শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:১৯ রাত
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমুদ্রের ঢেউ আমাকে জীবনের পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায়

মৌসুমী মৌ

সারা বছর ব্যস্ততায় দিন কাটে। একটু ফুরসত পেলে ঘুরে বেড়াই দূরে কোথাও। সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া গিয়েছিলাম। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে যাওয়া। প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট ক্যাটালিনা আইল্যান্ড ঘুরেছি। এটি ঘুরে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আইল্যান্ডটির চারপাশে অপার সৌন্দর্য, গভীর নীল জলরাশি আর পাহাড়ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যেন চোখে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়। সমুদ্রের পানির স্বচ্ছতায় ভ্রমণ ছিল দারুণ আনন্দদায়ক। ছোট্ট দ্বীপ হলেও সাজানো-গোছানো পরিবেশ, পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন আর শান্ত বাতাস যেন এক ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় ভ্রমণে। মনে হয়েছে যেন স্বপ্নের মতো কোনো জগতে আছি।

এরপর লাস ভেগাস, নিউ মেক্সিকোতে আনন্দময় সময় কেটেছে। সেন্ট বারবারা, সেন্ট মনিকা ঘুরে নিউইয়র্কে গিয়েছি। এ আর রহমানের কনসার্ট দেখার সুযোগ হয়েছিল, যা ছিল আমার ভ্রমণের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে নিউ মেক্সিকোতে কাজিনের সঙ্গে গাড়ি ভ্রমণ এক অসাধারণ রোড ট্রিপে পরিণত হয়েছিল। 

আমার মিডিয়া ক্যারিয়ারের সুবাদে অনেক দেশেই যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রথম গিয়েছিলাম ভারতে, ২০১৬ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইম অ্যাকশন টিমের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম ‘বিশ্বমিল’ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসবে। ওই উৎসবের ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজসহ এশিয়ার অনেক দেশের ৫৮টি দল অংশ নেয়।

ভারতের হরিয়ানাতে ওই উৎসবে আমরা পুরস্কারও পাই। সেখান থেকে আমরা আগ্রায় যাই তাজমহল দেখতে। চাঁদের আলোয় সাদা মার্বেলের গম্বুজ যেন অলৌকিক সৌন্দর্যে ঝলমল করছিল। আলোয় তাজমহল যেন আরও রহস্যময় হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটির সামনে দাঁড়িয়ে যেন নিজেকে ইতিহাসের অংশ মনে হচ্ছিল। তাজমহলের প্রতিটি খোদাই ও নকশায় মুঘল স্থাপত্যের মহিমা অনুভব করেছি। তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে মন ভরে গিয়েছিল।

এরপর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইংল্যান্ড, মরক্কো, আমেরিকা, চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশেই যাওয়া হয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি সব দিক থেকে পরিপাটি, নিরাপদ আর গোছানো। সেখানে মানুষের শৃঙ্খলাপরায়ণতা ও আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তোলে। বারবারই অদৃশ্যের টানে দেশটিতে ফিরে যেতে মন চায়।

আমি প্রচণ্ড ভাতপ্রিয় মানুষ। ভেতো বাঙালি বলতে পারেন। যেখানেই যাই না কেন, ভাত খুঁজে বেড়াই। বাইরে শপিং করতেও ভালোবাসি। এবারের ভ্রমণে কেনাকাটার চেয়ে ঘোরাঘুরিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সমুদ্র আমার অসম্ভব প্রিয়। দেশের মধ্যে কক্সবাজার ঘুরতে সবসময় ভালো লাগে। সমুদ্রতটের টলমলে ঢেউ, অসীম নীল জলের ধারা আর সূর্যাস্তের লাল আভা যেন হৃদয়কে মোহিত করে রাখে। ভোরের আলোয় সমুদ্রস্নাত সৈকতে হাঁটলে মনে হয়, প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে। 

বিদেশের সমুদ্র যেমন সুন্দর, তেমনি আমাদের কক্সবাজারও যে কোনো পর্যটকের হৃদয়ে দাগ কাটবে। সৌদি আরবে গিয়েও আরব সাগরের তীরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছি। ঢেউয়ের গর্জন আর বাতাসের মৃদু স্পর্শে মন ভরে গিয়েছিল। প্রকৃতির সান্নিধ্য যেন আমার ভ্রমণপিপাসু মন শান্তি খুঁজে পায়। সমুদ্রই আমাকে সবসময় নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দেয়। সমুদ্রের দিকে তাকালে আমি নিজের ভেতর নতুন এক শক্তি খুঁজে পাই, যেন ঢেউয়ের মতো আমিও প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলতে পারি। ভ্রমণ আমার কাছে কেবল আনন্দই নয়; বরং জীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে দেয়।

লেখক: মৌসুমী মৌ, উপস্থাপক ও অভিনেত্রী।

সূত্র: সমকাল 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়