শিরোনাম
◈ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো ১৯ হাজার বাসিন্দাকে ◈ আগামী নির্বাচনে অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি এআই’র অপব্যবহার: সিইসি (ভিডিও) ◈ বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মাসুমা নামে মাইলস্টোনের অফিস সহকারীর মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৩৫ ◈ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল কুয়ালালামপুর! ◈ আওয়ামী লীগ থেকে তো প্রচুর যোগাযোগ হচ্ছেই, আমাকে বলে দলের হাল ধরতে: তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে ◈ এপস্টাইন কী ভাবে ‘শিকার’ ধরতেন? কী করতেন প্রেমিকা? আমেরিকা থেকে স্মৃতিচারণ ভুক্তভোগীর, চ‌লে আস‌লো ট্রাম্পের নাম  ◈ শয়ে শয়ে মুসলমানকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে তাড়াচ্ছে ভারত: হিউমান রাইটস ওয়াচ এর প্রতি‌বেদন ◈ নিম্নচাপ ও অমাবস্যার জোড়া প্রভাবে উপকূল প্লাবিত, দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে ◈ শর্ট বল খেলতে না পারলে টেস্ট খেলার দরকার কী? : সু‌নিল গাভাস্কার ◈ ভারতের ফুটবল কোচ হতে চান জাভি হার্না‌ন্দেজ, আবেদনে সারা দেয়নি ফেডারেশন

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১২:০৫ রাত
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০২:১৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মহানবী (সা.)-এর যে ৯টি অভ্যাস সুস্থ জীবন যাপনে অত্যন্ত উপকারী ছিল

ডিসকভারিং ইসলাম আর্কাইভ: মহানবী (সা.)-এর জীবনশৈলী শুধু ধর্মীয় বিচারে নয়, বরং আধুনিক সময়ে বিজ্ঞানময় জীবন যাপনের দিন থেকেও একটি অনুকরণীয় আদর্শ। তাঁর দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি এবং সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য অত্যন্ত উপকারী ছিল।

আধুনিক গবেষণা তাঁর অনেক অভ্যাসের স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রমাণ করেছে, যা আমাদের জন্য তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। আজ আমরা নবী (সা.)-এর নয়টি অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করব।

১. ভোরে ওঠা
নবীজি (সা.) প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতেন। সকাল সকাল জেগে ওঠা উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ভোরে ওঠেন, তারা দিনের কাজে বেশি মনোযোগী হন এবং তাদের মানসিক চাপ কম থাকে (ম্যাক্সওয়েল, জে., দ্য পাওয়ার অফ অ্যারলি মর্নিং, হার্পারকলিন্স, নিউ ইয়র্ক: ২০১৮, পৃ. ৪৫-৪৭)।

নবীজির এই অভ্যাস আমাদের শেখায় যে, দিনের শুরুতে উঠে নিয়মিত রুটিন মেনে চলা জীবনের গুণগত মান বাড়ায়। এমনকি প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

২. কম খাওয়া
নবীজি (সা.) কম খাওয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। তিনি বলেছেন, পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখতে (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৯)।

জাপানের ‘হারা হাচি বু’ নীতিতে বলা হয়েছে, পেট ৮০% পূর্ণ হলে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। আধুনিক গবেষণাও বলছে যে, কম খাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং দীর্ঘায়ু বাড়াতে সাহায্য করে (মাকিনো, টি., ওকিনাওয়া ডায়েট, বার্কলে বুকস, নিউ ইয়র্ক: ২০০১, পৃ. ৮৯-৯২)।

৩. ধীরে খাওয়া
নবীজি (সা.) ধীরে ধীরে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, খাবার তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৪৮)।

মস্তিষ্কে পূর্ণতার সংকেত পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। ধীরে খাওয়া হজমশক্তি উন্নত করে এবং অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করে (পোলান, এম., ইন ডিফেন্স অফ ফুড, পেঙ্গুইন বুকস, লন্ডন: ২০০৮, পৃ. ১১২-১১৪)।

