শিরোনাম
◈ জামায়াত আমির গোপনে দোহা যাননি, বিবৃতি দলের ◈ অপসারিত বি‌সি‌বি সভাপ‌তি ফারু‌কের চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট ◈ গাজীপুরে 'রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস' থেকে সেনা সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার ◈ গাজীপুরের এক সময়কার প্রবাহমান 'চিংড়ি খাল' এখন শুধুই স্মৃতির প্রতীক ◈ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং ◈ গাজীপুরে কারখানার পানি পানে অসুস্থ শতাধিক শ্রমিক ◈ নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে সরকার ও বিএনপির দূরত্ব কী তিক্ততার দিকে যাচ্ছে ◈ ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধিতে রড থেকে প্লাস্টিক দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের ◈ মে মাসে এলো রেকর্ড ৩৬ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স ◈ নগদের নিয়োগে অনিয়মের ‘সত্যতা মিলেছে’, স্ত্রীসহ আতিক মোর্শেদকে দুদকে তলব (ভিডিও)

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০২৫, ০৩:১৯ দুপুর
আপডেট : ০১ জুন, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতায় স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা, উদ্বেগে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পরিবার

যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর মিরাজুল ইসলাম রোমিও। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করা রোমিও চাকরির পাশাপাশি বিমানে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ স্বপ্নটা থমকে যাওয়ার উপক্রম। একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন অফার লেটারও। তিনি বলেন, অনেক স্বপ্ন আমার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার। প্রায় দুই বছরে একাধিক ব্যর্থ চেষ্টার পর পেয়েছি অফার লেটার। কিন্তু হঠাৎ করেই ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার বন্ধ করে দেয়া হলো। দুই বছরের প্রচেষ্টাটা ব্যর্থ হওয়ার পথে। পরবর্তী সেশনের জন্য আবেদনের সময় চলছে। কিন্তু ভিসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। সূত্র: মানবজমিন

একই কথা বলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করা আরেক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্র। আমি অন্য কোনো দেশে আবেদনই করি নাই। অন্যরা অনার্সের পর সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি শুধু যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্যই পড়ে আছি। এক বছর আগেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু স্কলারশিপ না পাওয়ায় যাই নাই। এখন তো মনে হচ্ছে আমার দুয়ারটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরাও আছেন ভয়ে। মিশিগানে অবস্থান করা ঢাকা কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি একটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানেই অধ্যয়নরত। যদিও র‌্যাঙ্কিং নিচের দিকে কিন্তু স্বীকৃত। পাশাপাশি আমি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাজ করি। সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ শুনি আমার ভিসা বাতিল হয়েছে। এখন আতঙ্কের মধ্যে আছি। 

তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ কিছু অবৈধভাবে শিক্ষার্থী এসেছেন এটা সত্য। কিন্তু আমরা অধিকাংশই বৈধ। আমরা ডিপোর্টের ঝুঁকিতে আছি। তিনি সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক পর্যায়ে সরকারকে আলোচনা চালানোর অনুরোধ জানান।

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে ইচ্ছুক বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনায় মার্কিন দূতাবাসগুলো শিক্ষার্থী ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ভিসা সাক্ষাৎকার সাময়িকভাবে বন্ধ  রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তিপ্রত্যাশী হাজারো শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছেন।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সামাজিকমাধ্যমে যাচাই এখন বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। আবেদনকারীদের ইনস্টাগ্রাম, এক্স, টিকটকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোস্টে, মন্তব্য এবং শেয়ার বিশ্লেষণ করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে যারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল, তারাও ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষার্থী বৈধতা বাতিলের পদক্ষেপে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের (সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়) গ্রেপ্তার, আটক বা দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না।

গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ থেকে শুরু করে নানা কারণেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানায়, চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টম্‌স এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিদেশি শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছিল। এতে বলা হয়, অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই প্রোগ্রামে তাদের বৈধতা বাতিল হতে পারে।

গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করে। এর ৫০ শতাংশই ভারতীয়। এছাড়াও চীনের শিক্ষার্থী রয়েছে ১৪ শতাংশ। ‘দ্য ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ-২০২৪’-এর তথ্যানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছিল। গত এক দশকে বৃদ্ধি প্রায় ২৫০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কড়াকড়ির কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ভিসা প্রসেসিং সেন্টারগুলোও। একটি ভিসা প্রসেসিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োরিটি লিস্টে রাখেন। একজন শিক্ষার্থী যাওয়ার আগে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন। আমরা তার প্রসেসিং করে থাকি। এটা আমাদের আয়ের বড় একটা উৎস। এখন এই আবেদনগুলো কমে যাবে। 

এ বিষয়ে  ব্র্যাক’র সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফরম) শরিফুল হাসান  বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে সবথেকে বেশি ছেলে-মেয়ে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতি বছর শিক্ষার্থী-গবেষকসহ প্রায় ২৪ হাজার যাচ্ছেন। তারা যদি এখন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তাহলে উচ্চশিক্ষার মান আরও নেমে যাবে। আমি আশা করি এগুলো যুক্তরাষ্ট্র পুনর্বিবেচনা করবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বা আমাদের সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবে আশা করি। এই নিষেধাজ্ঞা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়