষণ, আগুন লাগা, এবং অত্যাচার করা এগুলো সব মিথ্যা। কাঞ্চবালা নাতী বলেন, আমার দাদীকে দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ গুলো অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এগুলো সব মিথ্যা কথা।
কাঞ্চবালার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিপদ আপদে দীর্ঘদিন যাবত হিন্দু মুসলিম সকলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। কাঞ্চবালার প্রতিবেশি বলেন,মুসলমানরা আমাদের উপর অন্যায় অত্যাচার করছে,আগুন ধরে দিয়েছে বা আমাদেরকে দেখতে পারে না, এগুলো সব মিথ্যা কথা।
এদিকে কাঞ্চবালাকে দিয়ে,উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ভারতীয় মিডিয়া অপপ্রচারের এসব কথা বলতে বাধ্য করেছেন বলে জানান স্থানীয় সচেতনমহল। তাদের দাবি ৫ আগষ্টের পর নয়, বিগত এক দশকেও এমন ঘটনার নজীর নেই, এই ইউনিয়নে।
মোমিনপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য জনাব খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন,কাঞ্চবালার কথাগুলো যেভাবে উপস্থাপন করেছেন মিডিয়ার সামনে,এই কথাগুলো বলা আজও তার পক্ষে সম্ভব নয়।আসলে এই কথাগুলো বলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা তাদের মুখ্য বিষয় এবং মোমিনপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জনাব নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনা একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা, এরকম ঘটনা আমার গ্রামে বা আমার ইউনিয়নে কোথাও ঘটে নাই।
বাংলাদেশ ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সনাতন ধর্মালম্বী সভাপতি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জনাব কৈলাশ প্রসাদ সোনার। তিনি বলেছেন,বিষয়টি বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর একটা অপচেষ্টা। কারণ আমরা পার্বতীপুরবাসী ৫ আগষ্টের পর এই সরকারের সময় শান্তিতে আছি।
গত ৫ আগষ্টের পর কাঞ্চবালার উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে কোন রেকর্ড পার্বতীপুর থানায় নেই। এই ঘটনায় ভারতীয় মিডিয়ার রিপোর্ট ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন, অফিসার্স ইনচার্স, পার্বতীপুর মডেল থানা,দিনাজপুর।
ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদের ভিত্তি পার্বতীপুর থানায় যোগাযোগ করে জানাযায়, কাঞ্চবালার মেয়েকে ধর্ষণ, বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, এরকম কোন ঘটনা ঘটে নাই বা এরকম কোন অভিযোগ নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতের সরকার ও গণমাধ্যম শ্রদ্ধাশীল হবেন। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। একই সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সত্যনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার করবে। এটা উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।