অর্ধযুগের বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে। নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো আলাদা প্যানেল দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে স্বতন্ত্র প্যানেল নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সদস্যসচিব উমামা ফাতেমা।
তবে গুঞ্জন উঠেছে ছাত্রদলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন উমামা ফাতেমা। বিষয়টি নিয়ে অনলাইনের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন এই নেত্রী।
এখন পর্যন্ত কোন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে উমামা বলেন, 'যেহেতু আমি নিজেই ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম এবং ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে ওয়াকিবহাল, তাই সবার সঙ্গেই আমার একটা সম্পর্ক, উঠাবসা কথাবার্তা হয়। সবার সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে, কিন্তু ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলাদা করে বসা হয়নি।'
তবে বিষয়টি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। চ্যানেল 24 অনলাইনকে তিনি বলেন, রোববার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত ছাত্র সমাবেশ নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম, সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনাও হয়নি জানিয়ে শিপন বলেন, আমাদের কিছু বক্তব্য আছে, এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাদের জানাবো।
'একটি একাডেমিক সাউন্ড ও রাজনৈতিক সচেতন' ক্যাম্পাস গড়ে তোলা নিজ প্যানেলের উদ্দেশ্য জানিয়ে উমামা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ফরম ছেড়েছি, যেসব শিক্ষার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা কিংবা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চান কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত নেই বা দলীয় ব্যানারে যেতে চাচ্ছেন না, তাদেরকে আমাদের প্যানেলের অংশ নেয়ার জন্য ফরমটি পূরণ করতে বলেছি।'
‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক ক্যাম্পাসে পরিণত করতে চাই, ঢাবির রাজনৈতিক পরিচয় মুছে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা রাজনৈতিক সচেতন কিন্তু একাডেমিকালি সাউন্ডে রূপান্তরিত করতে চাই’, বলেন উমামা।
উমামা বলেন, যদি হলগুলো দখলমুক্ত রাখতে পারি এবং একাডেমিক পরিবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারি তাহলে সংস্কার সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যা প্রশাসনের রাজনীতি মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা চ্যালেঞ্জে মুখে পড়েন না, কারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা নেই। এসব কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোপুরি একাডেমিক পরিবেশটা স্থবিরতার মধ্যে চলে এসেছে। গুরুত্বের দিক থেকে এখানে শিক্ষাকে দ্বিতীয় অবস্থানে নিয়ে রাজনীতি প্রথম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কালচারটা পরিবর্তন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের ভিশন থাকবে, ক্যাম্পাসে নতুন ধারা জনপ্রিয় করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখবে উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উমামা অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের একটি বড় দাবি ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সুরাহা এবং ক্যাম্পাসকে একটি একাডেমিক ক্যম্পাসে রূপান্তরিত করা। কিন্তু আমরা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'টক্সিস' রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
তবে ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত পরিচিত কোন মুখের নাম বলতে পারেননি উমামা। তিনি বলেছেন, 'আমরা কথা বলছি, চেষ্টা করছি। অনলাইনে ওপেন ফরম দিয়েছি, সেখান অনেক ভালো ভালো শিক্ষার্থী সাড়া দিয়েছেন।' উৎস: চ্যানেল 24