মিনহাজুল আবেদীন: [২] চালের দাম নিয়ে অস্বস্তি না কাটতেই ভাবনা বাড়াচ্ছে গম। বিশ্বের গম রপ্তানিকারক অন্যতম দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। বর্তমানে যুদ্ধলিপ্ত দুই দেশ থেকে রপ্তানি বন্ধ থাকার প্রভাব টের পাচ্ছে বাংলাদেশও। ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়ছে বাড়তি চাপ। জাগোনিউজ ২৪
[৩] ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ভারতের ঘোষণার পরপরই দাম বেড়েছে প্রতি মণে একশ টাকারও বেশি। যার প্রভাবে দাম বেড়েছে আটা, ময়দা, পাউরুটিসহ এজাতীয় খাদ্যপণ্যের।
[৪] খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারত গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর দেশের বড় গম আমদানিকারক ও সরবরাহকারী শিল্প গ্রুপ আগে বিক্রিত ডিও’র (ডেলিভারি অর্ডার) গম সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ভোজ্যতেলের পর গমের দাম বাড়ায় প্রক্রিয়াজাত খাবার শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।
[৫] ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শুক্রবার জানায়, নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা গম রপ্তানিতে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয় এ নিষেধাজ্ঞা। তবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেসব রপ্তানি চালানের ঋণপত্র (এলসি) বিজ্ঞপ্তির আগেই ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো যেতে পারবে।
[৬] খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম সাড়ে ১০ মাসে (১ জুলাই ১৫ মে পর্যন্ত) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মোট ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৯০ মেট্রিন টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টন চাল এবং ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন গম। একই সময়ে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৭০ মেট্রিক টন। এতে চাল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪০ মেট্রিক টন এবং গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন। গত ২০ মার্চের পর থেকে সরকারিভাবে কোনো গম আমদানি হয়নি। সবমিলিয়ে ১৫ মে পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে খাদ্য মজুত রয়েছে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৯০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন এবং গম মজুত রয়েছে মাত্র ১ লাখ ১২ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন। ঢাকা পোস্ট
[৭] গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২১ সালের ১৫ মে) সরকারিভাবে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল বর্তমানের প্রায় অর্ধেক। কিন্তু তাতেও গমের মজুত ছিল বর্তমানের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। ওই সময় খাদ্য মজুত ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। এতে গমের মজুত ছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন এবং চালের মজুত ছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন।
[৮] জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত সাড়ে ১০ মাসে খাদ্য অধিদপ্তর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৩২ টন গম আমদানি করেছে। একই সময়ে বেসরকারি আমদানিকারকরা ১৩ লাখ ৭২ হাজার ২৬৮ টন গম খালাস নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে গত ১ এপ্রিল থেকে সবশেষ দেড় মাসে সরকারি পর্যায়ে কোনো গম না এলেও বেসরকারি আমদানিকারকরা ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৯ টন শুল্কায়ন করেছে। গত দেড় মাসে বেসরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান এসব গম আমদানি করেছে বলে চট্টগ্রাম কাস্টম সূত্রে জানা যায়।
[৯] এর মধ্যে আজমেরি ফ্লাওয়ার অ্যান্ড অয়েল মিল ৬ হাজার ৬০০ টন, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৭৫ হাজার ৬২৯ টন, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিল ৭৩ হাজার ৪৫০ টন এবং রুবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ৩৩ হাজার টন গম বন্দর থেকে খালাস নিয়েছে। তাছাড়া গত ৯ মে ভারত থেকে ৩২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে এমভি সামার স্কাই এবং কানাডা থেকে ৫৯ হাজার ৮০০ টন গম নিয়ে এমভি প্রোপেল গ্রেস চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এ দুই জাহাজ গম রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ আমদানি করেছে।
[১০] খাতুনগঞ্জের গম ব্রোকার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স আল মাওয়া করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ঈদের আগের দিনও ভারতীয় গম ১ হাজার ৩৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রোববার (১৫ মে) একই গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৬০ টাকায়। কানাডার গমের ডিও বিক্রি হয়েছে ২হাজার ৮০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়।
[১১] বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. শোয়াইব হাসান বলেন, গমের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে ময়দার দাম। রোববার মিলগেটে যে ময়দা ৪৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সোমবার কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫১ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ভোজ্যতেলের পর এখন গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় অ্যাগ্রো প্রসেস শিল্প মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে।
[১২] চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমদানি করেই বাংলাদেশে গমের চাহিদা মেটানো হয়। এখন ভারতও গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় খাতুনগঞ্জে গমের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :