শাহীন খন্দকার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সদ্য প্রয়াত ঢাকার বাসাবোর বাসিন্দা নন্দিতা বড়ুয়ার (৬৯) নন্দিতা বড়ুয়ার মরণোত্তর দেহদান অনুষ্ঠান হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি তার দেওয়া কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস (২৩) ও পটুয়াখালীর দলিল লেখক আব্দুল আজিজের (৫০)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এনাটমি বিভাগের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নন্দিতা বড়ুয়ার দেহগ্রহণকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহ আলম, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান, কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস, নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়া. নন্দিতা বড়ুয়ার কর্নিয়া গ্রহীতা জান্নাতুল ফেরদৌস ও আব্দুল আজিজ প্রমুখসহ এনাটমি বিভাগের শিক্ষক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়াও মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা পোষণ করেন।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নন্দিতা বড়ুয়ার এই মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা করছি। মরণোত্তর দেহদানকারির দুই কন্যা শাপলা বড়ুয়া এবং সেজুতি বড়ুয়াসহ পরিবারের সকলকে এই ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উপাচার্য আরো বলেন, দেশের প্রথম ক্যাডাভেরিক অঙ্গদাতা হিসেবে সারা ইসলাম বাংলাদেশের মানবকল্যাণে যেমন ইতিহাস, যেমন তেমনি নন্দিতা বড়ুয়ার অবদানও মানব জাতি মনে রাখবে। সারার পথ অনুসরণ করে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদান ও মরণোত্তর দেহদানের আন্দোলনে সামিল হয়েছেন নন্দিতা।
তিনি বলেন, গত একমাসে মরণোত্তর চক্ষু দান প্রক্রিয়ায় ১২ জনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কর্নিয়া গ্রহীতারা বেশ ভাল আছেন। তিনি দেশের সকল মানুষের প্রতি এই রকম মহতী কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকে বেগবান করা হয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার কাজে দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করার একটি প্রয়াস হল এই মরণোত্তর দেহদান। অনুষ্ঠানে নন্দিতা বড়ুয়ার মরদেহটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগে সংরক্ষণ, এবং শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের আবেদনপত্রটি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নিকট পাঠানো হয়।
জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক ডা: মো. শারফুদ্দিন আহমেদের অনুমতিতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এনাটমি বিভাগের প্ল্যাস্টিনেশন ল্যাব এ্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্সে সম্পন্ন করা হয়। মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়ার শুরুতে এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং এনাটমি বিভাগের সকল শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি রাত ২টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নন্দিতা বড়ুয়া ৬৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। কিডনি রোগের পাশাপাশি এসএলই ও ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। জীবদ্দশাতেই তিনি তার মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারে সন্তানদের কাছে ইচ্ছেপোষণ করে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নিয়া বিশেষজ্ঞরা প্রয়াতার কর্নিয়া সংগ্রহ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান পটুয়াখালীর দশমিনা সাব-রেজ্রিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আব্দুল আজিজের চোখে ও অপথালমোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস ঝালকাটি জেলার কাওখালি কলেজের ব্যবস্থাপনার বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসির চোখে একটি করে কর্নিয়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন।
১৯৫৩ সালের ২রা জুন চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে নন্দিতা বড়ুয়ার জন্ম হয়। মা সন্ধ্যারানী বড়ুয়া। বাবা রাজকৃষ্ণ বড়ুয়া। বাবা ছিলেন স্কুলের হেড মাস্টার। তিনি কোলকাতা আশুতোষ কলেজে পড়াকালীন কংগ্রেসের সাথে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
নন্দিতা বড়ুয়া ৬ বোন, ২ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। স্বামী বাবুল প্রসাদ বড়ুয়া ছিলেন বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
নন্দিতা বড়ুয়া ঢাকার বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। তার ২ মেয়ে, ১ ছেলের মধ্যে মেয়ে শাপলা বড়ুয়া একজন আইনজীবী, সেঁজুতি বড়ুয়া কবি ও সাহিত্যিক। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম
এসকে/এমআই/এনএইচ
