শিরোনাম
◈ পানি নিয়ে পাকিস্তানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ এবার শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় অবরোধ করলো ছাত্রদল, তীব্র যানজট ◈ উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করলেন রিজভী (ভিডিও) ◈ ‘রায়ের পরও ইশরাককে শপথ না পড়ালে আদালত অবমাননা হবে’ ◈ আদর্শগত বিভাজনে বিভক্ত এনসিপি, কমছে জনসমর্থন! ◈ ডিজিএফআই'র সাবেক মহাপরিচালকের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ◈ আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা ও নিবন্ধন বাতিল ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ◈ লঘুচাপের আভাস সাগরে, রূপ নিতে ঘূর্ণিঝড়ে ◈ পুশ ইন প্রসঙ্গে দিল্লিকে চারবার চিঠি, শেষ চিঠিতে যা বলেছে ভারত ◈ উচ্চ আাদালতের রায়ে জনগনের বিজয় হয়েছে, জনগনের স্বস্তির জন্য তারা রাস্তা থেকে সরে যাবেন : মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২২ মে, ২০২৫, ১০:০১ দুপুর
আপডেট : ২২ মে, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘নাম লেখালেই নম্বর’ যুগ শেষ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকোর্সে নম্বর পেতে বাধ্যতামূলক ৬০% উপস্থিতি

ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারা দেশের কলেজগুলোতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য ইনকোর্স পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার সহজ দিন শেষ হচ্ছে। এবার থেকে ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর পেতে হলে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে। আর কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। ‘নাম লেখালেই নম্বর’ যুগের অবসান ঘটিয়ে ইনকোর্স মূল্যায়নে কঠোরতা আনছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতেই নতুন নীতিমালা আনা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিমের সই করা এক অফিস আদেশে জানানো হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটসমূহে ইনকোর্স পরীক্ষা গ্রহণ ও ক্লাসে উপস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নতুন সংযুক্ত নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে। এই নির্দেশনা ২০২৩ সালের মাস্টার্স ও প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স এবং ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ ও ডিগ্রি পাস কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ইনকোর্স নম্বর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রদান করতে হবে। যেমন- চার ক্রেডিটের তত্ত্বীয় কোর্সে সর্বোচ্চ ৫ নম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বা তার বেশি উপস্থিতি থাকলে মিলবে পূর্ণ ৫ নম্বর, ৭০-৮০ শতাংশের মধ্যে উপস্থিতি থাকলে মিলবে ৪ নম্বর আর ৬০-৭০ শতাংশের মধ্যে থাকলে মিলবে ৩ নম্বর। আর ৩ ও ২ ক্রেডিটের কোর্সের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অনুপাতে নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী ৬০ শতাংশের কম ক্লাসে উপস্থিত থাকলে তাকে পরীক্ষার অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

ইনকোর্স পরীক্ষা নিতে হবে দুইবার, নম্বর এন্ট্রি হবে অনলাইনে

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের মাধ্যমে ইনকোর্স পরীক্ষা নিতে হবে মোট দুইবার। উভয় পরীক্ষার গড় নম্বর হিসাব করে সর্বোচ্চ নম্বরের ১৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যায়ন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ ক্রেডিট কোর্সে সর্বোচ্চ ইনকোর্স নম্বর ধরা হয়েছে ১৫, যার পাস নম্বর ৬।

আবার এই নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এন্ট্রি করতে হবে। পাশাপাশি, মূল্যায়িত উত্তরপত্র এবং হাজিরা শিট সিলগালা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মনিটরিং সেলে পাঠাতে হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের জন্য ভিন্ন নিয়ম

প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও ইনকোর্স মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে তাদের জন্য সর্বোচ্চ নম্বর কিছুটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৪ ক্রেডিট কোর্সের ক্ষেত্রে ২০ নম্বর, ৩ ক্রেডিটে ১৫ এবং ২ ক্রেডিটে ১০ নম্বর। তেমনি, পাস নম্বরও ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৮, ৬ ও ৪ নম্বর।

এ ছাড়া, ইনকোর্স নম্বরের ভিত্তিতে মূল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত অনুপাতের উপস্থিতি ও পরীক্ষার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ফলে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও শিক্ষার গুণগত মানে ছাপ ফেলবে এ নীতিমালা।

