হাবিবুর রহমান সোহেল,কক্সবাজার : দেশে চলমান সংকটকালীন সময়ে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে অভাব অনটন লেগে আছে। এর মাঝে আবার সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। যার কারণে কাজ না থাকায় কক্সবাজার জেলার উপকূলে অলস সময় পার করছেন জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞার এক মাস পার হলেও এখনো প্রণোদনার খাদ্য সহায়তা পায়নি জেলেরা। এতে মানবেতর জীবন পার করছে জেলে পরিবারগুলো। আর নানা কারণে বরাদ্দ আসতে দেরি হয়েছে কিন্তু অচিরেই জেলেদের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌছাবে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
সুত্রমতে, কক্সবাজারে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে ৬ হাজার ৭৮৪টি, আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। এর সাথে অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে আরো ১০ হাজার সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫ হাজারেরও বেশি জেলের হাহাকার চলছে খাদ্যের অভাবে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে, তাই কাজ না থাকায় বাঁকখালী নদীর মোহনায় বসে বসে জাল সেলাইয়ের কাজ করছেন কাসেম ও রফিক। এমন কাজে দূবেলা ভাতও জুটে বলে জানান তারা। তাদের যেন দুশ্চিন্তার শেষ নেই। জেলে কার্ড থাকলেও এখনো পায়নি প্রণোদনার খাদ্য সহায়তা।মাছ ব্যবসায়ী নুরুল আমিন বলেন, আমরা তো খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। এবছর এমনিতে সাগরে মাছ পায়নি, সারাবছর লোকসান গুনতে হয়েছে। তার ওপর বন্ধের মধ্যে সরকারি কোন সহায়তা পাচ্ছি না। আমাদের কষ্টের যেন শেষ নেই। জেলে সজল মিয়া বলেন, ‘আগে তো বন্ধের ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চাল পাওয়া যেত। কিন্তু এবার বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ এখনো কোন চাল পায়নি। এখনো কোন খবর নেই। কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।’জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিভাবে চলছি, কিভাবে বউ-বাচ্চাদের চালাবো, কোন কুল-কিনারা পাচ্ছি না।’ এসব দুঃখ-দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘবের জন্য দ্রুত প্রণোদনার খাদ্য সহায়তা জেলেদের কাছে পৌছানোর দাবি জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাগরে মাছ শিকারে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক মাস শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো জেলেরা বরাদ্দে চাল পায়নি। জেলেরা খুবই অসহায় জীবন-যাপন করছে। তাই সরকারের উচ্চ মহলের কাছে আহ্বান করছি দ্রুত যাতে নিষেধাজ্ঞাকালীন বরাদ্দ চাল জেলেদের কাছে পৌছানো হয়। কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুজয় পাল বলেন, গতবার সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল ৬৫ দিনের এবং যা কার্যকর হতো জুন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। এবার যেহেতু একমাস আগে চলে এসেছে বন্ধটি সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই একটা নতুন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে একটু সময় লাগে। যা কারণে সময়টা লেগেছে। আবার একই অর্থবছরের মধ্যে দুটি কিন্তু নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় পড়ে গিয়েছে। সেহেতু এবার বাজেটের যে সংকুলন সেটি করাটাও একটা বিষয়। সেটি করতেও একটু সময় লেগেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের কাছে একটা বরাদ্দ এসেছে। সেটি হচ্ছে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪২ দিনের ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ এসেছে জেলেদের জন্য। সেটা আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। অচিরেই আমরা সংশ্লিষ্ট জেলেদের নিকট এই বরাদ্দ পৌছাতে পারব আশা করছি।