হাবিবুর রহমান, কক্সবাজার: [২] বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকতের মুক্ত আকাশে উড়ছে রং-বেরঙের রঙিন ঘুড়ি। যে ঘুড়ি দেখে শৈশব স্মৃতি খুঁজছে পর্যটকসহ নানা বয়সের মানুষ। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত পর্যটন মেলার ৫ম ও ৬ষ্ট দিন সোমবার (২ অক্টোবর) বিকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে চলে ঘুড়ি উৎসব।
[৩] সড়েজমিনে দেখা যায়, সৈকতের আকাশ দখলে নিয়েছে বিশাল আকৃতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যার ভয়ে আশপাশে ভিড়তে পারছে না জেলিফিশ, স্কুইড, ঈগল, উড়োজাহাজ, ডরিমন, পকেট কাইট, কচ্ছপ, সিংহ, ডলফিনসহ রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। কিন্তু রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে মেতে উঠেছে পর্যটকসহ নানা বয়সের মানুষ। ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পড়ন্ত বিকেলে শুধু রয়েল বেঙ্গল টাইগার নয়; সামুদ্রিক প্রাণী, কার্টুন, প্রজাপতিসহ বিভিন্ন আদলে তৈরি দেশি-বিদেশি ঘুড়ি যেন দখল করে নেয় সৈকতের নীল আকাশ। বালুকাময় সৈকতের আকাশে শোঁ শোঁ করে উড়ছে লাল, নীল, বেগুনি, সাদা, রং-বেরংয়ের সব ঘুড়ি। পর্যটকদের কাছে অন্যরকম আবেগতো রয়েছেই, বিশেষ করে শিশুরা মেতে উঠে বর্ণিল আনন্দে।
[৪] ফারদিন নামের এক শিশু বলেন, অনেক ভালো লাগছে। নীল আকাশে অনেক রঙের ঘুড়ি। বাঘ রয়েছে, কিন্তু আমি উড়াচ্ছি প্রজাপতি। বালিয়াড়িতে ঘুড়ি উড়াতে খুব ভালো লাগছে। এই প্রথম বালিয়াড়িতে ঘুড়ি উড়াচ্ছি। মায়েশ নামের আরেক শিশু বলেন, প্রথমে ঈগলের ঘুড়ি উড়িয়েছি। তারপর ডরিমনের ঘুড়ি উড়িয়েছি। বেশ মজা পেয়েছি। অনেক দৌড়াদৌড়ি করছি। দুরন্ত শৈশব, ঘুড়ি-লাটাই, মুক্ত আকাশ, গ্রামের বিস্তৃত মাঠ- সবই এখন স্মৃতি। কিন্তু ঘুড়ি উৎসবে ঘুড়ি-লাটাই হাতে যেন সেই হারানো শৈশবকে ফিরে পেয়েছেন অনেকে।
[৫] সৈকতে বালিয়াড়িতে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলেন নারগিস সুলতানা কান্তা। তিনি বলেন, আগে কোনদিন ঘুড়ি উড়ায়নি। এই প্রথম ঘুড়ি উড়াচ্ছি, বেশ মজা পাচ্ছি। আর সাগরপাড়ে ঘুড়ি উড়াতে অন্যরকম মজা পাচ্ছি। রঙ-বেরঙের ঘুড়িতে সৈকত আকাশটা অসাধারণ লাগছে।
[৬] বালিয়াড়িতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঘুড়ির সঙ্গে ছবি তুলছেন জান্নাতুল ফিরদাউস। তিনি বলেন, আমার ঘুড়ি উড়ানো এবারই প্রথম। নানা রঙের ঘুড়ি উড়ছে আকাশে দেখতে খুব ভালো লাগছে। আর বিশাল আকৃতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঘুড়ির সঙ্গে ছবি তুলে আরো বেশি মজা পেয়েছি। রয়েল বেঙ্গল টাইগারটা অসাধারণ লাগছে, মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগার তো দেখি নিচে চলাফেরা করে। কিন্তু এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখি আকাশে উড়ছে। সত্যিই অসাধারণ সব ঘুড়ি।
[৭] সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা বলেন, কক্সবাজারের আকাশ হরেক রকম ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। বিচিত্র রং এবং বিশাল বিশাল ঘুড়ির সঙ্গে পরিচিত হয়েছি ও ছবি তুলে অনেক খুশি লাগছে।
[৮] জাতীয় ঘুড়ি ফেডারেশনের স্বেচ্ছাসেবক রানা সোহেল বলেন, কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের আনন্দ দিতে ভিন্ন ধরণের ঘুড়ি আনা হয়। যার অধিকাংশই চীন থেকে আনা। বিশেষ করে স্কুইড, টিকটিকি, ঘোড়া, হাতি, জাতীয় পতাকাসহ এক’শোর বেশি ঘুড়ি উড়ানো হয়েছে। আমরা খুব আনন্দিত, পর্যটকদের আনন্দ দিতে পেরেছি। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।
[৯] অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ঘুড়ি উড়ানো এমন একটি হৃদয়স্পর্শী খেলা যা আমার মনে হয় প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এই খেলাটি মিশে আছে। কিন্তু বর্তমানে বাঙালির প্রাণের এই খেলাটি এখন হারাতে বসেছে। তাই গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এই খেলাকে বাঁচিয়ে রাখতে পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভালে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন। আর ঘুড়ি উৎসবের মাধ্যমে ঘুড়ি ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে এই প্রত্যাশা করছি।
প্রতিনিধি/একে