‘নাম লেখালেই নম্বর’ সংস্কৃতির অবসান

নতুন নির্দেশনার ফলে আর কোনো শিক্ষক ইচ্ছেমতো ইনকোর্স নম্বর দিতে পারবেন না। অভিযোগ রয়েছে, আগে ক্লাসে না এসেও শিক্ষার্থীরা ভালো নম্বর পেত ইনকোর্সে। এই অনিয়ম ঠেকাতেই বিশ্ববিদ্যালয় এবার কড়া অবস্থান নিয়েছে। উপস্থিতির ভিত্তিতে নম্বর নির্ধারণ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরীক্ষা ও নম্বর এন্ট্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া, ইনকোর্স পরীক্ষার যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে। ইনকোর্স পরীক্ষার প্রকৃত অবস্থা জানতে, হাজিরা শিট, পরীক্ষার উত্তরপত্র এবং নম্বরপত্র যাচাই করে হার্ডকপি সিলগালা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর মূল ক্যাম্পাসে মনিটরিং সেলে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্দেশনা আগামী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা-২০২৪, ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা-২০২৪, মাস্টার্স শেষ বর্ষ পরীক্ষা-২০২৩ এবং প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স পরীক্ষা-২০২৩ থেকে কার্যকর হবে।

বাড়বে স্বচ্ছতা, নিশ্চিত হবে শিক্ষার মান

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন নীতিমালা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একদিকে নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাডেমিক শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা যেমন বাড়বে, তেমনি শিক্ষকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম বলেন, এই উদ্যোগ শিক্ষার মানোন্নয়ন, পরীক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ। যদিও এর বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়ই পাবে বলে মনে করছি।

নিয়মের কড়াকড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক; নতুন নিয়মে সন্তুষ্ট অধ্যক্ষরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে ইনকোর্স পরীক্ষায় নতুন মূল্যায়ন নীতিমালাকে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন দেশের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা। তারা বলছেন, এই নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে উৎসাহিত হবে, যার মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ উন্নত হবে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যকার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নির্দেশনাটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থেকেও ইনকোর্সে ভালো নম্বর পেয়ে যাচ্ছে, যা শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাসে না আসলে কেবল ইনকোর্স নম্বরই নয়, মূল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগও থাকবে না— এটা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক চাপ তৈরি করবে। এতে করে তারা ক্লাসে উপস্থিত থাকতে উৎসাহী হবে এবং নিয়মিত পাঠদানের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। 

অধ্যাপক বিমল আরও বলেন, নতুন নির্দেশনার ফলে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ আরও সুশৃঙ্খল ও ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে শিক্ষকদেরও ইনকোর্স মূল্যায়নে আরও যত্নবান হতে হবে, যা সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বরিশালের সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন এই নীতিমালা শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে দেবে। ইনকোর্স নম্বর বরাদ্দের ক্ষেত্রে এতদিন যেসব অনিয়ম ছিল, সেগুলোর অবসান ঘটিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার সময় পড়াশোনায় মনোযোগী হবে না, বরং সারা বছরই অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবে। এতে করে তাদের শেখার মান উন্নত হবে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। একইভাবে শিক্ষকরা আরও দায়িত্বশীল হয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মূল্যায়নে অংশ নেবেন। আমি বিশ্বাস করি, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে শিক্ষার মানে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে পক্ষপাতিত্ব কিংবা অনিয়মের সুযোগ থাকবে না উল্লেখ করে গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়েছিলাম ইনকোর্স নম্বর প্রদানে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো থাকুক, যেখানে উপস্থিতি, মূল্যায়ন এবং স্বচ্ছতা— সবকিছুর নিশ্চয়তা থাকবে। অবশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেদিকেই এগিয়েছে। এই নির্দেশনায় শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে ক্লাসে আসবে, যা একাডেমিক পরিবেশকে গতিশীল করবে।

এই অধ্যক্ষ আরও বলেন, নতুন নীতিমালায় ইনকোর্স নম্বর অনলাইনে এন্ট্রি করা, হাজিরা শিট ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মনিটরিং সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা নিঃসন্দেহে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। এতে করে কোনো রকম অনিয়ম বা পক্ষপাতের সুযোগ থাকবে না।

এ পদক্ষেপকে শিক্ষার মানোন্নয়ন, শৃঙ্খলা এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার এক বাস্তবমুখী উদ্যোগ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়