নবীজির এই অভ্যাস আমাদের শেখায় যে, খাওয়ার সময় সচেতনতা বজায় রাখা শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. একসঙ্গে খাওয়া
নবীজি (সা.) বলেছিলেন: “একসঙ্গে খাও, পৃথকভাবে নয়, কারণ বরকত সঙ্গীদের সঙ্গে থাকে” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭)।

পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া মানসিক চাপ কমায় এবং শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে (ফিস্ক, ডি., ফ্যামিলি মিলস, হার্পারকলিন্স, নিউ ইয়র্ক: ২০১৬, পৃ. ৬৭-৭০)।

এই অভ্যাস সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

৫. ধীরে পানি পান
নবীজি (সা.) পানি পানের সময় তাড়াহুড়ো না করে দুই বা তিনবার শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে পান করতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৩১)।

একসঙ্গে অতিরিক্ত পানি পান করলে মাথাব্যথা, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং মাঝে মাঝে মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। ধীরে পানি পান করা শরীরের জন্য পানি শোষণে সহায়তা করে এবং সর্বাধিক উপকার নিশ্চিত করে (ক্লিনম্যান, এইচ., দ্য ওয়াটার ওয়ে, উইলি, নিউ ইয়র্ক: ২০১৪, পৃ. ৫৫-৫৭)।

৬. ডালিম খাওয়া
নবীজি (সা.)-এর প্রিয় একটি ফল ছিল ডালিম। ডালিম অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, যাতে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে, যা বিপাক প্রক্রিয়ায় হাড়ের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এতে পটাশিয়াম রয়েছে, যা কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং ফ্লুইড ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। ডালিমে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল হৃদরোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে (আয়োশি, এ., দ্য পাওয়ার অফ পোমেগ্রানেট, স্প্রিঙ্গার, লন্ডন: ২০১৫, পৃ. ৩২-৩৫)।

নবীজি (সা.)-এর এই খাদ্যাভ্যাস আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৭. রোজা রাখা
নবীজি (সা.) শুধু রমজানে নয়, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৮০)।

এই ধরনের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং প্রদাহ হ্রাস করে। রোজা শরীরকে হজমের পরিবর্তে নিরাময় প্রক্রিয়ায় মনোযোগ দিতে সাহায্য করে (লংগো, ভি., দ্য লঞ্জেভিটি ডায়েট, পেঙ্গুইন বুকস, নিউ ইয়র্ক: ২০১৮, পৃ. ১০৫-১০৮)।

নবীজি (সা.)-এর এই অভ্যাস আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৮. খেজুর খাওয়া
নবীজি (সা.) রোজা ভাঙার জন্য খেজুর খেতেন এবং বলেছিলেন: “যে পরিবারে খেজুর আছে, তারা ক্ষুধার্ত থাকবে না” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৪৬)।

খেজুর রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করে, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে শুরু করতে সাহায্য করে। এছাড়া, খেজুরে অক্সিটোসিন উৎপাদন বাড়ায়, যা প্রসবকালীন সংকোচন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক (জোন্স, এল., দ্য ডেট পাওয়ার, উইলি, নিউ ইয়র্ক: ২০১৬, পৃ. ৭৮-৮০)।

৯. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা
নবীজি (সা.) শারীরিক সুস্থতার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটি—নামাজ, রোজা ও হজ্জ—শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। নামাজ নিজেই একটি শারীরিক ব্যায়াম, যা পেশি ও জয়েন্টের নড়াচড়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। তিনি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি উৎসাহ দিতেন (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, অনুবাদ: মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১২, ৪/২৩৪)।

নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে (হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং, দ্য বেনিফিটস অফ ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, বোস্টন: ২০১৭, পৃ. ৫৪-৫৬)।

বোঝা যায়, নবীজি (সা.)-এর এই নয়টি অভ্যাস শুধু ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং আধুনিক সময়ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য একটি আদর্শ। ভোরে ওঠা, কম ও ধীরে খাওয়া, রোজা রাখা, খেজুর ও ডালিমের মতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা—এই অভ্যাসগুলো আমাদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম জীবনের কথা বলে। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই অভ্যাসগুলো গ্রহণ করতে পারি।

সূত্র: প্রথমআলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়