শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চলতি ব্যাচের সনদ অনিশ্চয়তায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা

রাজধানীর সাত কলেজের চলতি সেশনে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাদেশ জারি করে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং এসব দফতরগুলোর জনবল নিয়োগ দিলে ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। অন্যথায় এই ব্যাচগুলো চলমান কাঠামো অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, চলমান ব্যাচগুলোকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যেই থাকবে। তবে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিলে চলতি সেশনে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।

কেন বিদ্যমান কাঠামোতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সে রয়েছেন কিংবা ২০২০-২০২১ ব্যাচে রয়েছেন সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে। এ বছর অধ্যাদেশ জারি করে ভিসি দেওয়া গেল। এ বছর যারা চতুর্থ বর্ষে রয়েছেন তাদের এ বছরই কোর্স শেষ হয়ে যাবে। তাহলে যদি সনদ অথরিটি তৈরি করা না যায়, তাহলে তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকছেন। তখন তাদের সনদ দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারা বিদ্যমান কাঠামোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি রয়েছেন। তবে প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত কোনও সমস্যা হবে না।’

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক ও ভৌত কাঠামো, শিক্ষাদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে খসড়া প্রকাশ করে। খসড়াটির মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির খসড়া আইন অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা চলমান ব্যাচগুলোকে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) যান শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে বলা হয়, আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে মতামত ই-মেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।

খসড়াটি প্রকাশের পর আজ বৃহস্পতিবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউজিসিতে গিয়ে চলমান ব্যাচগুলোকে (অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্স) বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির রূপরেখায় কেবল নতুন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া চলমান ব্যাচগুলোর প্রতি কোনও দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। এতে করে এসব শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হবেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষসহ বর্তমানে অধ্যয়নরত সকল শিক্ষার্থীকে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আওতায় আনতে হবে। সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আওতায় না আনলে তারা সমান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। তাই অধ্যাদেশ জারির আগেই চলমান শিক্ষার্থীদের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি তাদের ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা হয়, তবে বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যাবেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গত মঙ্গলবার এবং বুধবার ঢাকা কলেজ এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সরকারি সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীদের উচ্চশিক্ষার পথ সংকোচন করা হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিও বন্ধ করার পায়তারা চলছে। এটা কখনওই মেনে নেওয়া হবে না। গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগে রাষ্ট্র থেকে কোথাও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে উচ্চমাধ্যমিকের অবস্থান

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির খসড়ায় প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজগুলোর বিরাজমান পরিচয়, বৈশিষ্ট্য, অবকাঠামো ও অন্যান্য বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কলেজের ভৌত অবকাঠামোর যৌথ ব্যবহার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেবা কর্মীর যৌথ ব্যবহার এবং পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা সংক্রান্ত ব্যয়সহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে যৌথ ব্যবহার ও অংশীদারিত্ব নির্ধারিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন এই চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজের ভর্তিতে বিশেষ সুযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন জানায়, সাত কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিতে বিশেষ সুযোগ পাবেন। কারণ সাত কলেজেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়টির।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেহেতু সাত কলেজ ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চলবে সেহেতু তারা তো বিশেষ সুবিধা পাবে। তবে তা নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে শর্ত নির্ধারণ করে বিশেষ সুবিধা দেওয়া ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

ঢাকার সরকারি সাত কলেজ এক সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। এ কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে এর আগেও কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর নানা সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত আন্দোলন চলতে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যসহ নানা অভিযোগ পরীক্ষা নিয়ে নানা অনিয়ম দেখা দেয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালাতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি থেকে বাদ দেয়। এরপর নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়