শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: গত ২৭ এপ্রিল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সুর্বণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে গান গাইতে মঞ্চে উঠে মাতলামি করেছিলেন সারেগামাপা থেকে উঠে আসা গায়ক নোবেল। এরপর সেখানে উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতারা বিরক্ত হয়ে তাকে লক্ষ্য করে মঞ্চে পানির বোতল, ঢিল ও জুতা ছুড়ে মেরেছেন। সে প্রসঙ্গে এ কদিন কোনো কথা না বললেও এবার মুখ খুলেছেন তিনি।
একজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে তার কথোপকথনের একিটি অডিও এখন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মোবাইল ফোনে দেয়া ওই অডিও সাক্ষাৎকারে নোবেল দাবি করেছেন, সেদিন মঞ্চে উঠার আগে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সরবারহ করা কয়েক পেগ সিগনেচার ব্রান্ডের মদ পান করেন। এতে তিনি মাতাল ছিলেন না দাবি করে বলেন, ‘আমি মাতাল হইনি। এটা স্রেফ একটা দুর্ঘটনা। আমি আবারও ওই মঞ্চে গান করব, ইনশাআল্লাহ।’
অডিওতে নোবলেকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি দুই-তিনটা ক্লাবের সদস্য। আমার মদপানের লিগ্যাল লাইসেন্স রয়েছে। সেদিনের ঘটনায় বলেন, সেদিন অনেকটা পথ জার্নি করে গিয়ে ডিহাইড্রেড হয়ে গিয়েছিলাম। এমন না যে সেদিন আমি মাতাল ছিলাম। কোনোভাবে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমি রিকভার করে উঠতি পারিনি। ফলে আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা কথায় সেখানকার আমার হাজার হাজার শ্রোতা কষ্ট পেয়েছেন। আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কথার একপর্যায় তিনি আরও বলেন, তাদের থেকে আমি পঞ্চাশগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি।’
মদপানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আয়োজকদের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল মদ। স্টেজে উঠার আগে হালকা একটু রিলাক্সেশন, হালকা একটু ফিলিংসের দরকার পড়ে। অতিরিক্ত পান করার ধারে কাছে যাইনি। হেসে দিয়ে বলেন, এক বোতল সিগনেচার ধরেন যে ব্যান্ড মেম্বাররা সবাই মিলা খাইলে সেখানে দুই এক প্যাগের বেশি পাওয়া যায় না। আসলে সিচুয়েশনটা অতোটা খারাপ যায়নি, যতটা মানুষ তুলে ধরেছেন। শুধু একটা বোতল ছুড়ে মেরেছিল। এতটাই আমি বলতে পারব। এমন না যে আমি আউট অব সেন্স ছিলাম।’
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছে ভিন্ন কথা। সেদিন নোবেল মদ পান করে স্টেজে উঠেছেন, এটা স্বীকার করলেও তাদের পক্ষ থেকে মদ সরবরাহের কথা অস্বীকার করছেন তারা। আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ফুলবাড়ি জছিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী বলেন, আয়োজকদের পক্ষ থেকে নোবেলকে মদ সরবরাহের প্রশ্নই আসে না। কোথায়, কীভাবে নোবেল মদ পেয়েছে, কোথায় পান করেছে তা আমাদের জানা নেই।
কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজের ৫০বছর পূর্তিতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন র্যালি ও আলোচনা সভা হয়। ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি আসার কথা থাকলেও তিনি অসুস্থ্য থাকায় আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে।
ওই মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন কণ্ঠশিল্পী নোবেল। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে গান গাইতে মঞ্চে উঠে মাতলামি শুরু করেন তিনি। ভাঙা কণ্ঠে একটি গানও করেন। পরে মঞ্চে মাইক্রোফোনের স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলে এবং মাতলামি করলে তাকে উদ্দেশ্য করে প্রথমে পানির বোতল ও পরে জুতা নিক্ষেপ করেন দর্শকরা। অনুষ্ঠানটি অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করছিলেন। এসব ভিডিও পোস্ট করা হয় সেখানে। বিষয়টি গণমাধ্যমেও আসে। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠে সর্বত্র। ওই মঞ্চে পরের দিন কণ্ঠশিল্পী মনিরখানসহ অনেকে সংগীত পরিবশেন করেন।
এসসিডি/এসবি২