শিরোনাম
◈ তারুণ্যের শক্তি আমাদের জাতির চালিকাশক্তি : প্রধান উপদেষ্টা ◈ দেশে নিবন্ধিত কোচিং সেন্টার ৬,৫৮৭, অনিয়ন্ত্রিত আরো বহু; নীতিমালা শূন্যতায় বাড়ছে বাণিজ্যিকীকরণ ◈ অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনে দুই অভিনেত্রী গোয়েন্দা নজরে ◈ রাবি হল সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৯ প্রার্থী ◈ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যেভাবে ধরা পড়ল ৫০ প্রতারক! (ভিডিও) ◈ জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনে নাম‌ছে, কিন্তু কেন ◈ ভ্যালেন্সিয়ার জা‌লে বার্সেলোনার ৬ গোল ◈ পিআর আদায়ে আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোতে মতভেদ ◈ বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হচ্ছে ভারতীয় ২০০ কোচ ◈ ফরিদপুরে মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধের ঘটনায় ৯০ জনের নামে মামলা

প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

পিআর আদায়ে আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোতে মতভেদ

মহসিন কবির: সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ নানা দাবি নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। 

রোববার জুলাই সনদের কার্যকর বাস্তবায়ন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন ও নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ডসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। 

দাবি আদায়ে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায়, ১৯ সেপ্টেম্বর সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৬ সেপ্টেম্বর, দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।

অন্যদিকে আলোচনায় থাকা আট দলের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও গণ-অধিকার পরিষদের নেতারা যুগপৎ কর্মসূচির দেয়ার কথা স্বীকার করেননি। তাদের ভাষ্য, আলোচনা হতে পারে তবে তারা এই প্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্তে সম্মতি দেননি। যদিও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুই দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও এই আট দল বৈঠক করেছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. জুলাই সনদ অবিলম্বে বাস্তবায়ন, ২. আওয়ামী লীগের দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতের এ দেশীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, ৩. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন এবং ৪. নির্বাচনে সব দলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার (আগামীকাল) দুপুর ১২টায় পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচির বিষয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরবে ইসলামী আন্দোলন। অন্যান্য দলও তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে।

এই প্ল্যাটফর্মে এই আট দলের বাইরে আরও কোনো দল আসতে পারে কি না, জানতে চাইলে গাজী আতাউর বলেন- ফ্যাসিবাদবিরোধী যে কোনো শক্তি এখানে যুক্ত হতে পারে। এই প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে এক বাক্সনীতিতে যুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমাদের ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, পরে নির্বাচন। নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে আমরা যুগপৎ কর্মসূচিতে যাব। এদের মধ্য থেকে পরবর্তীতে একটা এলায়েন্সও হতে পারে।

জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি- এই আটটি দল যুগপৎ কর্মসূচিতে যাচ্ছে, এমন খবর গতকাল শনিবার দিনভর চাউর হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের বিপরীতে আরেক যুগপৎ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নেওয়ার আগেই যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা দলগুলোর মধ্যে থেকে কয়েকটি দলের নেতারা বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব এক বার্তায় জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনও কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। চার দাবিতে আট দলের যুগপৎ কর্মসূচির যে খবর, তা মিস লিডিং বলে জানান তারা। তাদের ভাষ্য, এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি, সে বিষয়ে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয় এনসিপির কোনো অবস্থান নেই। বরং এনসিপি শুধুমাত্র উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এ ছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সঙ্গে এনসিপির সমর্থন থাকবে।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে অনেকে আলোচনা করে থাকতে পারেন। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান গণমাধ্যমকে জানান, তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে আছেন কিন্তু বর্তমান ‘নতুন’ যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে তারা একমত নন।

গতকাল আলোচনা ছিল জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি মিলে যুগপৎ চার দফা কর্মসূচিতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এর বলয় আরও বাড়ানো হবে। এসব দাবির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে না যেতে চাওয়া দলগুলোও একমত। তারা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে একমত। এর বাইরে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের বিষয়েও অনেকের মত রয়েছে।

এ বিষয়ে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের জানান, এসব আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। দাবিগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নতা আছে।

সূত্রগুলো বলছে, আট দলের মধ্যে টানা দুই দিন বৈঠক হলেও কোন কোন দাবি নিয়ে কর্মসূচিতে যাবেন- সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। একেক দল একেক ধরনের দাবি নিয়ে আসছে। তবে আলোচনার মধ্য দিয়ে শিগগিরই সমাধানে পৌঁছবেন বলে জানান খেলাফত মজলিসের একজন নেতা। তিনি বলেন, সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ; দুই কক্ষেই পিআর চায় কেউ কেউ। তবে কোনো দল শুধু উচ্চকক্ষে পিআর চায়। এ কারণে আট দল যার যার মতো করে উপস্থাপন করবে।

জানা গেছে, এই কর্মসূচির সঙ্গে এসসিপির একটি অংশের যুক্ত হওয়ার আগ্রহ থাকলেও বড় অংশ বিএনপির সঙ্গে থাকার পক্ষে। একই অবস্থান গণঅধিকার পরিষদেরও। তাদের একটি অংশ জামায়াতের সাথে এবং আরেক অংশ বিএনপির সাথে থাকতে চায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা বলেন, ইসলামী দলগুলোর অধিকাংশই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার। ঐক্যমতের ভিত্তিতে জাতীয় প্রতিশ্রুতি স্বাক্ষরিত হবে। তবে সংবিধান বহির্ভূত বিশেষ কোনো অর্ডারে সংবিধান সংশোধনের কথা অনেকে বলছেন, কিন্তু এভাবে করার এখতিয়ার কারও নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়