এম এম লিংকন: জাতীয় সংসদে কমপক্ষে তিনটি সংরক্ষিত আসনের দাবি তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করেছে শিখণ্ডীদের (তৃতীয় লিঙ্গের) একটি প্রতিনিধি দল। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে গিয়ে নানা রকম বিড়ম্বনার সমাধান চান তারা। হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা সুস্থ জীবন নামে একটি বেসরকারী কমিউনিটি ভিত্তিক সংস্থা বুধবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে তারা এ দাবি জানান।
সুস্থ জীবন নামের এই সংগঠনটি একটি স্মারকলপি জমা দেওয়ার জন্য সিইসির কাছে সময় চান তারা। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ও রাশেদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সুস্থ জীবনের চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হবে সকলের অংশগ্রহণে। অন্ততপক্ষে সারাদেশে যেন তিনটি আসন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড কাউকে বাদ দিয়ে নয়। তাহলে জাতীয় সংসদে নারী আছে পুরুষ আছে আমরা কই?
আমাদের একজন দরকার, আমাদের দাবী দাওয়া এবং আমাদের নিয়ে কাজ করার জন্য। অন্যরা কিন্তু সেভাবে বোঝেনা। যার ব্যথা সেই বুঝে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকেই শিক্ষিত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এখন অনেক শিক্ষিত আছে। একজন চেয়ারম্যান হলেন বিপুল ভোটে, নির্বাচন করে। আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে অবশ্যই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারবো। সমাজে হিজড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে যে নেতিবাচক মনোভাব আছে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া হয় অবশ্যই আমরা কাজ করে প্রমাণ দেখাবো। সমাজের মূল ধারায় চলে আসবো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে আলাপের প্রসঙ্গে বলেন, স্যাররা আমাদের বলেছেন কী করা যায় আমরা দেখবো। এছাড়া দলগুলোর সঙ্গে এই ধরণের বৈঠক করতে বলেছেন। সংবিধান কী বলে এই রকম দিকগুলোই তারা দেখবেন।
পার্বতী আহমেদ বলেন, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সংশোধন নিয়েও কথা বলেছি। আমাদের অনেকেরই পুরুষ আইডি কার্ড আছে। এখন সেটা নিয়ে কোথাও গেলে সেটা একসেপ্ট করে না। কারণ আইডি কার্ড একরকম, আর তাদের দেখতে আরেক রকম। অনেক হ্যারেসমেন্টের শিকার হতে হয়। চাকরির ক্ষেত্রে নিতে চায় না। দেখতে এক রকম, আইডি কার্ড অন্য রকম। এতে অনেক বৈষ্যমের শিকার হয়েছি।
আমাদের সিভিল সার্জন অফিস, সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল, সেখানে আমাদের কাপড় খোলে দেখেছে। সেখানে আমাদের মানসিক, মান সম্মানে খুব আঘাত লেগেছে। এছাড়া সেখানে অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। এখন অভিভাবকরা তো আমাদের আরো ১০ -১৫ বছর আগেই ছেড়েই দিয়েছে। পরিবার তো আমাদের রাখে না। তো কিভাবে অভিভাবক আনবো? পাশপাশি আমাদের এফিডেফিট করতে হয় প্রথম শ্রেণীর হাকিম দিয়ে। তিনি আবার থানায় পাঠান। এজন্য অনেক হ্যারেজমেন্ট হতে হয়। স্যাররা বলেছেন তারা দেখবেন। দরকার হয় নতুন একটা পলিসি করে যাতে হ্যারেজমেন্ট না হয়।
স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সিইসি ডিসেম্বরের মধ্যে একটা তারিখ নির্ধারণ করে আমাদেরকে জানাবেন। এ সময় তার সঙ্গে সুস্থ জীবনের সাধারণ সম্পাদক ববি হিজড়া ও কমিউনিটি লিয়াজু অফিসার জোনাকী জোনাক উপস্থিত ছিলেন।
এমএমএল/এনএইচ