বাংলাদেশের সংগীতজগতে একসময় যে নামটি উজ্জ্বল আলোয় উদিত হয়েছিল, সেটি এখন বিতর্ক আর সমালোচনার আবর্তে—মাইনুল আহসান নোবেল। দেশের সংগীত অঙ্গনে রাজকীয় আবির্ভাব ঘটিয়ে তিনি দ্রুতই নজর কাড়েন, তবে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সেই স্থান হারান। সবশেষ, নারী নির্যাতনের এক মামলায় তাঁকে যেতে হয়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।
ঈদুল আজহার দিন, শনিবার ৭ জুন, কারাগারে আয়োজিত এক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বন্দি হয়েও মঞ্চে ওঠেন এই আলোচিত গায়ক। সেখানে নগর বাউল জেমসের গানসহ নিজের জনপ্রিয় কিছু গান পরিবেশন করে বন্দিদের হৃদয় ছুঁয়ে যান তিনি। তাঁর কণ্ঠে ‘অভিনয়’, ‘ভিগি ভিগি’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হয়ে গেলে’—এই গানগুলো শুনে আবেগে ভেসে যান সহবন্দিরা। কারা প্রাঙ্গণ যেন মুহূর্তে রঙিন হয়ে ওঠে সংগীতের সুরে।
ঈদের বিকেল সাড়ে তিনটায় কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বন্দিশালার মাঠে শুরু হয় এই সাংস্কৃতিক আয়োজন। সেখানে অংশ নিয়ে নোবেল শুধু গানই শোনাননি, বরং বন্দিদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবের আবহও সৃষ্টি করেন। কারাগারের ঈদ অনুষ্ঠান যেন ভিন্নমাত্রা পায় তাঁর পরিবেশনায়।
অনেকেই মনে করছেন, এই পরিবেশনা হয়তো নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে নোবেলের ভক্তদের কাছে। হয়তো তাঁরা চান, নোবেল নিজেকে সংশোধন করে আবার ফিরুন তার মূল পরিচয়ে—একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে।
তবে সংগীতের এই রঙিন মঞ্চের আড়ালে রয়েছে গুরুতর অভিযোগের ছায়া। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোবেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাঁকে মারধরের দৃশ্য দেখা যায়। ভিডিও দেখে ভুক্তভোগীর পরিবার তাঁকে শনাক্ত করে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেয়। পরে ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে।
এই ঘটনার ভিত্তিতে ডেমরা থানায় নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়। থানা সূত্র জানায়, তদন্ত চলাকালীন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলে নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সমালোচিত ও বিতর্কিত অবস্থান সত্ত্বেও ঈদের দিন জেলের অন্দরে সংগীত পরিবেশন করে নোবেল যে অন্য এক মুখ দেখিয়েছেন, তা বলাই যায়। তবে তাঁর ভবিষ্যৎ গানের মঞ্চে ফিরবে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।