শিরোনাম
◈ ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন? সেনাপ্রধানের বার্তা ও রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ বাড়ছে ◈ নতুন যুগে সাইবার আইন: বিতর্কিত ৯ ধারা বাদ দিয়ে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি ◈ স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই হয়তো এ দেশের ভাগ্য: আসিফ মাহমুদ ◈ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া: বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে আদানি পাওয়ার ◈ জাতীয় ঐক্য রক্ষা নিয়ে মিজানুর রহমান আজহারির পোস্ট ◈ ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন, লাশ নিয়ে পালাতে গিয়ে স্ত্রীসহ আটক (ভিডিও) ◈ অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’: নাহিদ ইসলাম ◈ মুজিবের ছবি ছাড়াই নতুন নোট ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক  ◈ বাংলাদেশের দুটি 'চিকেন নেক' কেটে দেব: আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি ◈ হাজার হাজার ‘বাংলাদেশিকে’ ফেরত পাঠাতে চায় ভারত

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৫, ০২:৫৫ রাত
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নতুন যুগে সাইবার আইন: বিতর্কিত ৯ ধারা বাদ দিয়ে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ জারি

বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর গেজেট প্রকাশ করেছে। গত বুধবার রাতে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া বিতর্কিত ৯টি ধারায় বিচারাধীন ও তদন্তাধীন সব মামলা এবং কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব ধারায় আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ড ও জরিমানাও বাতিল করা হয়েছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫’-এ।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সাইবার স্পেস ব্যবহার করে পরিচালিত সব ধরনের জুয়া বা অনলাইন জুয়া, প্রতারণা ও জালিয়াতি। এ ছাড়া অনলাইনে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশাপাশি ধর্মীয় বা জাতিগত বিষয়ে সহিংসতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রকাশ ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মত প্রকাশের মামলা জামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে যদি সাইবার অপরাধ করা হয় সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আগের আইনের মতোই পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অধ্যাদেশে।

অধ্যাদেশে বলা হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ নাগরিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয় বিধান ছিল না, যার ফলে সেই আইন অপব্যবহার ও নিপীড়নের সুযোগ তৈরি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছিল। তাই ওই আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অনলাইনে সংঘটিত অপরাধ শনাক্ত, প্রতিরোধ, দমন ও এসব অপরাধের বিচারসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন বিতর্কিত ধারা এবং তার অপব্যবহারের কারণে আইনটি বাতিলের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছরের নভেম্বরে আইনটি বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশিত প্রথম খসড়াতেও কিছু ধারা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সে অবস্থায় গত ২৪ ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদ তা অনুমোদন দেয়। সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার সেখানে আবার কিছু সংশোধনী আনে।

সর্বশেষ ৬ মে উপদেষ্টা পরিষদ তা আবার অনুমোদন দেয়। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করে ২৫ বার পরিবর্তন করা হয়েছে।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা ২১, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩১ ও ৩৪ বাদ দেওয়া হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ধারাগুলোয় আদালত বা ট্রাইব্যুনালে নিষ্পন্নাধীন কোনো মামলা বা অন্যান্য কার্যধারা ও তদন্তাধীন মামলা বাতিল হবে এবং কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। এ ছাড়া এসব ধারায় আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ড ও জরিমানা বাতিল বলে গণ্য হবে।

বাদ পড়া ওই ৯টি ধারায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ; অনুমতি ছাড়া পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার ইত্যাদির দণ্ড; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার ইত্যাদি।

তবে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২২, ২৩, ৩০, ৩২ এবং ৩৫ ধারার অপরাধের অনিষ্পন্ন মামলাসমূহ ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল চলমান থাকবে। উক্ত ৯টি ধারায় যেসব মামলার রিপোর্ট বা অভিযোগ করা হয়েছে, সেই সব মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে।

অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সাইবার স্পেসে জুয়া খেলার জন্য কোনো পোর্টাল বা অ্যাপ বা ডিভাইস তৈরি করেন বা পরিচালনা করেন বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করেন বা খেলায় সহায়তা বা উৎসাহ প্রদান বা উৎসাহ প্রদানের জন্য বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ এবং প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে প্রচার বা বিজ্ঞাপিত করেন; তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড পেতে হবে।

এ ছাড়া সাইবার স্পেসে জালিয়াতিকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এ জন্য অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান করা হয়েছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে প্রতারণাকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য এবং এই অপরাধের জন্য অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের ১৭, ১৮ এর উপধারা ১ এর গ, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ ও ২৫ এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অন্যান্য ধারায় বর্ণিত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের অধীনে দায়েরকৃত মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ১৩৫ দিনের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে কোনো মামলা অভিযোগ গঠনের তারিখ থেকে ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে আরও ৯০ কার্যদিবস পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাইবার নিরাপত্তা আইনে পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা (৪২ নম্বর ধারা) বাতিলের দাবি উঠেছিল। নতুন অধ্যাদেশের ৩৫ এর (ঘ) ধারায় পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধ করেছেন বা করছেন বলে সন্দেহ হলে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে পুলিশ। এ ছাড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহ তল্লাশি এবং অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করতে পারবে পুলিশ।

অধ্যাদেশের ৮ ধারা অনুযায়ী, ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য উপাত্ত দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঘৃণামূলক বা জাতিগত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, যা সহিংসতা তৈরির উদ্বেগ সৃষ্টি করেÑ এমন তথ্য, উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করতে পারবে সরকার।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি এসএম আশরাফুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, সামগ্রিক দিক থেকে আমাদের কাছে অধ্যাদেশটি ভালো মনে হয়েছে। আগের আইনে সাইবার অপরাধের মামলা ইন্সপেক্টরের নিচে কোনো পুলিশ অফিসার তদন্ত করতে পারতেন না। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে একজন সাব ইন্সপেক্টর সাইবার অপরাধের মামলা তদন্ত করতে পারবেন। এটা আমাদের জন্য ভালো দিক।

অধ্যাদেশে ‘জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি’ নামে একটি এজেন্সি গঠনের কথা বলা হয়েছে। একজন মহাপরিচালক ও বিধি ধারা নির্ধারিত সংখ্যক পরিচালকের সমন্বয়ে এই এজেন্সি গঠিত হবে। এজেন্সির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকবে। তবে প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে দেশের যে কোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।

এ ছাড়া ‘জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে, যার প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা। এই কাউন্সিলের ক্ষমতার বিষয়ে বলা হয়েছেÑ কাউন্সিল, এই অধ্যাদেশ ও তদাধীন প্রণীত বিধির বিধান বাস্তবায়নকল্পে, এজেন্সিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করবে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়